হাওড়ার মহাকরণের কাছে মহিলার মুণ্ডহীন দেহ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কয়েক সপ্তাহ আগে বিদ্যাসাগর সেতুর মন্দিরতলা অ্যাপ্রোচ রোডের উপর থেকে এক যুবককে নীচে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সোমবার ভোরে ওই অ্যাপ্রোচ রোডেই মিলল এক মহিলার মুণ্ডহীন খণ্ডিত দেহ। দেহাংশ মিলল ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ও ক্যারি রোডের সংযোগস্থলে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, দেহ এবং দেহাংশ এক জনেরই।
আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে মন্দিরতলার কাছেই এইচআরবিসি-র ১৪তলা ভবনে মহাকরণ উঠে আসার কথা। ওই দিন থেকে নতুন মহাকরণে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার আগেই সোমবারের এই ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সেতু সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে পুলিশি টহলদারি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ দিকে, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, রাত পর্যন্ত ওই মহিলার পরিচয় পাওয়া যায়নি। কী ভাবে দেহ ও দেহাংশ দু’জায়গায় মিলল, তা-ও পরিষ্কার হয়নি।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমাদের ধারণা, বছর পঁয়ত্রিশ-চল্লিশের ওই মহিলাকে অন্য কোথাও খুন করার পরে তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে কী ভাবে ফেলা হয়েছে, তা পরিষ্কার হয়নি। একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার গভীর রাতে। পুলিশ জানায়, রাত আড়াইটে নাগাদ চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশের কাছে খবর আসে ক্যারি রোড ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থলে রাস্তার মাঝখানে একটা কাটা হাত ও একটা পা পড়ে রয়েছে। পুলিশ গিয়ে কাটা হাত-পাগুলি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। রাতের রাস্তায় ভারী ট্রাকের চাকার তলায় পড়ে থেঁতলে যাওয়া ওই হাত-পাগুলি হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ।
এর পরের ঘটনা এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ। বিদ্যাসাগর সেতুর মন্দিরতলা অ্যাপ্রোচ রোডে টহল দেওয়ার সময়ে শিবপুর থানার পুলিশকর্মীদের নজরে আসে মন্দিরতলা অ্যাপ্রোচ রোড থেকে নেমে সেতুর দিকে যাওয়ার পথে পড়ে রয়েছে এক মহিলার মুণ্ডহীন দেহ। দেহটিতে একটি হাত ও একটি পা নেই। বৃষ্টিতে ভিজে সাদা হয়ে যাওয়া দেহটি উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই মন্দিরতলা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার বাসিন্দা সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, “সন্ধ্যা হলেই এলাকায় বহিরাগত দুষ্কৃতীদের সংখ্যা বেড়ে যায়। সেতুতেও পুলিশি টহলদারি থাকে না। এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত।”
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার বলেন, “কোনও সেতুতেই ২৪ ঘণ্টা পুলিশ থাকে না। তবে এখন থেকে ওখানে পুলিশি টহল বাড়ানো হবে। সেতুতে কাউকে বসতে দেওয়া হবে না।”
এ দিকে ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, মৃতার শরীরে একটা মাত্র কাপড় জড়ানো ছিল। পায়ে গোড়ালির কাছে উল্কি ছাড়া শরীরে আর কোনও চিহ্ন মেলেনি। এমনকী মহিলার শরীরে এমন কোনও চিহ্ন বা অলঙ্কার নেই, যা দিয়ে তাঁকে শনাক্ত করা যাবে। তদন্তকারীদের ধারণা, মহিলার পরিচয় গোপন করার জন্যই খুনি বা খুনিরা এমন নৃশংস ভাবে তাঁর মাথা হাত-পা টুকরো করে কেটেছে। মৃতার পরিচয় জানতে হাওড়ার সব ক’টি থানায় খবর দেওয়া হয়েছে। |