|
|
|
|
ঝাড়খণ্ড |
মহিলা পুলিশই এ বার ধর্ষণের শিকার, আটক ৫ |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
ঝাড়খণ্ডে গণধর্ষণের শিকার এবার পুলিশ নিজেই।
ভোর রাতে পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা রাস্তা দিয়ে ডাকাতদের হাতে নিহত নিজের বোন-ভগ্নীপতির মৃতদেহ নিয়ে রাঁচি থেকে গঢ়বায় নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন লাতেহার পুলিশ লাইনের এক মহিলা জওয়ান।
মাঝ রাস্তায় শববাহী গাড়ি-সহ অন্যান্য গাড়িগুলি দাঁড় করিয়ে শবযাত্রীদের সর্বস্ব লুঠ করে এক
দল দুষ্কৃতী। এরপর ওই মহিলা জওয়ানকে ধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে কার্যত পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতেই ধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় স্তম্ভিত ঝাড়খণ্ডের
পুলিশ কর্তারা।
অস্বস্তিও রয়েছে পুরো মাত্রায়। প্রশ্ন উঠেছে, এক মহিলা পুলিশকর্মীর উপরেই যদি এমন হামলা হয় তবে সাধারণ মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায়?
বিতর্ক এড়িয়ে গিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমার। তিনি বলেন, “এখন তদন্ত চলছে। এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে দোষীরা খুব বেশি দিন বাইরে থাকবে না।”
বুধবার রাত দুটো নাগাদ ঘটনাটি ঘটে জগলদাগাতে। গত ২০ অগস্ট রাঁচির আরগোড়ায় ডাকাতরা চড়াও হয় ওই মহিলার বোনের বাড়িতে। ডাকাতদের গুলিতে নিহত হন তাঁর বোন এবং ভগ্নীপতি। ময়নাতদন্তের পর ২১ তারিখ রাতে তাঁদের মৃতদেহ নিয়ে ওই মহিলা জওয়ান ও তাঁর আত্মীয়রা রাঁচি থেকে গঢ়বা জেলার মান্ডরিয়ায়, নিজেদের গ্রামে ফিরছিলেন। গ্রামে ফিরে বোন-ভগ্নীপতির সৎকার করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য।
পুলিশ জানায়, লাতেহার আর গঢ়বার মাঝে জগলদাগায়, ৭৫ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা শবযাত্রীদের গাড়িগুলি ঘিরে ফেলে। গাড়ির চালকদের ভয় দেখিয়ে গাড়ির হেডলাইট বন্ধ করে দেয় তারা। লুঠ করা হয় শবযাত্রীদের টাকা-পয়সা, মোবাইল ইত্যাদি। এরপরই দুষ্কৃতীরা জোর করে ওই মহিলা জওয়ানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে। গাড়ি গুলির আড়ালে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা।
ওই মহিলার স্বামীও পুলিশের জওয়ান ছিলেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পলামুর সাংসদ তথা রাজ্যের প্রথম স্পিকার ইন্দর সিংহ নামধারীর কনভয়ে হামলা চালায় মাওবাদীরা। লাতেহার জেলার গারু ব্লকের ওই ঘটনায় নামধারী বেঁচে গেলেও তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঁচ পুলিশ কর্মীর মৃত্যু হয়। ধর্ষিতা মহিলা জওয়ানের স্বামীও ওই ঘটনায় মারা যান।
স্বামীর মৃত্যুর পর মহিলা পুলিশে চাকরি পান। তিনি লাতেহার জেলা পুলিশেই কর্মরত। দুই মেয়ের মা তিনি। লাতেহারের জেলা পুলিশ সুপার মাইকেল এস রাজ জানান, মহিলা শুক্রবার লাতেহার থানায় এফআইআর দায়ের করেন। তারপরেই পুলিশ সন্দেহজনক পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
ইতিমধ্যেই দুষ্কৃতীদের খোঁজে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে। ডিএসপি অলোক কুমারের নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দলও গঠন করা হয়েছে।
জুলাই মাসেই পাকুড়ে মহিলাদের হস্টেল থেকে চার তরুণীকে বের করে নিয়ে গিয়ে তাদের ধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। এ ছাড়াও হাল আমলে মহিলাদের উপর হামলার আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে ঝাড়খণ্ডে। কিন্তু বুধবার পুলিশের মহিলা জওয়ানকে ধর্ষণের ঘটনাটি যেন সব কিছুকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। |
|
|
|
|
|