কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের চাপানউতোরে আটকে আছে হাওড়া শহরের তিনটি উড়ালপুল ও সংযোগকারী রাস্তা তৈরির অনুমোদন।
২০১০-এ যানজটে জর্জরিত হাওড়াকে গতিশীল করতে তিনটি উড়ালপুল ও সংযোগকারী রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩০০ কোটি টাকা। জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) অন্তর্গত এই প্রকল্পের জন্য সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে পাঠানো হয়। কিন্তু তার পরে আর কাজ এগোয়নি।
স্থির হয়েছিল কাজ করবে কেএমডিএ। দু’বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করার কথা ছিল। জেএনএনইউআরএম-এর নিয়ম অনুযায়ী ব্যয়ের ৩৫ শতাংশ কেন্দ্র এবং বাকি ৬৫ শতাংশ রাজ্য সরকার ও হাওড়া পুরসভার দেওয়ার কথা। ডিপিআর পাঠানোর পরে কেন্দ্রের তরফে কোনও সবুজ সঙ্কেত পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ বর্তমান রাজ্য সরকারের। পুর ও নগরোন্নয়ন সূত্রে খবর, এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতর কিছুই জানাচ্ছে না। |
অন্য দিকে হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়ালের অভিযোগ,“রাজ্য সরকারই এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনও বৈঠকও হয়নি।” কেএমডিএ সূত্রের খবর, প্রথমে আন্দুল রোড থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত রাস্তা ও উড়ালপুল তৈরির কথা ছিল। আন্দুল রোডের দানেশ শেখ লেনের বাসস্ট্যান্ডের কাছ থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বেলেপোল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তাটি তৈরি হত। এ জন্য সাঁতরাগাছি-শালিমার রেললাইনের উপর একটি উড়ালপুল করার কথা। নতুন রাস্তা তৈরি হলে আন্দুল রোড থেকে খুব কম সময়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে এবং ড্রেনেজ ক্যানাল রোড দিয়ে হাওড়া স্টেশন ও ময়দান এলাকায় যাওয়া যাবে। উত্তর ও দক্ষিণ হাওড়ার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে।
জিটি রোডের সমান্তরাল গোলাবাড়ি থেকে বেলুড় বাজার পর্যন্ত একটি উড়ালপুল তৈরি হওয়ারও কথা ছিল। সালকিয়া স্কুল রোড, জে এন মুখার্জি রোড, গিরিশ ঘোষ রোডের উপর দিয়ে উড়ালপুলটি তৈরির পরিকল্পনা ছিল। এই উড়ালপুল তৈরি হলে উত্তর হাওড়ার যানজট কমত। বালি, বেলুড় থেকে কম সময়ে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছন যেত।
এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রামরাজাতলা ও দাশনগর স্টেশনের মাঝে কামারডাঙা লেভেল ক্রসিংয়ের উপর একটি উড়ালপুল তৈরির কথা ছিল। উড়ালপুলটি আড়ুপাড়া স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে শুরু হয়ে কামারডাঙা রোডে মিশত। পরিকল্পনা ছিল, বালিটিকুরি কালীতলার কাছে হাওড়া-আমতা রোড থেকে একটি রাস্তা আড়ুপাড়ার দিকে এই উড়ালপুলের সঙ্গে যুক্ত হবে। পাশাপাশি ইছাপুর মোড় থেকে মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোড পর্যন্ত ড্রেনেজ ক্যানাল রোডকে চওড়া করার পরিকল্পনাও ছিল। |
কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সব ক’টি প্রকল্পই তাদের করার কথা। কিন্তু জমির সমস্যা রয়েছে। যদিও এইচআইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের নিজস্ব জমি আছে। ফলে জমি অধিগ্রহণের সমস্যা নেই। আমরা প্রস্তাবও পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরে আর কিছু হয়নি।” পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়: “কেন্দ্রীয় সরকারই প্রকল্পগুলি ফেলে রেখেছে। কেন মঞ্জুর হয়নি তা-ও জানায়নি। জেএনএনইউআরএম-এর দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পগুলি মঞ্জুর করানোর চেষ্টা করব।”
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি বলেন, “জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার ৩৫ শতাংশ টাকা দেয়। বাকিটা রাজ্য সরকারকে দিতে হয়। রাজ্য সরকার প্রকল্পের জন্য জমি ও টাকার ব্যবস্থা করে ডিপিআর পাঠালে কেন্দ্র তা মঞ্জুর করে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হয়। হাওড়া শহরে উড়ালপুল ও সংযোগকারী রাস্তা তৈরির খুবই দরকার। এতে যানজট কমবে। হাওড়ার মানুষ স্বস্তি পাবেন। হাওড়ায় উড়ালপুল ও রাস্তা তৈরির প্রকল্পটি কেন আটকে আছে তা আমি খতিয়ে দেখব।” |