|
|
|
|
বালির বস্তা মজুত প্রশাসনের |
জীর্ণ জমিদারি বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তা |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
টানা বৃষ্টিতে জল বাড়ছে নদীতে। এই অবস্থায় জীর্ণ নদীবাঁধ নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন।
ছবিটা অবশ্য নতুন নয়। প্রতি বছরই ভরা বর্ষায় বাঁধের দশা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন প্রশাসনিক কর্তারা। বৃষ্টি থামলেই বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বর্ষা শেষ হয়ে গেলে সেই আশ্বাস তলিয়ে যায় নদীগর্ভে। এ বারও ভরা বর্ষার মরসুমে ঘাটাল মহকুমার শিলাবতী, কংসাবতী, কেঠে নদীগুলির বাঁধের অবস্থা দেখে ঘুম উড়েছে প্রশাসনের। বিশেষ করে জমিদারি বাঁধগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। সেচ দফতরের মহকুমা আধিকারিক নমিত সরকার সে কথা মেনে নিয়ে বলেন, “আমরা কিছু এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজ করছি। যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বালির বস্তা মজুত রাখছি। রাতে এলাকাগুলিতে নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
সেচ দফতর এবং মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘাটাল মহকুমায় কংসাবতী, শিলাবতী, কেঠে, দুর্বাচটি, পলাশপাই, ঝুমি-সহ আট-দশটি বড় খাল ও নদী রয়েছে। তার মধ্যে সেচ দফতর ঝুমি নদী বাদে ১৫৩ কিলোমিটার নদী বাঁধ দেখভাল করে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ ছাড়াও ওই সব নদীর উপর প্রায় ২০০ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। যা জমিদারি বাঁধ বলে পরিচিত। সরকারি হিসেবে ওই বাঁধগুলি কে দেখভাল করবে, তার কোনও উল্লেখ নেই। তাই এই বাঁধগুলিকে স্থানীয় বাসিন্দারা ‘বেওয়ারিশ বাঁধ’ও বলে থাকে। তবে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলি কিছু এলাকায় ওই সব জমিদারি বাঁধ মাঝে-মধ্যে সংস্কার করে থাকে। এই রকম জমিদারি বাঁধের ধারেই রয়েছে চন্দ্রকোনার পলাশচাবড়ি, চৈতন্যপুর, খিরাটি, ভৈরবপুর, বাঁকা, ঘাটালের দেওয়ানচক পঞ্চায়েতের অধিকাংশ গ্রাম। দাসপুরের নাড়াজোল ও লঙ্কাগড়ের শতাধিক গ্রামও রয়েছে অরক্ষিত বাঁধের ধারে। অনেক গ্রাম নদীর গর্ভে তলিয়েও গিয়েছে। |
|
মেটাশোর গ্রামে কংসাবতীর ভাঙা বাঁধ। —নিজস্ব চিত্র। |
চলতি মাসের প্রথম দিকে দাসপুরের নাড়াজোল এবং লঙ্কাগড় পঞ্চায়েত এলাকায় রাইকুন্তু ও মেটাশোর গ্রামে কংসাবতী নদীর উপর জমিদারি বাঁধ ভেঙেই প্লাবিত হয়েছিল শতাধিক গ্রাম। পরিস্থিতি সামলাতে একাধিক ত্রাণ শিবিরও খুলতে হয় প্রশাসনকে। সেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলি এখনও মেরামতি হয়নি। গত তিন দশকে ওই বাঁধগুলির সংস্কার নিয়ে বহু আন্দোলন হলেও কাজ হয়নি। চন্দ্রকোনা ও ঘাটালের প্রাক্তন দুই বিধায়ক গুরুপদ দত্ত ও রতন পাখিরা বলেন, “আমরা অনেক বার জমিদারি বাঁধগুলি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সরকারকে জানিয়েছিলাম, কিন্তু কাজ হয়নি।”
ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “এখনই বেশ কিছু জমিদারি বাঁধ সংস্কার না করলে ফের নদী সংলগ্ন বহু গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমি এই বিষয়ে রাজ্যের সেচমন্ত্রী-সহ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।”
যদিও জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “জমিদারি বাঁধ পরের কথা, সেচ দফতরের বাঁধগুলিই যে কোনও সময় সংস্কারের অভাবে ভেঙে যেতে পারে। বাঁধগুলি দখল করে বড় বড় বাড়ি, দোকান গড়ে উঠেছে। সেগুলি তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেই।”
এ দিকে, নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টিতে ফের ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন। এখনই মহকুমার কোথাও জল না ঢুকলেও একাধিক নদীর জল প্রাথমিক বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সাধারণত ঘাটালে বন্যা হয় বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলায় বৃষ্টির জলে। নিম্নচাপের জেরে ওই দুই জেলাতেও সমানে বৃষ্টি হয়েছে বলে খবর। সঙ্গে মঙ্গলবার বিকালে কংসাবতী ব্যারেজ থেকে দশ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এখনও আকাশের মুখ ভার। এদিন সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমলেও থামার লক্ষ্মণ নেই। স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন প্রশাসন। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী বলেন, “নদীর জল ক্রমশ বাড়ছে। আমরা সতর্ক রয়েছি। তবে, এখনও গ্রামে জল ঢোকেনি।”
জল ঢুকলেই অশেষ ভোগান্তি। সেই ভেবে ঘুম উড়েছে ঘাটালবাসীর। |
|
|
|
|
|