অর্থলগ্নি সংস্থার কারবারই কাল হল। দেনার জাল থেকে নিস্তার পেতে স্ত্রী-পুত্রকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন বেসরকারি লগ্নি সংস্থার কর্তা রঞ্জিত বায়েন (৩৪)। দিঘার হোটেলে একই পরিবারের তিন জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে নেমে তাই মনে করছে পুলিশ।
রবিবার সন্ধ্যায় দিঘার একটি হোটেলের দরজা ভেঙে ‘অলমাইটি’ লগ্নি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রঞ্জিতবাবু ও তাঁর স্ত্রী, ছেলের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘর থেকে পাওয়া সুইসাইড নোটে আত্মহত্যার কারণ হিসাবে প্রচুর ধার-দেনার কথা লিখে গিয়েছেন রঞ্জিতবাবু। সুইসাইড নোটে রঞ্জিতবাবু লগ্নি সংস্থার এই দুরবস্থার জন্য জেনারেল ম্যানেজার সুদীপ রায়কে দায়ী করে লিখেছেন, ওই ব্যক্তির অনৈতিক কাজকর্মে সংস্থা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। দায় চাপছিল তাঁর কাঁধে। প্রচুর দেনাও হয়েছিল। এ থেকে নিস্তার পেতেই স্ত্রী-পুত্রকে খুন করে আত্মঘাতী হতে বাধ্য হন তিনি। রবিবার রাতে রঞ্জিতবাবুর শ্বশুর প্রশান্তকুমার ঘোষ দিঘা থানায় আসেন। সুদীপ রায়-সহ লগ্নি সংস্থার তিন কর্তার কাজের জন্য জামাই আত্মঘাতী হন বলে সোমবার থানায় অভিযোগ করেন তিনি। অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
সারদা-কাণ্ডের পর যখন একের পর এক লগ্নি সংস্থার ঝাঁপ পড়ছিল, তখন বেশ কিছু এজেন্ট-কর্মী আত্মঘাতী হন। তবে, আধিকারিক স্তরের কারও এই ভাবে সপরিবার মৃত্যু সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি।
রঞ্জিতবাবুর দাদা ঝন্টুকুমার বায়েন জানান, তাঁদের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে। বছর দশেক আগে ভালবেসে বিয়ের পর থেকেই হাওড়া জেলার সাঁকরাইল থানার পাছালপাড়া এলাকায় শ্বশুর প্রশান্ত ঘোষের বাড়িতে থাকতেন রঞ্জিতবাবু। ‘অলমাইটি’ নামে একটি লগ্নি সংস্থা খুলেছিলেন কয়েকজন মিলে। সারদা-কেলেঙ্কারির পর ব্যবসা গুটিয়ে আসছিল ক্রমশ। রঞ্জিতবাবুর স্ত্রী পূর্বিতাদেবী ছোটদের স্কুল চালাতেন। সম্প্রতি সেটিও বন্ধ। প্রশান্তবাবুর কথায়, “লগ্নি কারবার ভাল না চলায় ইদানীং জামাই মনমরা হয়ে থাকত।”
শনিবার বিকেলে গাড়িতে স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে দিঘার অভিজাত হোটেলে ওঠেন রঞ্জিতবাবু। হোটেলের গেট থেকেই গাড়ি-সহ চালককে ফেরত পাঠান। হোটেলের ম্যানেজার পূর্ণেন্দু খাস্তগীর জানান, রবিবার ওই পরিবারের চলে যাওয়ার কথা ছিল। বিকেলে নির্ধারিত সময়ের পরেও ঘর থেকে না বেরনোয় ডাকাডাকি শুরু হয়। অবশেষেদিঘা থানায় খবর যায়। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে রঞ্জিতবাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। বিছানায় পড়েছিল স্ত্রী পূর্বিতা বায়েন (৩০) ও ৬ বছরের ছেলে প্রদ্যুতের দেহ। |