ধাপা থেকে একটা লরি যোধপুর পার্কে গিয়ে সেখান থেকে সাড়ে ৫ টন নিকাশি পলি বোঝাই করে ফের ধাপায় এসেছে মাত্র ২৪ মিনিটে। গাড়ির নম্বর ডব্লুবি ১৯-এ ১৪১৩। একই লরি মাত্র ৩৯ মিনিটে ধাপা থেকে বেহালায় গিয়ে সাড়ে ৬ টন মাল তুলে ফের ঢুকেছে ধাপার ওজন করার মেশিনে। এমন অবাস্তব নজির রয়েছে আরও কিছু লরির ক্ষেত্রেও।
এমন ‘অবিশ্বাস্য’ ট্রিপ পুর অফিসারদের চোখ এড়াল কী ভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কাউন্সিলররা। মেয়র অবশ্য বলেন, “ধাপার সমস্ত ট্রিপ এ বার খতিয়ে দেখে বিল মেটানো হবে। এত কাল এটা হয়নি।”
গরমিল রয়েছে আরও। একটা খালি লরির ওজন কখনও ২ টন, কখনও আবার ৯ টন। আর সেই হিসেব দেখিয়েই প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার বিল পাশ হয়ে গিয়েছে পুরসভার ভাঁড়ার থেকে। সম্প্রতি পুরসভা এ নিয়ে স্পেশাল অডিট করতেই এমন সব নানা অসঙ্গতি মিলেছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের পুরসভার কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আর ওই ঘটনার সঙ্গে কোনও কর্মী যুক্ত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যদিও এক আধিকারিকের কথায়, “দীর্ঘকাল ধরে এমন চলছে। আগে কেউ দেখেনি, তাই ধরা পড়েনি।”
পুর সূত্রের খবর, ধাপায় জঞ্জাল ও পলি ফেলার গাড়ির হিসেব নিয়ে গরমিলের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বাম আমলেও ওই ধরনের কাজ চলতো। কিন্তু তা রুখতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ক্ষমতা বদলের পর ফের বিষয়টি মাথাচাড়া দেয়। গত বছর ধাপায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে তা রোখার সিদ্ধান্ত নেন বর্তমান মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, ধাপায় বসানো নজরবন্দি ক্যামেরা মনিটর করা হবে পুরসভা থেকে। কোন গাড়ি কম মাল বয়ে বেশি বিল করছে, কোন গাড়ি একই মাল নিয়ে একাধিক বার ওজন করাচ্ছে, সে সব ধরতেই পুরসভায় বিশেষ টিম টিভি পর্দায় নজর রাখবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু মাস ছয়েক হয়ে গেল, সেই কাজ ঠিক ভাবে হচ্ছে না বলে জানালেন পুরসভার এক আধিকারিক। মেয়র পারিষদ দেবব্রতবাবু অবশ্য বলেন, “আমার ঘরে সেটা দেখা যায়।”
পুর সূত্রের খবর, গত দু’বছরে শহরের কিছু এলাকায় মাটির নিচে পলিমার পাইপ বসানোর সময় প্রচুর পলি ওঠে। সে সব পলি ধাপায় ফেলার বরাত পায় কয়েকটি ঠিকাদার সংস্থা। কিন্তু সব পলি ধাপায় ফেলা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে জোর গুঞ্জন ওঠে পুর অন্দরমহলে। পুরসভার এক অফিসারের কথায়, “সিএজি-র রিপোর্টে বলা হয়, পলি ফেলার ভাড়া বাবদ দেড় কোটি খরচ হলেও, ওই পলি কোথায় ফেলা হয়েছে তার উত্তর দিতে পারেনি পুর কর্তৃপক্ষ।” মেয়র শোভনবাবু জানান, পলি বহনে লরির ট্রিপের গরমিল প্রথম ধরা পড়ে পুরসভার অর্থ দফতরে। ওই দফতরের এ বিষয়ে কড়া নোট দেয়। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ তা নিয়ে বিশেষ অডিট করার নির্দেশ দেন চিফ মিউনিসিপ্যাল অডিটরকে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই রিপোর্ট জমা পড়ে মেয়র ও কমিশনারের কাছে।
পুর সূত্রের খবর, অডিটে ট্রিপ টোকেন নিয়েও গরমিল মিলেছে। অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ৪৭টি টোকেন অর্থ দফতরে জমা পড়লেও ধাপার রেকর্ডে ওই সব টোকেনের অস্তিত্ব মেলেনি। ওই সব টোকেনের অর্থ মূল্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা। |