|
|
|
|
এ বার তবলাম্যান |
বিক্রম ঘোষ-এর নতুন অ্যালবাম থ্রি-ডি অ্যানিমেশনে। আর তাতেই দেখা যাবে তবলাম্যানকে।
এমনকী হতে পারে গ্র্যাফিক উপন্যাসও। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান। কিন্তু তবলাম্যান?
ম্যানড্রেক, অরণ্যদেবের পর এ বার আসছে নতুন কার্টুন চরিত্র। নাম তবলাম্যান। তবে তার অভিষেক হবে বইয়ের পাতায় নয়। বিক্রম ঘোষের অ্যালবামের ভিডিয়োতে। তার পর এই চরিত্রটিকে হয়তো দেখা যাবে গ্র্যাফিক নভেলের পাতায়।
কী করে এ রকম চিন্তা মাথায় এল বিক্রমের?
অ্যানিমেশন নিয়ে তাঁর কৌতূহল বহু দিনের। এমনকী এর আগে ইলেকট্রোক্ল্যাসিকাল অ্যালবামের কভারেও অ্যানিমেশনের চরিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল এমন একটা ভিডিয়ো বানানোর, যেখানে অ্যানিমেশন ব্যবহার করা যাবে।
কিন্তু চিন্তা ছিল কলকাতায় বসে উন্নত মানের কাজটা কী ভাবে করানো হবে তা নিয়েও।
গত বছর ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে’র কনসার্ট করতে গিয়ে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল তাঁর।
“অখিল বি পল নামে একজন এসে দেখা করেন আমার সঙ্গে। বলেন কলকাতাতে ‘মায়াবিয়াস আর্ট’ নামে একটা অ্যানিমেশন স্টুডিয়ো আছে তাঁর। আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য উনি আমার ‘রিদমস্কেপ’ অ্যালবামের একটা ট্র্যাক-এর থ্রি ডি অ্যানিমেশন ভার্সানটা করে এনেছিলেন। ব্যাকস্টেজে আমাকে তিনি সেই অ্যানিমেশনটা ল্যাপটপে চালিয়ে দেখালেন। আমি তো দেখে একেবারে তাজ্জব!” বলেন বিক্রম। সেই অভিজ্ঞতাটা মাথায় ছিল। যখন ‘তবলা আনতবলা’ বলে একটা অ্যালবামের ভিডিয়ো বানানো নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হল, তখন বিক্রমের মনে পড়ে যায় সেই অ্যানিমেশনটার কথা।
অ্যালবামে তো নানা রকমের পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন তিনি। তা হলে কি ভিডিয়োতেও একটা চরিত্র তৈরি করা যায়, যে কিনা তবলা নিয়ে পরীক্ষা করে?
ব্যস্। শুরু হয়ে গেল কাজ।
কম্পিউটারে তৈরি হল তবলাম্যান।
“এটা একটা কনসেপ্ট। আমি অ্যালবামে তবলাকে নানান নতুন কায়দায় বাজিয়েছি। চামড়ার বদলে অন্যান্য অনেক সারফেসে আমি তবলা বাজিয়েছি। যাকে বলে তবলাকে ডিকনস্ট্রাক্ট করা। বেসিক আইডিয়াটা ছিল এমন একটা চরিত্র তৈরি করা, যে কিনা তবলার জাদুগর। জগৎটা তো একটা রিদমে চলে। যখন তা বেতালা, বেসুরো হয়ে যায়, তখন এই তবলাম্যান এসে সেটা ঠিক করে দেয়,” বলেন শিল্পী।
শুধু তাই নয়। তবলাম্যানের নাকি তিনটে বিশেষ ক্ষমতা থাকবে। বিক্রম বলছেন, ভিডিয়োগুলোতেও সেগুলো দেখানো হবে। ঠিক যেমন গুপি-বাঘা গাইলে মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যেত, তবলাম্যানের বাজনা শুনলেও মানুষের উপর একই রকমের প্রভাব পড়বে। মন্ত্রপাঠ করে যেমন শুদ্ধকরণ হয়, তবলাম্যানের বোল পড়লেও তাই হবে। দুষ্টকে বিনাশ করার জন্যই তার সৃষ্টি। তাই তবলার বোল দিয়ে বজ্রাঘাত করার ক্ষমতা দেওয়া হয় তাকে!
