পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন নিয়ে সিঙ্গুরে সংঘর্ষ, অশান্তি অন্যত্রও |
ভোট-পর্ব নির্বিঘ্নে মিটলেও পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে রক্ত ঝরল সিঙ্গুরে। সিপিএম-তৃণমূল মারপিটে জখম হলেন কয়েক জন। অশান্তি হল হুগলির অন্যত্রও।
সিঙ্গুরের বড়া পঞ্চায়েতে ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এবং সিপিএম দু’দলই আটটি করে এবং বিজেপি একটি আসনে জেতে। সোমবার বিজেপি সদস্যের সমর্থনে বোর্ড গড়ে তৃণমূল। তার পরেই পঞ্চায়েত ভবনের বাইরে সিপিএম শিবিরে বিনা প্ররোচনায় তৃণমূলের লোকজন ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারামারিতে দু’পক্ষের জনা পনেরো জখম হন। এক জনের মাথা ফাটে। একটি সিপিএম কার্যালয়ে ঢুকেও তৃণমূলের লোকেরা যথেচ্ছ ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে গোলমালকারীদের হঠিয়ে দেয়। তৃণমূল হামলার অভিযোগ মানেনি। |
সিঙ্গুরে জখম সিপিএম কর্মী। সোমবার দীপঙ্কর দে-র ছবি। |
শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের নবগ্রাম পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও তৃণমূলের আক্রমণে সিপিএম বোর্ড গড়তে পারেনি বলে অভিযোগ। পুলিশ-প্রশাসনের সামনেই তৃণমূল নেতা অপূর্ব মজুমদারের নেতৃত্বে সিপিএম সদস্যদের মারধর করে পঞ্চায়েত ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শিখা ভট্টাচার্য, কৌশিক ভট্টাচার্য এবং প্রিয়তোষ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে প্রহৃত তিন সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “ওরা পেশিশক্তি দিয়ে পঞ্চায়েতের দখল নিল। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে গোটা ঘটনা জানিয়েছি। তারা কী ব্যবস্থা নেয়, দেখি।” অভিযোগ উড়িয়ে অপূর্ববাবু দাবি করেন, “সিপিএম মিথ্যা কথা বলছে। ওরা নিজেরাই পঞ্চায়েত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। আমাদের কেউ ওঁদের গায়ে হাত তোলেনি।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “কোথাও কোনও ছোটখাটো গোলমাল হতে পারে। তেমন কিছু হলে দলীয় স্তরে খোঁজ নেওয়া হবে।”
আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে রবিবার রাতে বাতানল এবং ভালিয়া দু’টি গ্রামে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়ায়। জখম হন এক জন। সোমবার সকালেও এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল। পুড়শুড়ার চিলাডাঙি ও পুড়শুড়া-২ পঞ্চায়েতে প্রধান পদ নিয়ে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর গোলমাল হয়। চিলাডাঙিতে বোমাবাজি হয়। গোঘাট-২ ব্লকের কামারপুকুর ও বেঙ্গাই পঞ্চায়েতেও তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি হয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “বিক্ষিপ্ত কয়েকটি জায়গায় নিজেদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হলেও সব পঞ্চায়েতেই সর্বসম্মত প্রার্থীই প্রধান, উপপ্রধান হয়েছেন।”
অন্য দিকে, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গোঘাট-১ ব্লকের শ্যাওড়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দুই জয়ী সদস্য ভোট দেননি। তৃণমূল ও ফরওয়ার্ড ব্লকের আসন সংখ্যা হয় ৪-৪। পরে যুগ্ম বিডিও রাজীব দত্তচৌধুরীর উপস্থিতিতে টসে জিতে বোর্ড গঠন করে ফরওয়ার্ড ব্লক। তবে নানা জায়গায় গোলমালের মধ্যে অন্য ছবি দেখা গেল চণ্ডীতলার বরিজহাটিতে। ভোটে জিতে এ দিন বরিজহাটি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করল তৃণমূল। আবির, মিছিল বা বিরোধীদের উপর চড়াও হওয়া নয়, সকাল থেকেই সেখানে পালিত হল রবীন্দ্রজয়ন্তী। পঞ্চায়েতের বাইরে মঞ্চ বাঁধা হয়। দলের জেলা নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে। কলকাতার শিল্পীদের এনে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশিত হয়। বিরোধী সদস্যদেরও সেখানে বসে গান শুনতে দেখা যায়। |