একটা লোক সকলের নজর এড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে ঢুকে পড়ল প্রাথমিক স্কুলটিতে। সেখানে অন্তত আটশো পুঁচকে পড়ুয়ার কলকলানি। লোকটার হাতে এ কে ৪৭ জাতীয় অস্ত্র আর ৫০০ রাউন্ড গুলি!
এমন দৃশ্য তো আমেরিকার স্কুল বা কলেজে একেবারেই বিরল নয়। দেশের ইতিউতি কোনও বন্দুকবাজের হামলায় প্রাণহানির ঘটনা মাঝেমধ্যেই শিরোনামে আসে। এ ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম আটলান্টার শহরতলি ডেকাটুরের এই প্রাথমিক স্কুলটি।
বন্দুকবাজ এল। স্কুলে হানা দিল। অল্পস্বল্প গুলিও চলল। কিন্তু কারও গায়ে আঁচড়টুকুও লাগল না। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? যাঁর বুদ্ধিমত্তায় এই অসাধ্য সাধন হয়েছে, তাঁর নাম আতোঁয়ানেত টাফ। ডেকাটুরের রোলান্ড ই ম্যাকনায়ার ডিসকভারি লার্নিং অ্যাকাডেমির কর্মী তিনি।
স্কুলে বন্দুকবাজ ঢুকে পড়ায় যিনি প্রথমে ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু পালিয়ে যাননি। উল্টে সেই বন্দুকবাজ অর্থাৎ মাইকেল ব্র্যান্ডন হিলের সঙ্গে শুধু কথা বলে গিয়েছেন। বন্দুকবাজ নয়, বন্ধু ভেবেছেন তাঁকে। বলেছেন, ভালবাসি। আর ভরসা দিয়েছেন। বন্ধুর মতোই মাইকেলকে পাশে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গিয়েছেন পুলিশের কাছে। ভুলিয়েভালিয়ে শেষমেশ পুলিশের হাতে তুলেও দিতে পেরেছেন এই শর্তে যে পুলিশ তাকে মারবে না। আর এত কিছু করার পরে বড়সড় হাঁফ ছেড়ে টাফ বলেছেন, “সত্যি কথাটা বলব? সারা জীবনে কোনও দিন এত ভয় পাইনি বিশ্বাস করুন! ” |
|
|
স্কুলকর্মী আতোঁয়ানেত টাফ |
বন্দুকবাজ মাইকেল ব্র্যান্ডন হিল |
|
স্কুল থেকে দেশের জরুরি নম্বর ৯১১-এ ফোন গিয়েছিল। টাফ আর মাইকেলের কথোপকথন রেকর্ড হয়েছে সেই ফোনেই। পরে সেই রেকর্ড থেকে বুধবার গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
আর পাঁচটা দিনের মতোই মঙ্গলবার ডিসকভারি লার্নিং অ্যাকাডেমিতে ক্লাস চলছিল। মাইকেল হঠাৎ ঢুকে পড়ে স্কুল অফিসে। সেখানে ছিলেন আতোঁয়ানেত টাফ। মাইকেল প্রথমে মেঝেতে গুলি করে। তার পর কয়েকটা ছুটে যায় পুলিশের দিকে। পাল্টা গুলি চালাল পুলিশও। কিন্ত পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই শুরু হল টাফ-হিলের বাক্যালাপ।
নিজের জীবন সংগ্রামের কথা মাইকেলকে বললেন টাফ। জানালেন, স্বামীকে হারিয়ে পঙ্গু সন্তানকে বড় করা কী ভীষণ কঠিন। তার পরে আশ্বস্ত করলেন তাঁকে। বললেন, “তুমি তো কাউকে মারোনি। আমাকেও আঘাত করোনি। এখনও শান্তিপূর্ণ ভাবে আত্মসমর্পণ করতে পারো।”
রাগী ছেলেটা তত ক্ষণে অস্ত্র আর গুলি নামিয়ে রেখেছে। তাঁকে শান্ত করতে আরও নরম সুরে টাফ বলে যান, “আমরা তোমায় ঘৃণা করব না। তুমি যে ধরা দেওয়ার কথা ভাবছ, এটা ভাল। আর তাই তোমায় ভালবাসি। তোমার জন্য প্রার্থনা করব।”
সারা স্কুল ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। সবাই তটস্থ। হঠাৎ মাইকে শোনা গেল মাইকেলের গলা। বন্দুকবাজ জানাচ্ছেন, যা করেছেন তার জন্য তিনি দুঃখিত। তবে তিনি কাউকে আঘাত করতে চান না।
বছর কুড়ির যুবক মাইকেল মানসিক ভাবে সুস্থ নন। তাঁর চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু মাঝপথেই তা বন্ধ করে দেন তিনি। এর আগেও অপরাধের রেকর্ড রয়েছে তাঁর। তবে হত্যার অভিযোগ নেই। মাইকেলকে শান্ত করার পরে পুলিশ আর বন্দুকবাজের মধ্যস্থতায় নামেন টাফ। মাইকেল তখন বলছেন, তাঁর এ সব করার বদলে মানসিক হাসপাতালে যাওয়া উচিত ছিল। আর স্কুলের বাচ্চাদের উপরে তাঁর কোনও রাগ নেই। নিরস্ত্র কোনও পুলিশ এলে তিনি আত্মসমর্পণে রাজি।
উত্তেজনার পর্ব শেষ। মাইকেলকে পুলিশের কাছে নিয়ে গেলেন টাফ। পুলিশ চিফ সেড্রিক আলেকজান্ডার টাফকে ধন্যবাদ দিয়ে বলছেন, “যা যা ঘটেছে, তা না ঘটলে খুবই খারাপ কিছু হতে পারত।” ঘটেনি, আঁতোয়ানেতের জন্য! |