সিন্ধু-সভ্যতার কাছে নত
‘অল ইংল্যান্ড’ জয়ীও
ম্যাচ শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন, “এর আগে আমি ওর কাছে হেরেছি। এই ম্যাচটা জিতে আমি শুধু দলকেই এগিয়ে দিতে চাই না, বদলাটাও নিয়ে ফেলতে চাই।”
তিনি ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের নতুন রূপকথা, পি ভি সিন্ধু। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এ বছর নিয়ে তিন বার অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী ডেনমার্কের টাইন বাউন।
বদলাটা নিতে সিন্ধুর লাগল ৪৭ মিনিট। জিতলেন ২১-১২, ১৯-২১, ১১-৮। ম্যাচ শেষে দু’হাত উপরে ছুড়ে দেওয়া অষ্টাদশীর ছবি দেখতে দেখতে একটা জিনিস কিন্তু পরিষ্কার হয়ে গেল ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে সিন্ধু-যুগ শুরু হয়ে গিয়েছে।
৩৪ বছরের প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়াইয়ে সিন্ধুর বড় প্লাস পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াল তাঁর ফিটনেস। প্রথম গেমটা জেতার পর দ্বিতীয় গেমে সিন্ধু অবশ্য হার মানেন বাউনের অভিজ্ঞতা আর স্ট্র‌্যাটেজির কাছে। কয়েকটা আনফোর্সড এরর-ও করেন। কিন্তু তৃতীয় গেমে সিন্ধুর গতি এবং নেট প্লে-র কাছে দাঁড়াতেই পারেননি বাউন। তিনটে ম্যাচ পয়েন্ট পেয়েছিলেন সদ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জজয়ী সিন্ধু। একটা বাঁচান বাউন। কিন্তু ম্যাচটা বাঁচাতে পারেননি। বাঁচানোর প্রশ্নও ছিল না।
এ বছর অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর কোর্ট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বাউন। ফিরে আসেন আইবিএল খেলতে। সাইনা নেহওয়ালের হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে গত টাইয়ে বাউনকে বিশ্রাম দিয়েছিল মুম্বই। তার খেসারত দিয়ে ম্যাচটাও হারতে হয়েছিল। তাই এ বার আওয়াধি ওয়ারিয়র্সের সিন্ধুকে আটকানোর জন্য তিন বারের অল ইংল্যান্ড জয়ীকে কোর্টে নামানো ছাড়া উপায় ছিল না সুনীল গাওস্করের টিমের। ঘটনাচক্রে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে বাউনের চেয়ে এক ধাপ ওপরে সিন্ধু। তিনি ১০। বাউন ১১।
ব্যাডমিন্টন জীবনের সায়াহ্নে চলে যাওয়া মহাতারকা বনাম উদীয়মান এক প্রতিভা। এমন লড়াইয়ে কোথায় জিতে গেলেন সিন্ধু? চুম্বকে ম্যাচটা তুলে ধরলে তিনটে বিষয় মাথায় আসতে বাধ্য। এক, বেঙ্গালুরুর আবহাওয়া। দুই, ফিটনেস। তিন, সিন্ধুর জাজমেন্ট।
বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এ দিন এয়ারকন্ডিশনিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না। বেঙ্গালুরুর গরম দারুণ কিছু না হলেও আর্দ্রতা ছিল মারাত্মক। ফলে সমস্যায় পড়েন দু’জনেই। কিন্তু বেশি বয়সের বাউনকেই ভুগতে হল বেশি। এবং এ ক্ষেত্রে সিন্ধুকে তাঁর ফিটনেসই উতরে দিল।
প্রথম গেম হারার পর পরিস্থিতি দেখে দ্বিতীয় গেমে স্ট্র‌্যাটেজি বদলে ফেলেন বাউন। নিজে কোর্টে বেশি মুভ না করে চেষ্টা চালিয়ে যান সিন্ধুকে দৌড় করানোর। এবং এই স্ট্র‌্যাটেজিই তাঁকে দ্বিতীয় গেমটা জিতিয়ে দেয়। খেলার শেষে সিন্ধু বলছিলেন, “দ্বিতীয় গেমে ১৭-১৪ পয়েন্ট থেকেই প্রচণ্ড অস্বস্তি বোধ করছিলাম। শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর দর্শকদের সমর্থন আমার কাছে টনিকের কাজ করল। ধন্যবাদ বেঙ্গালুরু।” এ দিন সিন্ধু বনাম বাউন লড়াই দেখতে চার হাজার সিটের স্টেডিয়ামের একটা আসনও ফাঁকা ছিল না।
শেষ গেম এগারো পয়েন্টের হওয়ায় দু’জনকেই আক্রমণাত্মক ব্যাডমিন্টন খেলতে হয়েছিল। এবং এখানেই নেট প্লে থেকে শুরু করে চাবুক স্ম্যাশে বাউনকে পিছনে ফেলে দেন সিন্ধু। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকটা অসাধারণ লাইন জাজমেন্টও পয়েন্ট এনে দেয় তাঁকে।
ম্যাচের শুরুতে যা বলেছিলেন, ম্যাচের পরেও প্রায় একই কথা শোনা গেল সিন্ধুর মুখে, “আমি ওর বিরুদ্ধে তিন-চারটে ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু কখনও জিততে পারিনি। এই প্রথম ওর বিরুদ্ধে জিতলাম। তাই এই জয়ের স্বাদটাই আলাদা।”
ভারতীয় ব্যাডমিন্টনপ্রেমীদের কাছেও নিশ্চয়ই শনিবাসরীয় এই ম্যাচের স্বাদ অন্য রকম হয়েই থাকল।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.