এক্তিয়ার-বিতর্ক
সরকারের আশ্বাস পেয়ে
কর্মবিরতি রদ হাইকোর্টে
লকাতার ন’টি থানা-এলাকায় ২০ লক্ষ টাকার বেশি সম্পত্তি নিয়ে কোনও মামলা হলেই তার বিচার হতো কলকাতা হাইকোর্টে। তৃণমূল সরকার নিয়মটা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এক কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যের সম্পত্তি বিষয়ক মামলা নগর দায়রা আদালতে করা যাবে। অঙ্কটা তার বেশি হলে মামলা হবে হাইকোর্টে।
আর তা নিয়ে বেধেছে বিবাদ।
আইনজীবীদের একাংশ সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। অপর অংশ মনে করছেন, এতে হাইকোর্টের গুরুত্ব কমছে। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা হাইকোর্টকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তা এ ভাবে ‘ছাঁটাই’ করার প্রতিবাদে হাইকোর্টের বার লাইব্রেরি শুক্রবার থেকে তিন দিনের কর্মবিরতির ডাকও দেয়। তাদের আশঙ্কা ছিল, কলকাতা হাইকোর্টে ‘অরিজিন্যাল সাইডের’ এত কালের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। যদিও রাজ্যের হস্তক্ষেপে এ দিন বিকেলে কর্মবিরতি উঠে যায়। ‘অরিজিন্যাল সাইড’ মানে কী?
আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ইংরেজ আমলে কলকাতা, বোম্বাই (বর্তমানে মুম্বই) ও মাদ্রাজ (এখন চেন্নাই) হাইকোর্টের পত্তন হওয়া ইস্তক তিন হাইকোর্টে সংশ্লিষ্ট শহর-এলাকার মামলা সরাসরি করা যেত। যেমন, খাস কলকাতা শহর বলতে তখন চিহ্নিত ছিল যে ন’টি থানা-এলাকা, তার সব মামলাই সরাসরি আসতে পারত কলকাতা হাইকোর্টে। এটাই হাইকোর্টের অরিজিন্যাল সাইড। একই ভাবে অঞ্চল নির্বিশেষে যাবতীয় আপিল-মামলা বা নিম্ন আদালত থেকে আসা মামলার বিচার করতে পারত হাইকোর্ট, যেটাকে বলা হচ্ছে অ্যাপিলেট সাইড। পরবর্তী কালে আরও অনেক আদালত তৈরি হলেও কলকাতা হাইকোর্টের সেই ‘অরিজিন্যাল সাইড’ কিন্তু থেকে গিয়েছে। সম্পত্তি সংক্রান্ত সব মামলা অরিজিন্যাল সাইডেই হয়ে আসছে।
অরিজিন্যাল সাইডের ‘ক্ষমতাহ্রাসের’ প্রতিবাদে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত কিন্তু সবর্সম্মত ছিল না। এ নিয়ে আইনজীবীদের দু’পক্ষে বচসাও হয়েছে বৃহস্পতিবার। এ দিন কর্মবিরতি পালিত হলেও পক্ষে-বিপক্ষের আইনজীবীরা হাজির না-থাকায় গোলমাল হয়নি। বিচারপতিরা অবশ্য এসেছিলেন, অনেকে এজলাসেও বসেন। কিন্তু আইনজীবীর অভাবে শুনানি হয়নি।
হাইকোর্ট-সূত্রের খবর: বিকেলে অ্যাডভোকেট জেনারেল মারফত রাজ্য সরকার বার্তা পাঠায়, ২০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি-মামলা নগর দেওয়ানির পাশাপাশি হাইকোর্টেও করা যাবে।
এর পরেই কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হয়। আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র জানিয়ে দেন, বার লাইব্রেরি কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনও কর্মবিরতিতে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু মতভেদ কেন?
বস্তুত স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন আদালত গড়ে ওঠায় কলকাতা হাইকোর্টে অরিজিন্যাল সাইড রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আইনজীবী মহলে।
ওঁদের একাংশের বক্তব্য: হাইকোর্ট মূলত আপিল মামলার জন্য। স্বাধীনতার পরে তৈরি সব হাইকোর্ট শুধু আপিল-মামলাই শোনে। কলকাতায় অরিজিন্যাল সাইডের চাপে অ্যাপিলেট সাইড মার খাচ্ছে। “অরিজিন্যাল সাইড না-থাকলে হাইকোর্টে আপিল মামলার পাহাড় জমত না।” আক্ষেপ এই মহলের। আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ব্রিটিশ আমলে অরিজিন্যাল সাইডের একটা মূল্য ছিল। স্বাধীনতার পরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাই অরিজিন্যাল সাইড মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। তার অস্তিত্ব থাকারই কথা নয়। অথচ আইনজীবীদের একটি অংশ এটা জিইয়ে রাখতে চাইছেন।” আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি বলেন, “আমি চাই, অবিলম্বে অরিজিন্যাল সাইড উঠে যাক।”
অন্য দিকে আবার অরিজিন্যাল সাইডের পক্ষে সওয়াল করে এক আইনজীবী বলেন, “মুম্বই, চেন্নাই ও কলকাতার মধ্যে কলকাতায় অরিজিন্যাল সাইডের এক্তিয়ার সবচেয়ে কম। এখানে মাত্র ২৫ কিলোমিটার এলাকা এর আওতায়। অন্য দু’টোয় তা অন্তত দশ গুণ।” পাশাপাশি অরিজিন্যাল সাইডের মামলা শোনার মতো পরিকাঠামো নিম্ন আদালতের রয়েছে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছে এই মহল। “নিয়ম বদলের আগে রাজ্য সরকারের উচিত ছিল আমাদের সঙ্গে কথা বলা।” মন্তব্য করেন কর্মবিরতি-আন্দোলনের সমর্থক আইনজীবী প্রমিত রায়।
দিনের শেষে সরকারের প্রস্তাব অবশ্য আন্দোলনপন্থীদের খুশি-ই করেছে। এতে অরিজিন্যাল সাইডের ক্ষমতা অটুট থাকল বলে তাঁরা মনে করছেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.