জং ধরা বন্দুক নিয়ে চমকাস না, জবাব শুনে চমকে গেল ডাকাতই
মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে দুষ্কৃতীরা গাড়িচালককে বলল, “এই! গাড়ি স্টার্ট দে। আমরা উঠছি।” গাড়ি-চালক নাসির আলমের পাল্টা ধমক, “জং ধরা রিভলভার নিয়ে চমকাচ্ছিস কেন! গাড়ি কি তোদের বাবার?” রিভলভারের নলের মুখে এমন জবাব শুনে হয়তো কিছুটা হকচকিয়েই গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তার মধ্যেই এক দুষ্কৃতীর হাতে ধরা রিভলভারে এসে পড়ল নাসিরের ঘুসি। ছিটকে গেল রিভলভার। রিভলভার তুলে নিজেদের দু’টি মোটরবাইকে উঠে পালাতে থাকে ছয় দুষ্কৃতী। গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করেন নাসির। দুষ্কৃতীরা এ বার নাসিরের গাড়ি লক্ষ করে গুলি চালায়। গুলি লাগে গাড়ির সামনের কাচে। তবু গাড়ি থামাননি নাসির। তত ক্ষণে রাস্তা ঘিরে ফেলেছে পুলিশও। তিন দুষ্কৃতী আর পালাতে পারেনি।
মঙ্গলবার বৃষ্টিভেজা দুপুরে জমজমাট এই দৃশ্য দেখা গেল হুগলির খন্যানে। গাড়িচালক নাসিরের তৎপরতায় ব্যাঙ্ক ডাকাতি করে পালানোর সময়ে ধরা পড়ে গেল তিন জন। উদ্ধার হল ব্যাঙ্ক থেকে লুঠ হওয়া ৩০ লক্ষের মধ্যে ২৪ লক্ষ টাকা। দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে মিলল আগ্নেয়াস্ত্র, তাজা কার্তুজ।
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু বলেন, “ওই গাড়িচালকের সাহসিকতার জন্যই তিন দুষ্কৃতীকে ধরা সহজ হয়েছে। ধৃতেরা দাগি অপরাধী। বিভিন্ন জেলায় ব্যাঙ্ক ডাকাতি করেছে। পলাতক তিন জনের খোঁজ চলছে।”
খন্যানের হাটতলার বাসিন্দা বছর ত্রিশের নাসির স্থানীয় একটি হোটেলের ম্যানেজারের গাড়ি চালান। এ দিন তিনিও খন্যানের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ব্যাঙ্ক-ডাকাতির তিনি প্রত্যক্ষদর্শী। ডাকাতদের দেখে সকলে যখন ভীত-সন্ত্রস্ত, তখন তিনি এত সাহস কী ভাবে পেলেন? নাসির বলেন, “মাথায় ঠান্ডা নলটা ঠেকতেই বুঝে যাই, কিছু না করলে বিপদ বাড়বে। ওরা ঘাবড়ে যেতে গ্রামবাসীদেরও সাহায্যের অনুরোধ করেছিলাম। মনে হয়, ভয়ে কেউ এগোননি। তবে আমি হাল ছাড়িনি।”
পুলিশ সূত্রে খবর, খন্যান স্টেশন রোডে একটি আবাসনের দোতলায় ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। দুপুরে দু’টি মোটরবাইকে ছয় দুষ্কৃতী সেখানে হানা দেয়। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে তারা প্রথমে গ্রাহক এবং কর্মীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড়ও মারে। এর পরে মাথায় রিভলভার ধরে কয়েক জন কর্মীকে ভল্টের কাছে নিয়ে যায়। জোর করে ভল্টের চাবি খুলিয়ে সেখান থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। কেউ এক জন বিপদ-ঘণ্টি বাজালে দুষ্কৃতীরা হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়ে। পিছু পিছু নেমে আসেন নাসিরও।
দুষ্কৃতীরা নিজেদের মোটরবাইকে ওঠার আগে দেখে নাসির তাঁর গাড়ির দরজা খুলছেন। তখনই তারা তাঁর মাথায় রিভলভার ধরে। পাঁচ কিলোমিটার দুষ্কৃতীদের পিছনে ধাওয়া করেন নাসির। পোলবার সংগ্রামপুরের কাছে পুলিশ দুষ্কৃতীদের একটি মোটরবাইক আটকায়। অন্য মোটরবাইকে থাকা দুষ্কৃতীরা পালায়। ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সঞ্জয়কুমার মৃধা লুঠ হওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য নাসিরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। খন্যানের স্থানীয় লোকজন বলছেন, “দুপুরবেলায় এ তো পুরোপুরি ম্যাটিনি-শো!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.