পুরুলিয়ায় বোর্ড গঠন নিয়েও অন্তর্দ্বন্দ্ব তৃণমূলে
গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে ঘিরেও শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল পুরুলিয়ায়।
সেই দ্বন্দ্বের জন্যই সম্ভাবনা থাকলেও পাড়া ব্লকের দেউলি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে পারল না তৃণমূল। এখানে প্রধান পদে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী দু’জনের নাম প্রস্তাব করায় ভোটদানে বিরত থাকল কংগ্রেস। ফলে, পঞ্চায়েতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও প্রধান হল সিপিএমের। একই ভাবে আড়শা ব্লকের হেঁসলা পঞ্চায়েতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও দ্বন্দ্বের জেরে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় বসার অভিযোগ ওঠে জয়ী তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে। বোর্ড গঠনের পরে দুই গোষ্ঠীর বিরোধ এতটাই গড়িয়েছে যে, তৃণমূল কর্মীরা জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর হস্তক্ষেপ দাবি করেন। এর উল্টো ছবি রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নিলডি পঞ্চায়েতে। সেখানে এ দিন সিপিএমের দুই সদস্যকে শেষ লগ্নে ভাঙিয়ে নেওয়ায় সিপিএমের হাত থেকে বোর্ড ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল।
সোমবার রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’টি ব্লকের পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হয়েছে। নজর ছিল পাড়ার দেউলি, দুবড়া, আনাড়া, ন’ডিহা-সুরুলিয়া, ঝাপড়া-জবড়রা ১ সহ সাঁতুড়ি ব্লকের টাড়াবাড়ি পঞ্চায়েতের দিকে। একক ভাবে কোন দলই বোর্ড তৈরির জায়গায় ছিল না। আনাড়ায় লটারির মাধ্যমে প্রধান হয়েছে সিপিএমের। ন’ডিহা-সুরুলিয়ায় একই ভাবে প্রধান হয়েছে তৃণমূলের। টাড়াবাড়িতেও লটারিতে প্রধান ও উপপ্রধান পদ পেয়েছে তৃণমূল।
এগুলির মধ্যে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে দেউলি পঞ্চায়েত। এখানে মোট ১৫টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৭, তৃণমূল ৫ এবং কংগ্রেস ৩টি আসন পেয়েছে। বোর্ড গঠন নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে আলোচনাও হয়েছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় প্রধান নির্বাচনে তৃণমূলের দুই যুযুধান স্থানীয় গোষ্ঠী দু’জনের নাম প্রধান হিসাবে প্রস্তাব করেছে। কংগ্রেস নেতা বলরাম মাহাতো বলেন, “সিপিএমকে আটকাতে আমরা তৃণমূলকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের দুই দলের মিলিত আসন সংখ্যা সিপিএমের থেকে বেশি থাকলেও তৃণমূলের দ্বন্দের কারণে কংগ্রেসের সদস্যেরা ভোটদানে বিরত থাকেন।” মাঝখান থেকে প্রধান পদটি পেয়ে যায় সিপিএম। তৃণমূলের পাড়া ব্লক সভাপতি রামলাল মাহাতোর দাবি, “দেউলিতে কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের জোট হয়নি। কম আসন পেয়েও কংগ্রেস প্রধান পদ দাবি করেছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা একক ভাবেই প্রধানের পদে লড়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু, দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ওখানে দু’জনের নাম প্রধান হিসাবে প্রস্তাবের ঘটনা ঘটেছে। যারা দলের সিদ্ধান্ত মানেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্য দিকে, হেঁসলা পঞ্চায়েতের ১২টি আসনের মধ্যে ৬টি তৃণমূল, সিপিএম ৪টি (একটি সিপিএম সমর্থিত নির্দল), ফব এবং কংগ্রেস একটি করে আসন পায়। তৃণমূলই ছিল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। ১৬ অগস্ট বোর্ড গঠনের সময় তৃণমূলের পক্ষ থেকে অনিল হেমব্রমের নাম প্রধান পদে প্রস্তাব করা হয়। তখন বামেদের পক্ষ থেকে তৃণমূলেরই দীপক মাহালি নামে অন্য এক সদস্যের নাম প্রস্তাব করা হয়। অনিলবাবু বলেন, “বিরোধীরা আমাদেরই এক সদস্যের নাম প্রস্তাব করায় অবাক হয়ে যাই।” ভোটাভুটিতে অনিলবাবু হেরে যান।
আড়শা ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনন্দ মাহাতো বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখতে এ সব করছে কিছু লোক। দীপক মাহালি আমাদের সদস্য হলেও এই নিবার্চন আমরা মানতে পারব না। ওই সদস্যের প্রতি আমাদের সমর্থন নেই। বামফ্রন্টের সমর্থন নিয়ে আমরা বোর্ড চালাব না। প্রয়োজনে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।” শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “ঠিক কী হয়েছে, রিপোর্ট চেয়েছি। তবে এটা বিরোধীদের দেউলিয়া রাজনীতি।” আড়শার বাসিন্দা, ফব-র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মিহির মাঝি বলেন, “আমরা তৃণমূলকে সমর্থন করেছি। এর বেশি কিছু বলব না।”
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নিলডি গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএমের প্রতীকে জেতা দুই প্রার্থী পানসুখি হাঁসদা ও বাবলু মণ্ডল শেষ মুহূর্তে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকেও বোর্ড গঠন করতে পারেনি সিপিএম। তৃণমূল নেতা স্বপন মেহেতা বলেন, “পানসুখিকে প্রধান ও বাবলুকে উপপ্রধান করে পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছি।” পানসুখিদেবী ও বাবলুবাবু দু’জনেই আগে সিপিএমের তরফে প্রধান ও উপ-প্রধান পদের দাবিদার ছিলেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্য দু’জনের নাম ওই দু’টি পদের জন্য প্রস্তাবিত হওয়ায় তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেন। যদিও তাঁদের দাবি, “তৃণমূলই উন্নয়ন করতে পারবে বুঝে সিপিএম ছেড়েছি।” সিপিএমের চেলিয়ামা জোনাল কমিটির সম্পাদক শক্তি বাউরি জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে দলগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.