রাস্তায় প্রসবের পরে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা ও তাঁর সদ্যোজাত সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভর্তি নিতে না চাওয়ার অভিযোগ উঠল গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিত্সকের বিরুদ্ধে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভর্তি নেওয়া হয়। পরিকাঠামোর অভাবের জন্যই ওই মহিলাকে ভর্তি নিতে চাওয়া হয়নি বলে দাবি মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের ওই চিকিত্সকের। যদিও জেলার সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক (কাটোয়া) অসীম প্রামাণিকের বক্তব্য, “সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক ও হাসপাতালের সুপারের কাছে ভর্তি নিতে না চাওয়ার বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।”
রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ মঙ্গলকোটের কৈচর থেকে ক্ষীরগ্রাম যাওয়ার রাস্তায় লক্ষ্মী নামে ওই মহিলার প্রসব হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঝিরঝিরে বৃষ্টি হওয়ায় সদ্যোজাতকে নিয়ে ওই মহিলা রাস্তার পাশে একটি বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নেন। এই অবস্থায় এলাকার কয়েক জন তাঁদের প্রাথমিক চিকিত্সার জন্য সিঙ্গত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ একটি গাড়িতে করে কৈচর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ওই হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। তৃণমূলের শিমুলিয়া ২ অঞ্চল সভাপতি দেবপ্রসাদ রায়ের অভিযোগ, “গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিত্সক আমাদের সরাসরি বলে দেন, ওই মহিলাকে ভর্তি নেওয়া হবে না।” |
বাসিন্দাদের দাবি, এর পিছনে সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক যুক্তি দেন, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলা হাসপাতালের অন্য রোগীদের সমস্যায় ফেলতে পারেন। তা ছাড়া, ওই মহিলার নিজের লোক কেউ নেই। এই অবস্থায় হাসপাতাল ওই প্রসূতিকে ভর্তি নেবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
ওই বাসিন্দারা তখন মঙ্গলকোটের বিডিও সুশান্তকুমার মণ্ডলকে ফোন করেন। ঘটনা শুনে তিনি সিঙ্গত হাসপাতালে পৌঁছে সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক মৌমিতা মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরে সদ্যোজাত-সহ ওই মহিলাকে ভর্তি করানো হয়। তবে ঘণ্টা দুয়েক পর্যবেক্ষণে রাখার পরে শিশুটির ওজন কম থাকায় আরও ভাল চিকিত্সার জন্য কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রবিবার রাতে বিডিও সুশান্তবাবু কাটোয়া হাসপাতালে যান। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী। বিডিও বলেন, “ওই মহিলা ও সদ্যোজাতকে ভর্তি নিতে চাইছিল না সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতাল। তাই ঘটনাস্থলে গিয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এখন তাঁদের কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
ওই চিকিত্সক মৌমিতা মণ্ডলের বক্তব্য, “আমাদের হাসপাতালে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক নেই। পরিকাঠামোও নেই। আয়া রাখারও কোনও চল নেই। তাই এখানে ভর্তি না করে কাটোয়া নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।” সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক (কাটোয়া) অসীমবাবু অবশ্য বলেন, “অনেক রকম সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু ‘লোক নেই’ বলে বা অন্য কোনও কারণে মানসিক ভারসাম্যহীনকে ভর্তি না নিয়ে কোনও চিকিত্সক দায় এড়াতে পারেন না।”
সোমবার দুপুরে কাটোয়া হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রসূতি বিভাগে সদ্যোজাত কোলে বসে রয়েছেন ওই মহিলা। ওই বিভাগের এক নার্স বলেন, “শিশুটি সার রাত ওয়ার্মারের নীচে ছিল। ওই মহিলা এক বারও খোঁজ নেননি। কিন্তু সকালে হঠাত্ ছেলের খোঁজ করতে থাকেন।” অসীমবাবু জানান, শিশুকল্যাণ দফতরে খবর পাঠানো হয়েছে। তারা আসার পরে শিশুটির ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। |