দীর্ঘদিন ধরে পড়ুয়াদের একাংশ ছুটি হওয়ার আগেই স্কুল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযোগে শতাধিক পড়ুয়াকে স্কুল থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রায়গঞ্জ ব্লকের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের সুভাষগঞ্জ হাইস্কুলে। শুক্রবার সকালে স্কুল কর্তৃপক্ষ সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় দেড়শো জন পড়ুয়াকে স্কুল থেকে জোর করে বাইরে বার করে দেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর পড়ুয়ারা ফের স্কুলে ঢুকতে দেওয়ার দাবিতে স্কুলগেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভে সামিল হন অভিভাবকদের একাংশও।
গোলমালের আঁচ পেয়ে প্রধান শিক্ষক, পরিচালন সমিতির সম্পাদক সহ কয়েকজন শিক্ষক সেখানে হাজির হলে তাঁদেরকেও ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলতে থাকে। |
দুঘন্টা বিক্ষোভ চলার পর দুপুর দেড়টা নাগাদ স্কুল কর্তৃপক্ষ সুর নরম করে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের ঢুকতে না দেওয়ার তাঁরা বাড়ি ফিরে যায়।
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাককর্মী সমিতির উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক তিলকতীর্থ ভৌমিক ও পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিটি স্কুলের পড়ুয়াদের একাংশের মধ্যেই ছুটি হওয়ার আগে পালানোর প্রবণতা থাকে। এইক্ষেত্রে প্রথমে পড়ুয়াদের সতর্ক করে দেওয়ার নিয়ম। তাতে কাজ না হলে অভিভাবকদের চিঠি পাঠিয়ে ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। ওই স্কুল কেন এমন করল তা বোঝা যাচ্ছে না।”
এবিটিএর জেলা সভাপতি তথা ওই স্কুলেরই শিক্ষক ভানুকিশোর সরকারের অবশ্য দাবি, “পড়ুয়াদের ভয় দেখিয়ে স্কুল থেকে পালানোর প্রবণতা ঠেকাতেই স্কুল কর্তৃপক্ষ কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক হৃষিকেশ রায়ের অভিযোগ, গত তিনমাস ধরে পড়ুয়াদের একাংশ ছুটি হওয়ার আগেই স্কুল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও শতাধিক পড়ুয়া পালিয়ে যায়। সতর্ক করে লাভ হয়নি। স্কুলের পঠনপাঠন ও শৃঙ্খলা বজিয়ে রাখতে তাই এদিন শতাধিক পড়ুয়াকে স্কুলের বাইরে বার করে দিয়ে অভিভাবকদের ডেকে আনতে বলি। ওই স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ২৩০০। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়াদের দুপুর ৩টে ২০ মিনিটে ও সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের বিকাল সাড়ে ৪টায় ছুটি হয়। স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক সুব্রত ঘোষ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়াদের ছুটির সময়ে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের একাংশ ভিড়ে মিশে স্কুল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। স্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় নজরদারি রাখা সম্ভব হয় না।”
পড়ুয়াদের দাবি, বৃহস্পতিবার ভুল করে অনেকে আগে বাড়ি চলে গিয়েছিল। অভিভাবকেরা জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ জোর করে পড়ুয়াদের বাইরে বার করে দেওয়ায় তারা স্কুলে ঢোকার আশায় প্রায় আড়াইঘন্টা চড়া রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে বাধ্য হয়। অনেকে অসুস্থবোধ করে বাড়ি ফিরে যায়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নারায়ণ সরকার বলেন, “স্কুল সঠিক কাজ করেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।” |