বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্যে সোমবার কাটল বাঁকুড়া জেলার গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন পর্ব।
অশান্তি বেশি হয়েছে বড়জোড়ায়। জোর করে পঞ্চায়েত দখল, সিপিএম কর্মীদের মারধর, অপহরণ ও বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বড়জোড়ার বেলিয়াতোড়, বৃন্দাবনপুর ও গদারডিহি পঞ্চায়েতে সিপিএম সংখ্যাগরিষ্ঠ পেয়েছে। সাহারজোড়া পঞ্চায়েতে ১০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এবং সিপিএম পাঁচটি করে আসন পেয়েছে। এই চারটি পঞ্চায়েতই সোমবার সকাল থেকে জোর করে দখল করে রাখার অভিযোগ ওঠে তৃণমুলের বিরুদ্ধে। বড়জোড়া বিডিও ইস্তেয়াক আহমেদ খান জানান, বেলিয়াতোড়, গদারডিহি, সাহারজোড়ায় তৃণমূল এবং বৃন্দাবনপুরে সিপিএম পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করেছে।
সন্ত্রাস চালিয়ে বেলিয়াতোড় ও গদারডিহি পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। এ দিন তিনি বলেন, “বেলিয়াতোড় পঞ্চায়েতে আমাদের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পরেই বোমাবাজি ও মারধর শুরু করে তৃণমূল। প্রাণ বাঁচাতে আমাদের এক কর্মী পঞ্চায়েতের দোতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন। গদারডিহি, বৃন্দাবনপুর ও সাহারজোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতেও আমাদের জয়ী প্রার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কয়েক জন ঢুকতে গেলে তাঁদের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়, মারধর করা হয়।” |
উল্লাস। সোমবার বিষ্ণুপুরের রাধানগরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। যদিও জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বড়জোড়ার চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু কোনও পক্ষই এখনও অভিযোগ দায়ের করেনি। কারও জখম হওয়ারও খবর নেই।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ অবশ্য বলেন, “কোথাও কোনও ঝামেলা হয়নি। শান্তিপূর্ণ ভাবেই পঞ্চায়েত গঠন হয়েছে সব জায়গায়।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলার ১৯০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল ১৫৫, বাম ২৫টি, বিজেপি একটি, জেএমএম একটি এবং নির্দলেরা পাঁচটি পঞ্চায়েত গঠন করেছে। তিনটি পঞ্চায়েতে এখনও প্রধান নির্বাচিত হয়নি। আপাতত উপ-প্রধানেরা কাজ চালাবেন। রাইপুর ব্লকের ফুলকুসমা পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূলের দ্বন্দ্বের জেরে সিপিএমের জয়ী প্রার্থী তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর ভোটে প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এর জেরে রাইপুরের যুব তৃণমূল নেতা তথা মেলেড়া পঞ্চায়েতের সদ্য নির্বাচিত প্রধান রাজু সিংহ ও রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এসেছে। জগবন্ধুবাবু বলেন, “দলেরই কয়েক জন সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দিয়ে প্রধান করেছেন।” রাজুবাবুর অবশ্য দাবি, নির্বাচিত প্রধান সিপিএমের হয়ে লড়লেও সদ্য তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সরকার বলেন, “দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে কিছু তৃণমূল সদস্য সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্যকে প্রধান নির্বাচিত করেছে। দলীয় নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। রাজ্য স্তরে জানাবো।”
সিপিএমের রাইপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক ধ্রুবলোচন মণ্ডল বলেন, “শপথগ্রহণের পর আমাদের জয়ী প্রার্থীদের পঞ্চায়েত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের রাজু সিংহের গোষ্ঠীর উস্কানিতেই ওরা প্রধানের ভোটাভুটিতে অংশ নেয়। ওদের সদস্যপদ খারিজের আবেদন জানাবো।” ইন্দাসের রোল গ্রাম পঞ্চায়েতেও সিপিএমের এক জয়ী প্রার্থীকে দলে টেনে বোর্ড গড়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের ইন্দাস জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম দাসের দাবি, ছলচাতুরি করে তাঁদের ওই প্রার্থীকে দলে টেনেছে তৃণমূল। ওই সিপিএম প্রার্থী স্বেচ্ছায় তৃণমূলে এসেছেন বলে দাবি তৃণমূলের রোল অঞ্চল সভাপতি নিমাই মহন্তর। সোনামুখী ব্লকের কোচডিহি গ্রাম পঞ্চায়েতে টাই হয়েছিল। সেখানে টসে জিতে প্রধানের পদটি পেয়েছে তৃণমূল। উপ-প্রধানের পদটি পেয়েছে সিপিএম। |