বিনোদন স্বর্ণযুগের স্মৃতি উস্কে
ঝাড়খণ্ডে বাংলা ছবি
প্রায় দেড় দশক পরে ফের বাংলা ছবির পর্দায় ফিরে আসতে চলেছে ঝাড়খণ্ড। মাওবাদী সমস্যার জেরে দীর্ঘদিন ঝাড়খণ্ডে বাংলা ছবির শ্যুটিং বন্ধ ছিল। বছর আষ্টেক আগে ম্যাকলুস্কীগঞ্জে একটি ছবির শ্যুটিং করতে গিয়েও কাজকর্ম বন্ধ রাখতে হয়। কিন্তু এখন ঝাড়খণ্ড সরকার আবার নতুন করে শ্যুটিংয়ে উৎসাহ দিচ্ছে। বাংলা ছবিও ঝাড়খণ্ডে ফিরছে।
অথচ এক সময় কিন্তু টালিগঞ্জের অন্যতম প্রিয় শ্যুটিং স্পট ছিল ঝাড়খণ্ড। উত্তমকুমার, সত্যজিৎ রায় অথবা ঋত্বিক ঘটক এ রাজ্যের পাহাড় আর জঙ্গলকে বেছে নিয়েছেন প্রত্যেকেই। ঝাড়খণ্ড রাজ্য তৈরি হওয়ার আগে দক্ষিণ বিহারে অজস্র বাংলা ছবির শ্যুটিং হয়েছে। ‘শুন বরনারী’, ‘দাদার কীর্তি’র মতো একাধিক বাংলা ছবিতে শিমুলতলা-দুমকা-মধুপুরের মতো জায়গা প্রবল ভাবে মিশে রয়েছে। হাজারিবাগের ‘জিব্রাল্টা হাউস’ নামে বিখ্যাত বাড়িটি ছিল এক বাঙালি বিচারপতির। যেখানে উত্তম-অপর্ণা জুটির ‘জয়জয়ন্তী’ সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিল। সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র লোকেশন ছিল জঙ্গল আর নদী ঘেরা পলামু। ঋত্বিকের ‘অযান্ত্রিক’ এবং ‘সুবর্ণরেখা’ ছবির শ্যুটিংও হয়েছিল এই ঝাড়খণ্ডেই।
এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ধানবাদের কাছে তোপচাঁচিতে উত্তমকুমার নিজের বাংলো তৈরির জন্য কয়েক একর জমিই কিনে ফেলেন। উত্তমবাবুর বেশ কিছু জনপ্রিয় ছবির শ্যুটিং হয়েছিল তোপচাঁচিতে। কলকাতা থেকে পর্যটকরা এলে ট্যুরিস্ট গাইডরা আজও শ্যুটিং-এর সেই সব জায়গা ঘুরিয়ে দেখান।
কিন্তু বেশি কিছুদিন ধরেই সেই রামরাজ্য আর ছিল না। দীর্ঘদিন সিনেমার শ্যুটিং বন্ধ ঝাড়খণ্ডে। বহু বছর বাদে ২০০৫ সালে ম্যাকলুস্কিগঞ্জে শ্যুটিং করতে এসেও রীতিমতো ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল রূপা গঙ্গোপাধ্যায় আর তাঁর সঙ্গীদের। শ্যুটিং বন্ধ করে তাঁরা কলকাতা ফিরে যেতে বাধ্য হন। বাংলা রূপোলি পর্দার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের সম্পর্ক সেখানেই থমকে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার পরিচালক ঋতব্রত ভট্টাচার্যর নতুন ছবি ‘সন্ধে নামার আগে’র সম্পূর্ণ শ্যুটিং শিডিউলই রাখা হয়েছে ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ, ঝুমড়ি তিলাইয়া, পলামু এবং রামগড়ের মতো জায়গায়। শ্যুটিং রাখা হতে
পারে মাওবাদীদের কেল্লা বলে পরিচিত লাতেহার জেলার নেতারহাটেও। ঋতব্রতর কথায়, “প্রথমে ভেবেছিলাম লোকেশন করব উত্তরবঙ্গ আর পাহাড়ে। কিন্তু সেখানকার উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই সিদ্ধান্ত বদলে ঝাড়খণ্ড যাচ্ছি। ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ইউফোরিয়া ব্যান্ডের গায়ক পলাশ, জুন মালিয়ার মতো শিল্পীরা অভিনয় করবেন। ঝাড়খণ্ড সরকার আমাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” সেপ্টেম্বরের শেষে শ্যুটিং শুরু হবে।
ঝাড়খণ্ড সরকারও বিষয়টি নিয়ে খুবই উৎসাহী। রাজ্য পর্যটন বিভাগের সচিব সজল চক্রবর্তীর কথায়, “ঋতব্রতবাবু আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কলাকুশলীদের জন্য আমরা ইনস্পেকশন বাংলো, সার্কিট হাউসের ব্যবস্থা করে দেব। লোকেশনে যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করব। আর নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই জোর দিয়ে দেখা হবে।”
সাড়া পড়ে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের বাঙালি মহলেও। রাঁচির বাসিন্দা, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তথ্যচিত্র নির্দেশক মেঘনাদ ভট্টাচার্যের কথায়, “এক সময় ঋত্বিক ঘটক তাঁর অযান্ত্রিক ছবিতে এখানকার মানুষের কথা সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছিলেন। হাজারিবাগ-রামগড়-রাঁচি-রাতুর মতো জায়গায় শ্যুটিং হয়েছিল। আবারও যদি বাংলা ছবিতে ঝাড়খণ্ডের পটভূমি উঠে আসে, তবে খুব আনন্দের কথা।”


তখন বয়স খুব অল্প। তোপচাঁচি গিয়েছিলাম ‘শুন
বরনারী’র শ্যুটিংয়ে। পাহাড়ের পাশে টলটলে
জলের লেক। উত্তমের সঙ্গে বিয়ের পরও বহু
বার ওখানে বিশ্রাম নিতে গিয়েছি।

সুপ্রিয়া দেবী


ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল অতি মনোরম। ‘অরণ্যের
দিনরাত্রি’র শ্যুটিংয়ে খুব মজা হয়েছিল। অন্য
কোনও জঙ্গল হলে সেটা এতটা মাদকতাময়
হত কি না সন্দেহ।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়


হাজারিবাগে শ্যুটিং হয়েছিল ‘জয়জয়ন্তী’র। তেমন
তেমন গল্প হলে তার মেজাজের সঙ্গে খুব মানানসই
এই জায়গাগুলো। আবার ওখানে শ্যুটিং
করা যাচ্ছে শুনে ভাল লাগল।

অপর্ণা সেন


‘দাদার কীর্তি’র শ্যুটিং হয়েছিল শিমুলতলায়।
আগে জমিদারেরা ওখানে যেতেন হাওয়া বদলে।
সেই সব পেল্লায় বাড়ি ভাড়া নিয়েই শ্যুটিং। চুটিয়ে
মজা করে কাজ করতাম।
দেবশ্রী রায়

নন্দিনী: নতুন ছবির শ্যুটিংয়ে জোধপুরে মাধুরী দীক্ষিত। ছবি: পিটিআই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.