পাঁপড়, জিলিপি, নাগরদোলার দেখা মেলে না। তবু মানুষের ভিড়ে খামতি নেই। বছর বছর এমন দৃশ্যই দেখে থাকেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের ভান্ডারটিকুরির বাসিন্দারা। শ্রাবণ সংক্রান্তিতে ব্রহ্মাণী দেবীর পুজো উপলক্ষে যে মেলা বসে, সেখানে গাছের কেনাবেচা হয়। তাই এই মেলা গাছমেলা নামেই পরিচিত।
এ বছর ব্রাহ্মণী দেবীর পুজো হয়েছে শনিবার। তার পর থেকে দশ দিনব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুজোর শুরু থেকেই বসে গাছ মেলা। নাগরদোলা বা চুড়ি-খেলনার দোকান না থাকলেও এই মেলায় বহু মানুষ ভিড় করেন। কিনে নিয়ে যান নানা ফল, ফুলের চারাগাছ। আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল, বাতাবি লেবু, পেয়ারা, কুল-সহ নানা ফলের চারা নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। মেলে গাঁদা, রজনীগন্ধা, জুঁই, গোলাপ-সহ নানা ফুলের চারাও। গত তিন দশক ধরে কাঠের তৈরি নানা জিনিসও বসছে মেলায়। জাহান্নগর কুমারানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চেয়ার, টেবিল, দোলনা-সহ কাঠের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে মেলায় আসেন ব্যবসায়ীরা। |
পূর্ব রেলের ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনে ভান্ডারটিকুরি স্টেশন থেকে কিছুটা এগোলেই ব্রহ্মাণী দেবীর মন্দির। কথিত রয়েছে, চাঁদ সদাগর এই মন্দিরেই মনসার উদ্দেশ্যে পুজোর ফুল নিবেদন করেছিলেন। এলাকাবাসীর কারও দাবি, পুজোর বয়স দু’শো। কারও মতে তিনশো। কেউ বলেন আবার পাঁচশো বছর। মন্দির লাগোয়া রাস্তায় মেলা বসে। বাসিন্দাদের দাবি, দু’দশক আগেও ভিন্ জেলার বহু ব্যবসায়ী মেলায় আসতেন। এখন তাঁদের সংখ্যা কমেছে। রকমারি ফল-ফুলের চারাগাছ সাজিয়ে বসেন জেলার ব্যবসায়ীরা। পূর্বস্থলী, কালেখাঁতলা, লক্ষ্মীপুর, পরানপুর, তেলিনওপাড়া, পারুলিয়া-সহ বহু গ্রামের নার্সারি ব্যবসায়ীরা তাঁদের তৈরি চারাগাছ বিক্রি করছেন মেলায়। কৃষ্ণ শীল নামে স্থানীয় এক নার্সারি মালিক বলেন, “মেলায় ভাল বিক্রি হয়। তাই দুর্গাপুজোর পর থেকেই চারাগাছ তৈরিতে হাত লাগানো হয়।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক নার্সারি মালিক শ্রীদাম মালিকের বক্তব্য, “এলাকায় প্রচুর নার্সারি তৈরি হওয়ায় বাইরের ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে বেশি চারাগাছ আনতে চান না।”
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল দেবনাথ জানান, মেলায় ভাল মানের চারাগাছ পাওয়া যায়। তাই শুধু স্থানীয় মানুষজনই নন, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি-সহ রাজ্যের নানা জেলা থেকে অনেকে আসেন এখানে। এলাকায় সবুজায়নেরও প্রসার ঘটিয়েছে এই মেলা। দুলালবাবুর কথায়, “এলাকায় এখন আর ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না। মেলার দৌলতে জাহান্নগর পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের মধ্যে গাছ কেনার অভ্যাস বহু বছর আগে থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছে।” ব্রহ্মাণী মেলা কমিটির সম্পাদক অমিত ঘোষ থেকে মেলায় বেড়াতে আসা মল্লিকা সাহা, সকলেরই বক্তব্য, “মেলার সুবাদে গাছের সঙ্গে এক প্রকার আত্মীয়তা তৈরি হয়ে গিয়েছে এখানকার মানুষের।” |