‘বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হলে বদলাবে
এলাকার আর্থ-সামাজিক চেহারা’ |
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের
পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা, প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী। রাজ্যের খাস শিল্পতালুকের এই
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানালেন। সাক্ষাৎকার নিলেন সুশান্ত বণিক। |
১০ জানুয়ারি শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আট মাসের মাথায় পঠনপাঠন শুরু হচ্ছে। কেমন লাগছে? ভাল লাগছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা এবং তার বাস্তবায়ন, এর থেকেই প্রতিফলিত হয়েছে কাজ করার সদিচ্ছা। গত এক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলি এই উদ্যোগ সফল করার জন্য দিনরাত এক করে দিয়েছে।
কী কী বিষয় পড়ানো হবে? ইংরেজি, বাংলা, ইতিহাস ও অঙ্ক দিয়ে শুরু। আগামী শিক্ষাবর্ষে হিন্দি, দর্শন, ভূগোল, এম কম এবং এম এড, এই পাঁচটি কোর্স শুরু করার পরিকল্পনা আছে। অদুর ভবিষ্যতে এমন কিছু পেশাগত বিষয় চালু করা হবে যা এলাকার ছাত্রছাত্রীদের খনি ও শিল্পে চাকরি পেতে সুবিধা হবে।
কতজন ছাত্রছাত্রী এখনও পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন? শুরুতে চারটি বিষয়ে ১২০ জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে। আসানসোলের বিধানচন্দ্র কলেজ আমাদের থেকে স্নাতকোত্তর স্তরে ইংরাজী পড়াবার অনুমোদন নিয়েছে। তাঁরা ৩০ জন পড়ুয়া ভর্তি করিয়েছে।
স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে কি? এখনও পর্যন্ত স্থায়ী শিক্ষক আমরা পাইনি। উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছ থেকে জেনেছি, পুজোর পরে কয়েকজন স্থায়ী শিক্ষক মিলবে। তা বলে পঠনপাঠনে গাফিলতি রাখছি না। আমরা ৩০-৩২ জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করেছি। আশেপাশের নামকরা কলেজের শিক্ষক, এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককেও নিয়োগ করা হয়েছে। আরও অনেকেই এখানে পড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। |
উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায়। |
পাঠক্রম তৈরি হয়ে গিয়েছে? অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন পদ্ধতিকে মাথায় রেখে আমরা সিলেবাস তৈরি করেছি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকরা আমাদের সিলেবাস কমিটিতে ছিলেন। প্রত্যেকটি বিষয়কে ধরে ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পাঠক্রম তৈরি করা হয়েছে। পরে ইউনির্ভাসিটি কাউন্সিল থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কতগুলি কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত হচ্ছে? উপাচার্য: আসানসোল, দুর্গাপুর মহকুমা ও বীরভূম জেলার প্রায় ৩৪ টি কলেজ কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত হচ্ছে। এগলি এখন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। উচ্চ শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, পুজোর পরে অন্তর্ভূক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কোথায় পঠনপাঠন শুরু হচ্ছে? সেখানে পরিকাঠামো কেমন? উপাচার্য: আসানসোলের সুকান্ত ময়দানের কাছে রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের একটি অব্যবহৃত তিনতলা ভবন আছে। ওই ভবনটি অনগ্রসর কল্যাণ দফতর আমাদের অস্থায়ী ভাবে পঠনপাঠনের জন্য দিয়েছে। সেই ভবনটিকে আমরা সুন্দর করে সংস্কার করে নিয়েছি। যত দিন পর্যন্ত নিজেদের ভবন না হবে ততদিন এখানেই পঠনপাঠন চলবে। এখানে আটটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। পাঠাগার ও কমপিউটার ভবনও তৈরি হয়েছে।
আগামী বছর নতুন পাঁচটি বিষয় চালু করার পর বাড়তি জায়গা লাগবে, তাই একাধিক কলেজের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছি। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে আশ্বাসও মিলেছে।
বিজ্ঞান বিভাগ চালু হবে কবে? উপাচার্য: একটু সময় লাগবে। কারণ এর জন্য ল্যাবরেটরির দরকার। সেই কারণে প্রয়োজন জায়গা ও অর্থের। নিজেদের ভবন তৈরি হয়ে গেলেই সমস্যা মিটে যাবে। |
নিজস্ব ভবন কবে হবে? পুজোর পরই নিজস্ব ভবনের কাজ শুরু হবে। আসানসোলের ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে আমরা ৮ একর জায়গা পেয়েছি। ভবন তৈরির নকশা বানানো হয়ে গিয়েছে। পূর্ত দফতর (নির্মাণ) এর আধিকারিকেরা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। মাস খানেকের মধ্যেই ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র ডাকা হবে।
এই শিল্পাঞ্চলে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হল। এলাকার আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোর কী পরিবর্তন হবে? বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি মানেই প্রচুর শিক্ষক, কর্মী নিয়োগ হবেন। দূরদূরান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা, গবেষণা করতে আসবেন। ফলে এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোর উন্নতি হবে। |