উত্তরপ্রদেশের হাতরাস থেকে মা ও ভাইবোনেদের সঙ্গে কলকাতায় এসেছিল ন’বছরের মেয়েটি। কাল, সোমবার তার মাসতুতো দাদার বিয়ে। বিটি রোডের কাছে গোপাল মুখার্জি রোডের লিচুবাগান বস্তিতে মাসির বাড়িতে উঠেছিল তারা। কিন্তু শনিবার দুপুরে পরিচিত এক জনের সঙ্গে দোকান থেকে ফেরার পথেই ঘটল দুর্ঘটনা। রাস্তা পেরোনোর সময়ে লরির চাকা পিষে দিল মেয়েটিকে।
ঘটনাটি ঘটেছে দুপুর পৌনে একটা নাগাদ, বি টি রোডের পাইকপাড়া মোড়ে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম কাফিয়া খাতুন (৯)। এ দিন দুপুরে পরিচিত এক জনের সঙ্গে দোকানে গিয়েছিল সে। রাস্তা পেরিয়ে ফেরার সময়ে একটি
|
কাফিয়া খাতুন |
লরি ধাক্কা মারে তাকে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজা মণীন্দ্র রোডের দিক থেকে আসা বি টি রোডমুখী লরিটি কাফিয়ার গায়ে উঠে পড়ছে দেখে চিত্কার করে ছুটে গিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাতে গতি বাড়িয়ে লরি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মেয়েটিকে পিষে দেন চালক। লরির পিছনের চাকায় চাপা পড়ে যায় কাফিয়া।
ওই ঘটনার পরে গ্রেফতার করা হয়েছে লরিচালক সত্যেন্দ্র যাদবকে।
এ দিনের ঘটনার জেরে পুলিশি যান-শাসনের ব্যবস্থায় খামতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভাঙচুর করা হয় একটি সরকারি বাস, লরি। ঘণ্টাখানেক ধরে দফায় দফায় বি টি রোড অবরোধের জেরে ভরদুপুরে উত্তর কলকাতায় যান চলাচলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। উত্তর শহরতলি থেকে শ্যামবাজারের দিকে যাওয়ার অন্যতম প্রধান রাস্তা টালা সেতুর মুখে দুর্ঘটনাটি ঘটায় শহরে ঢোকার একটি পথ কিছু ক্ষণের জন্য কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চাপ পড়ে মেট্রো রেলের উপরে। অবরোধের জেরে রাস্তা বন্ধ থাকায় নিত্যযাত্রীরা অনেকেই ভিড় করেন বেলগাছিয়া বা দমদম স্টেশনে।
কাফিয়ার মাসির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার আকস্মিকতায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার মা ও পিঠোপিঠি বয়সের এক দিদি। কাফিয়ার মাসতুতো দিদি রুখসার খাতুন বললেন, “বিয়ে উপলক্ষে কাফিয়ার বাবারও আসার কথা। ওঁকে আমরা কী বলব, কী ভাবে মুখ দেখাব, কিছুই মাথায় ঢুকছে না।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বি টি রোডের ওই মোড়ে এমন দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে। কলকাতার উত্তর প্রান্তে ২৪ ঘণ্টা লরি চলাচলের ওই করিডরে লরি-ম্যাটাডর সিগন্যাল অমান্য করলেও অনেক সময়েই চোখ বুজে থাকে পুলিশ। ফলে, এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। ডি সি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “কখনও গাড়ির চালক সিগন্যাল অমান্য করায় দুর্ঘটনা ঘটে, আবার কখনও পথচারীরা রাস্তা পার হওয়ার দোষেও বেঘোরে মারা যান। পুলিশ সবাইকেই ট্রাফিক নিয়ম মানতে সচেতন করার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |