|
|
|
|
নিকাশির হাল ফেরেনি, জলবন্দি হলদিয়া |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল শিল্পতালুক হলদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। এই পরিস্থিতির জন্য পুরবাসী অবশ্য প্রকৃতির চেয়ে বেশি দুষছেন বাম পরিচালিত হলদিয়া পুর-কর্তৃপক্ষকেই। কারণ প্রতি বার ভোটের আগে তারা নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরানোর আশ্বাস দিলেও কাজ কিছুই হয় না। প্রশ্ন উঠছে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের (এইচডিএ) ভূমিকা নিয়েও।
সেই ১৯৮৩ সালে পঞ্চায়েত থেকে ‘নোর্টিফায়েড এরিয়া অথরিটির’ মর্যাদা পায় হলদিয়া। ১৫ বছর পর ১৯৯৭ সালে স্বাবলম্বী হয় ‘হলদিয়া পুরসভা’। ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও নিকাশি ব্যবস্থা পড়ে রয়েছে পঞ্চায়েত স্তরে। হুগলি-হলদি নদী ঘেরা এই শহর এমনিতেই ভূগঠনের দিক থেকে অনেকটা গামলার মতো। নিকাশির অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয় কিছু এলাকা। খাল দিয়ে জল বেরনোর বদলে শহরে ঢোকে। পুরসভা ও এইচডিএ-র যৌথ উদ্যোগে ২০০৯ সালে খড়গপুর আইআইটি-কে দিয়ে নিকাশির জন্য ‘মাস্টার প্ল্যান’ করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২১০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ব্যায়ভার বহন করবে কে তা নিয়েই কাজিয়া চলছে পুরসভা ও এইচডিএ-র মধ্যে। |
|
জল জমেছে শিল্পশহরে। ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
এ দিনও উপপুরপ্রধান নারায়ণ প্রামাণিক মাস্টার প্ল্যানের দায় ঠেলে দেন এইচডিএ-র কাঁধে। তাঁর বক্তব্য, “মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করার অর্থ আমাদের কাছে নেই। ওটা এইচডিএ-রই করা উচিত।”
অথচ প্রতি পুরভোটেই বামফ্রন্ট-সহ তৃণমূল, কংগ্রেসসমস্ত রাজনৈতিক দল সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার আশ্বাস দেয়। এ বারও পুরভোটের আগে বামেরা সে কথা বলেছিল। ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য তেমন কিছু কাজ করেনি। খোদ পুরপ্রধানের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড জলের তলায়। দেভোগের সাহুপল্লির বাসিন্দা এইচএফসি-র অবসরপ্রাপ্ত ভবেশ সাহুর কথায়, “একের পর এক কারখানা হয়েছে। কিন্তু জল বেরনোর জায়গা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এত বছরেও নিকাশির সুষ্ঠু বন্দোবস্ত হল না। খাল সংস্কার হয় না। পুরসভা ও এইচডিএ-র দায় ঠেলাঠেলিতে আমরা বিরক্ত।”
বস্তুত, পুর-শহরের ১, ১০, ১২, ১৩, ১৪, ২০, ২৩, ২৫, ২৬-সহ অধিকাংশ ওয়ার্ডেই বড় নর্দমা নেই। কিছু এলাকাতে খাল থাকলেও তা সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে। এই অবস্থায় মাত্র দু’দিনের বৃষ্টিতে নয়ানজুলি উপচে হাঁটু জল থইথই। শহরের প্রাণকেন্দ্র দুর্গাচকের কলোনি বাজার, মঞ্জুশ্রী সংলগ্ন উপপুরপ্রধানের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তা দেখে মঞ্জুশ্রী সিনেমা হল ও মার্কেট কমপ্লেক্সের দোকানদাররা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এ দিন। গুরুত্বপূর্ণ মঞ্জুশ্রী মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখান কিছুক্ষণ। পরে পুরসভা থেকে দু’টি খালি ট্যাঙ্ক পাঠানো হয় পাম্প দিয়ে জল তোলার জন্য। মঞ্জুশ্রী মার্কেট কমপ্লেক্সের দোকানদার দিলীপকুমার মাইতি বলেন, “প্রতিবার নেতারা আশ্বাস দেন, পরের বছর সব ঠিক হয়ে যাবে। কাজ আর হয় না। এক দিনের মধ্যে জল না সরলে আমরা আবার পথ অবরোধ করব।”
এ দিন উপনগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাখনবাবুর বাজার, ২৫ নম্বরের দাসেরচক, ২৬ নম্বরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকাতেও হাঁটু-জল ঠেলেই হাঁটতে হয়েছে শিল্পনগরীর মানুষকে। টাউনশিপের বাসিন্দা রেল আধিকারিক অনুপম পালোধি বলেন, “এখানে নর্দমা এত সরু যে, এই বৃষ্টিতে কোনও কাজে আসে না। নিকাশির অভাবে অফিস যেতে হচ্ছে হাঁটুজল ঠেলে।”
হলদিয়ার উপপুরপ্রধান নারায়ণ প্রামাণিক বলেন, “বৃষ্টি তুলনায় বেশি হওয়ায় কিছু জায়গায় জল জমেছে। আমরা বিভিন্ন এলাকায় জেসিবি দিয়ে মাটি কেটে জল বের করছি। যেখানে ঘর-বাড়ি ধসে গিয়েছে সেখানে ত্রিপল, শুকনো খাবার দিয়েছি। বন্দর কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
পুরএলাকার আশপাশের গ্রামগুলিতে আবার বৃষ্টির জল জমে কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে। সুতাহাটার শ্রীধরপুর গ্রামে, মহিষাদলের বিভিন্ন এলাকায় জল জমে বহু মাটির বাড়ি ধসে গিয়েছে। মহিষাদলের ইটামগরা-১ পঞ্চায়েত এলাকার হরিখালি গ্রামে হলদি নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। নব-নির্বাচিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অমিয়কুমার দিন্দা বলেন, “আরও বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে যাবে গ্রামে। বহু দরিদ্র মানুষের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। আমি বিডিও-কে জানিয়েছি।” ব্লক প্রশাসনের তরফে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই ত্রিপল দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডিও প্রদ্যুতকুমার পালই। |
|
|
|
|
|