|
|
|
|
বাল্যবিবাহ রুখতে প্রচার |
ছাত্রীদের দাবি মেনেই বাবা-মা’র জন্য নাটক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
বাল্য বিবাহ বন্ধে স্কুলে-স্কুলে সচেতনতা শিবির, নাটক চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে। তা দেখে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ছাত্রীরা চাইছেন, তাদের অভিভাবকেরাও দেখুক এই ধরনের নাটক, জানুক বাল্য বিবাহের ভয়ঙ্কর পরিণাম। তাদের সেই দাবি মেনে এ বার অভিভবকদের জন্যও নাটকের আয়োজন করছে ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। দফতরের আধিকারিক কুশল চক্রবর্তী বলেন, “পড়ুয়াদের দাবিকে কুর্নিশ জানিয়েই আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অভিভাবকদের জন্য নাটক মঞ্চস্থ করা হবে। প্রথম শো-টি হবে জামবনি ব্লকের দুবড়া গ্রামে।”
ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে মাস খানেক ধরে জঙ্গলমহলের স্কুলে স্কুলে বাল্যবিবাহ সচেতনতায় নাটক দেখানো হচ্ছে। নাটকে অসময়ে জোর করে বিয়ে দেওয়ায় স্কুলপড়ুয়া কিশোরী মিঠুর জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। অভাবী বাবা-মা’য়ের দাবির কাছে হার মানতে হয় নাবালিকা বিলকিসকে। ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক যুবকের সঙ্গে জোর করে বিলকিসের বিয়ে দেন অভিভাবকেরা। পরে সেই যুবক বিলকিসকে নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রি করে দেয়। তবে, মিঠু ও বিলকিসের মতো নিজের জীবনকে শেষ হতে দেয়নি রূপা। বিয়ের দিন এক পড়শির মাধ্যমে পুলিশে খবর দেয় সে। বিয়ের আসর থেকে রূপাকে উদ্ধার করে পুলিশ। হাজতবাস হয় রূপার অভিভাবকদের। |
|
নাটক দেখে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে ছাত্রীরা। বিনোদমঞ্জরী গার্লস স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র। |
এই নাটক দেখে পড়ুয়াদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সেই মতো বিশাল সাদা ফ্লেক্সে মার্কার পেন দিয়ে নিজেদের ভাবনা জানিয়েছে পড়ুয়ারা। ঝাড়গ্রামের একটি আদিবাসী আবাসিক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী প্রতিমা টুডুর বক্তব্য, “বাড়িতে পড়াশোনার ব্যাপারে কারও উৎসাহ নেই। লেখাপড়ার গুরুত্ব কেউ বোঝে না। বয়স বেড়ে যাচ্ছে, এই কারণ দেখিয়ে সকলে আমার বিয়ের জন্য তাগাদা করছে। কিন্তু আমি পড়তে চাই। অভিভাবকদের এই নাটক দেখানো হোক। তা হলে আমার বাড়ির লোককে বোঝাতে সুবিধা হবে।” ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী কল্পনা মাহালি লিখেছে, “রূপার মতো আমিও প্রতিবাদ করতে চাই। এমন নাটক আমাদের অভিভাবকদের দেখানো হোক।” কুশলবাবু বলেন, “কুপ্রথা ভাঙতে হলে প্রত্যন্ত গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতাকে সচেতন করার দাবি তুলেছে পড়ুয়ারা। আমরা সেই দাবি যৌক্তিকতা বুঝে গ্রামে-গ্রামে সচেতনতা নাটক প্রদর্শনের ব্যবস্থা করছি। এমনকী পড়ুয়াদের পরামর্শে নাটকের দৃশ্যের পরিবর্তনও ঘটাতে হচ্ছে। যেমন, নাটকে মিঠু ও বিলকিসের করুণ পরিণতিটি প্রতীকী ভাবে দেখানো হয়েছিল। নাটকটি দেখার পর কয়েকজন ছাত্রী জানায়, বাস্তবকে বাস্তবসম্মত ভাবেই দেখানো হোক। বাল্য বিবাহের করুণ পরিণতিটি এমন ভাবে দেখানো হোক যাতে দর্শক-অভিভাবক চমকে ওঠেন। আমরা সে কথা মেনে নিয়েছি।” |
|
|
|
|
|