কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার। উদ্দেশ্য ছিল প্রসূতিদের সিজার এবং ছোটখাটো অপারেশন এলাকাতেই করিয়ে ‘রেফার’ সংখ্যা কমানো। কিন্তু বাস্তবে তা চালু না হওয়ায় রাতবিরেতেও প্রসূতিদের নিয়ে ছুটতে হচ্ছে মহকুমা কিংবা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য পরিষেবায় পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুর।
অপারেশন থিয়েটারগুলি চালু করা হচ্ছে না কেন?
স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, উপযুক্ত সংখ্যায় চিকিৎসক না থাকার ফলেই অপারেশন থিয়েটারগুলি চালু করা যাচ্ছে না। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “চিকিৎসক না থাকার ফলে ওটি ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে না। তবে, মাস খানেকের মধ্যেই গড়বেতা, ডেবরা, সবং ও চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে ওটি চালু করে দেব। বাদবাকিতে চলতি বছরেই ধাপে-ধাপে চালু করা হবে। দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগও করা হবে।” |
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল ভাগ হওয়ার পর এখন পশ্চিম মেদিনীপুরের মোট ২১টি ব্লকে ন’টি গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে। বাকিগুলি ব্লক স্তরের হাসপাতাল। ব্লক ও গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে শয্যা রয়েছে ৩০ থেকে ৬০টি করে। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় দাসপুর, চন্দ্রকোনা, ডেবরা, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, সবং, হিজলি, কেশপুর ও শালবনির গ্রামীণ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় সমস্ত গ্রামীণ হাসপাতালেই নতুন ভবনও তৈরি হয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায়। অপারেশন থিয়েটারের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি আনানোর পাশাপাশি ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট চালু হয়েছিল এক সময়। ঘটা করে উদ্বোধনও হয়েছিল এই সব। কিন্তু স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ এবং অ্যানাস্থেটিস্ট নিয়োগ না হওয়ায় উদ্বোধনের পরেই বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম প্রথম চন্দ্রকোনা, সবং, গড়বেতা ও ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালে ‘সিজার’ হত। এখন অবশ্য চন্দ্রকোনা ছাড়া অন্যত্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দাসপুর-সহ বেশিরভাগ গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে যন্ত্রপাতিগুলি বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “ওটি-সহ যন্ত্রপাতিগুলির এই অবস্থার কথা সবাই জানে। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার চালু করার ব্যাপারে দফতরের হুঁশ নেই।
এই অবস্থায় জ্বর, কাশি পেটের রোগ ছাড়া হাসপাতালগুলিতে অন্য কোনও চিকিৎসা হয় না। চন্দ্রকোনার পলাশচাবড়ির মাম্পি সরকার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “সম্প্রতি প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। সিজার করতে হবে বলে রাতেই গাড়িতে করে ঘাটালে রেফার করে দিয়েছিল।” একই ভাবে মাস তিনেক আগে চন্দ্রকোনা রোডের দ্বারিগেড়িয়া হাসপাতাল থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল গড়বেতার উড়াশাই এলাকার বধূ শম্পা মুর্মুকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক চিকিৎসক জানান, আপাতত গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে একজন করে জেনারেল সার্জেন,অন্তত দু’জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও অ্যানাস্থেটিস্ট নিয়োগ করলেই সিজার-সহ ছোটখাটো অপারেশ সম্ভব। এতে জেলার দুই মহকুমা হাসপাতাল ঘাটাল ও খড়্গপুরের উপর চাপ যেমন কমবে, তেমনই রোগীদের হয়রানিও অনেকটাই কমবে।
স্বাস্থ্য দফতর শীঘ্রই আরও চিকিৎসক নিয়োগের আশ্বাস দিচ্ছে। আশ্বাসই ভরসা জেলাবাসীর। |