স্বামী নিঃসম্বলানন্দ কলেজ
নেই টিচার ইনচার্জ, বেতন অমিল
ক শিক্ষিকাকে ‘টিচার-ইনচার্জ’ হিসেবে মনোনীত করা নিয়ে পরিচালন সমিতির একাংশের সঙ্গে শিক্ষিকাদের বিবাদ চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে। আদালত তা মীমাংসাও করে দেয়। কিন্তু এখনও দায়িত্ব নেননি ‘টিচার ইনচার্জ’। ফলে, উত্তরপাড়ার স্বামী নিঃসম্বলানন্দ কলেজের পরিচালন ব্যবস্থায় জট পাকিয়েছে। সমস্যার জেরে পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না ওই কলেজের শিক্ষিকা এবং কর্মচারীরা। বন্ধ আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ও।
কয়েক দশকের পুরনো জেলার অন্যতম এই মহিলা কলেজে বর্তমানে ১১০০ ছাত্রী পড়েন। কলেজের পরিচালন ব্যবস্থা সংক্রান্ত সমস্যা দ্রুত না মিটলে পঠনপাঠনে সমস্যার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকদের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, বেতন না পেলে শিক্ষিকারা আর কত দিন পড়াতে পারবেন? গোলমালের জন্য পরিচালন সমিতির সদস্য তথা সিপিএম নেতা পঙ্কজ দাসের দিকেই আঙুল তুলেছেন শিক্ষিকাদের অনেকে। পঙ্কজবাবু অভিযোগ মানেননি। কলেজ পরিচালন সমিতি অবশ্য দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছে।
গোলমালের সূত্রপাত চলতি বছরের মার্চ মাসে। সেই সময়ে কলেজের অধ্যক্ষ ভাগবতচন্দ্র মাঝি অবসর গ্রহণ করেন। তার আগে তিনি তাঁর ক্ষমতাবলে ‘টিচার ইনচার্জ’ পদে মনোনীত করেন শিক্ষিকা ছবি মজুমদারকে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, ছবিদেবীকে ওই পদে মেনে নিতে পারেননি পরিচালন সমিতির সদস্য তথা সিপিএমের উত্তরপাড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ দাস। তিনি নিজের পছন্দমতো লোক বসাতে আসরে নামেন। পাশে পেয়ে যান সমিতির সভাপতিকেও। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সম্প্রতি আদালতে বিবাদটির নিষ্পত্তি হলেও ওই পদে এখনও কাউকে বসানো হয়নি। ফলে, মেটেনি সমস্যা।
কলেজ সূত্রের খবর, ওই গোলমাল চলায় ‘টিচার-ইনচার্জ’ পদে কেউ না থাকায় কলেজের আর্থিক লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। তার ফলে বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, গোলমাল চলাকালীন ভাগবতচন্দ্র মাঝি এবং কয়েক জন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে উত্তরপাড়া থানায় এবং ‘ক্যাগ’-এর ((কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল) অভিযোগ জানান কলেজেরই এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে প্রাক্তন অধ্যক্ষকে। পরে তিনি জামিন পান। ‘ক্যাগ’ সরাসরি তদন্তে নেমে জানায়, কলেজের খরচে কিছু গরমিল রয়েছে।
এ নিয়ে ভাগবতচন্দ্রবাবু বলেন, “আমি পঙ্কজবাবুর মর্জিমাফিক সব সময় কাজ করতাম না। নিয়মবিরুদ্ধ কিছু হলে প্রতিবাদ করতাম। এটাই আমার অপরাধ ছিল। তাই একটি মামলায় এক আইনজীবীকে দেওয়া ১৩ হাজার ৩৫২ টাকার রসিদ সময়মতো না পাওয়ায় আমাকে চোর বদনাম দিয়ে হাজতবাস করানো হয়। পরিচালন সমিতির সদস্যারা এবং শিক্ষিকারা সব জানেন।” পক্ষান্তরে, পঙ্কজবাবু দাবি করেছেন, “আমার উপর অকারণে দোষ চাপানো হচ্ছে। আমি কাউকে হাজতবাস করাইনি। তদন্তের ভিত্তিতেই প্রাক্তন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
এ দিকে, ‘টিচার ইনচার্জ’ পদে মনোনয়ন নিয়ে আকচাআকচি চলতেই থাকে। পরিচালন সমিতি এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা দু’টি পক্ষ হয়ে পড়েন। সমিতির এক সদস্যের কথায়, “ছবিদেবীর এম কম এবং পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে। রয়েছে অভিজ্ঞতাও। কিন্তু পঙ্কজবাবু এমন এক জনকে ওই পদে বসাতে চান, যাঁর চাকরির মেয়াদ আর মাত্র ছ’মাস। তার পরেও তো একই সমস্যা হবে।” আর এক সদস্য বলেন, “এখানে অনার্স পড়ানো হত না। ভাগবতচন্দ্রবাবু ন’টি বিয়ে অনার্স চালু করেন। তাঁর আমলে কলেজ ভবনের পরিসরও বাড়ে। পঙ্কজবাবুর অনুগত না হওয়ার জন্যই ওঁকে হাজতবাস করতে হল।” পরিচালন সমিতির সভাপতি সিপিএমের হওয়াতেই তিনি পঙ্কজবাবুর পক্ষ নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন সমিতির একাধিক সদস্য।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কলেজের পরিচালন ব্যবস্থায় যে সঙ্কট এসেছে, তা মেনে নিয়ে পরিচালন সমিতির সভাপতি শৈলেশ দাস বলেন, “এই পরিবেশ কখনই বাঞ্ছনীয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ‘সিনিয়র’ শিক্ষিকাই টিচার-ইনচার্জের দায়িত্ব পাবেন। ভাগবতচন্দ্রবাবু একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশে টিচার-ইনচার্জ ঠিক হয়েছে। শীঘ্রই তিনি দায়িত্ব বুঝে নেবেন। সমস্যা মিটে যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.