দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে সল্টলেকের ঝাঁ চকচকে শিল্পতালুক থেকে শুরু করে দমদম পার্ক, লেকটাউন, পাতিপুকুরের মতো লাগোয়া কিছু অঞ্চল ভুগল জমা জলের সমস্যায়। কোথাও কোথাও দ্রুত জল নামলেও, দমদম পার্কের বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে থাকলেন দিনভর। প্রশ্ন উঠছে, প্রতি বার বর্ষায় একই হাল হবে কেন ওই অঞ্চলের। সরকারের তরফে যুক্তি, পাল্টা-যুক্তি, পরিকল্পনার নানা রূপরেখা চলছেই। কিন্তু বাসিন্দাদের প্রশ্ন, আর কত দিন একই ভোগান্তি হবে তাঁদের?
সল্টলেকের ক্ষেত্রে অভিযোগ, মূল অসুখ সারেনি। কারণ, সার্বিক ভাবে নগরীর পর্যাপ্ত নিকাশি ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। যার ফলে জল জমে সল্টলেক ও সেক্টর ফাইভের কিছু অঞ্চল এবং সংযুক্ত এলাকায়। সল্টলেকের কিছু এলাকায় জল দ্রুত নামলেও সংযুক্ত অঞ্চলে জল দীর্ঘক্ষণ জমে ছিল। রাতের বৃষ্টিতে ফের জল জমে সল্টলেকের কয়েকটি জায়গায়। |
জলকে চল। মঙ্গলবার, সল্টলেক সেক্টর ফাইভে। ছবি: শৌভিক দে |
সমস্যা পুরো মিটল না কেন? বাসিন্দাদের অভিযোগ একাধিক। কেষ্টপুর খাল ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের উপরে সল্টলেকের নিকাশি নির্ভরশীল। ১ ও ২ নম্বর সেক্টরের জল ভূমির ঢাল অনুসারে কেষ্টপুর খালে পড়ে। সল্টলেকের ৩ নম্বর সেক্টর ও শিল্পতালুকের জল পড়ে ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে। সেটি দীর্ঘ দিন সংস্কার হয়নি। শিল্পতালুকে ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনই নেই। সল্টলেক পুরসভার একটি মাত্র ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনে চারটি পাম্প। তারও সংস্কার হয়নি। সংযুক্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বলেও অভিযোগ।
বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস জানার দাবি, “নিকাশি নালা তৈরি করায় দত্তাবাদেও এ বার সমস্যা কম। বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় একটি পাইপলাইন পুরো সংস্কার না হওয়ায় জল জমেছিল।”
অন্য দিকে, কেষ্টপুর খাল ও বাগজোলা খালের লাগোয়া দমদম পার্ক, লেকটাউন ও পাতিপুকুর অঞ্চল এ বারও জলমগ্ন হয়েছে। বেশ কিছু বাড়ির একতলায় এবং গ্যারাজে জল জমে যায়। আতঙ্কে বাসিন্দারা নিজেদের জিনিসপত্র অন্য জায়গায় সরাতে শুরু করেন। হাল খারাপ কেষ্টপুর থেকে জোড়ামন্দির অঞ্চলের ভিআইপি রোডেরও।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই দমদম পার্ক এলাকাটি ‘বেসিনের’ মতো। এক দিকে যশোহর রোড এবং অন্য দিকে ভিআইপি রোড অনেকটা উঁচু হওয়ার জন্য আশপাশের এলাকার জলও দমদম পার্কে এসে জমে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, সমস্যার কারণ জানা সত্ত্বেও কেন বাগজোলা খাল এবং এলাকার নিকাশি নালাগুলি সংস্কার করা হয় না? |
দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারপার্সন অঞ্জনা রক্ষিতের অবশ্য যুক্তি , “বর্ষার আগে থেকেই বাগজোলা খালের সংস্কার শুরু হয়েছে। কিন্তু ভারী বৃষ্টির জেরে অন্য এলাকার জল ঢুকে যাওয়ায় বাগজোলা খাল উপচে পড়েছে। কেষ্টপুর এলাকার লক গেটও খুলতে পারছি না, তাই ভরসা কতগুলি পাম্প। আমাদের পাম্প এবং সেচ দফতরের পাম্প দিয়ে জল সরানো হচ্ছে।”
বাসিন্দাদের ভোগান্তি কমেনি, তবে আশার কথা শুনিয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রাজীববাবু বলেন, ‘‘ভারী বর্ষণ আর গঙ্গায় জোয়ার মিলে সমস্যা বেড়েছিল। দুপুরের পরে খাল থেকে জল দ্রুত নামতে শুরু করে।’’ নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক জানান, ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের সংস্কারের বিষয়টি পরিকল্পনায় আছে। ফিরহাদ বলেন, ‘‘একযোগে সল্টলেক, পাঁচ নম্বর সেক্টর ও দমদম পার্ক-পাতিপুকুর এলাকার নিকাশি নিয়ে উন্নতমানের পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। সেটি কার্যকর হলে সমস্যা মিটে যাবে।” |