|
|
তবলাম্যান-এর থ্রি ডি অ্যানিমেশন |
তবে নিজের চেহারার আদলে কেন এই অ্যানিমেশনটা বানালেন বিক্রম? “এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়। সোনি মিউজিক এটা ঠিক করেছে। লুকটা তৈরি করেছে অভিষেক দত্ত। অখিল ছবিগুলো এঁকেছে,” জানাচ্ছেন বিক্রম।
তবে তবলা নিয়ে এই রকম পরীক্ষার কথা শুনে কেউ কেউ ভ্রু কোঁচকাচ্ছেন নিশ্চয়ই। মিউজিক ওয়ার্ল্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ বছর কলকাতার এক বড় মিউজিক কোম্পানি পুজোতে কোনও অ্যালবামই প্রকাশ করছে না। এমনটাও মনে হতে পারে যে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির বাজে অবস্থা দেখেই হয়তো এই রকম একটা পদক্ষেপ করা হয়েছে, যাতে মানুষকে অন্য কিছু দিয়ে অ্যালবামের প্রতি আকৃষ্ট করা যায়। এর উত্তরে বিক্রম বলেন, “মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সিডির বিক্রি যতই কম হোক না কেন, নিউ-এজ ফিউশন ক্যাটেগরিতে কিন্তু সব থেকে তার কম প্রভাব পড়েছে। এই সব অ্যালবামের পাইরেসি খুব কম হয়। অনলাইন সেল হয়। ফ্লিপকার্টে প্রচুর বিক্রি। বিদেশেও এর কাটতি রয়েছে। তাই আমি একটা কোনও ইনসিকিওরিটি থেকে করিনি। একটা কোম্পানি পাঁচটা ভিডিয়ো বানাচ্ছে একটা অ্যালবামের। সেটা তো আর এমনি এমনি হয় না। তবলা নিয়ে আমার সব সময় একটা নতুন কিছু করার ইচ্ছে ছিল। মনে হত , কী করলে আরও ক্রিয়েটিভ হওয়া যায়।” তবে তির্যক মন্তব্য যাঁরা করবেন, তাঁদের জন্যও বিক্রম তৈরি।
বলছেন, “এ বছর আমি বেশ কিছু ক্লাসিক্যাল কনসার্ট করেছি। ফিউশনের থেকে বেশি ক্লাসিক্যাল প্রোগ্রাম করেছি। কেউ একটা জিনিস সম্পর্কে ভাল করে না-জানলে তার ডিকন্সট্র্যাকশন করবে কী করে? একটা ট্র্যাকের নাম ‘তবলাম্যান গোজ টু গ্রুভ ফ্যাক্টরি’। সেখানে রূপক তাল সাড়ে তিন মাত্রা করে ভাঙা হয়েছে। তার সঙ্গে ইলেকট্রনিকা চলেছে। আর একটা ট্র্যাকের নাম, ‘কথাকালজি’। কত্থক-এ তবলা বাজানোর যে স্টাইল ব্যবহার করা হয়, সেটা নিয়েই এখানে কাজ করেছি। আমার মনে হয় দেশের অনেক কত্থক শিল্পীই এটা শুনে ইন্টারেস্ট পাবেন।”
আর এ সবেই শেষ নয়। তোড়জোড় শুরু হয়েছে একটা গ্র্যাফিক উপন্যাস লেখারও। নাম হবে, ‘অ্যাডভেঞ্চারস্ অব তবলাম্যান’। যদি দর্শকের ভাল লাগে তাহলে নাকি সেই উপন্যাসে তবলাম্যানের একটা রোম্যান্টিক অ্যাঙ্গল নিয়েও গল্প ফাঁদা হবে!
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
|
|
|
|
|