সুইচে হাত দিতেই ছিটকে পড়েছিলেন ভাই। মেন সুইচ বন্ধ করে ভাইকে বাঁচাতে যান দাদা। কিন্তু তিনি যে ভুল সুইচ বন্ধ করেছিলেন, তা বোঝেননি। ভাইয়ের গায়ে হাত দিতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনিও। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, দুই ভাইয়েরই মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে নিউ মার্কেট থানার নীলমণি হালদার লেনে। মৃত দু’জনের নাম অমিত রাউত (২৫) এবং জন্মেজয় রাউত (৩০)।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিউ মার্কেট থানা এলাকার উমা দাস লেনে একটি ভাড়াবাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন অমিত। তাঁর জ্যাঠতুতো দাদা জন্মেজয়ও থাকতেন সেখানেই। নীলমণি হালদার লেনেই অমিতের বাবা আনন্দচন্দ্র রাউতের একটি চানাচুর ও চিপ্স তৈরির কারখানা রয়েছে। পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি ওই কারখানায় গিয়ে কাজও করতেন অমিত। সেই কারখানায় কাজ করতেন তাঁর দাদা জন্মেজয়ও। |
দুর্ঘটনার পরে সেই কারখানা। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টার সময়ে অমিত কারখানায় গিয়ে চানাচুর-চিপস্ তৈরির যন্ত্রটি চালু করার জন্য সুইচে হাত দিতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছিটকে মাটিতে পড়ে যান। কিন্তু তাঁর হাত সুইচের দেওয়ালেই লেগে ছিল। সারা রাত বৃষ্টিতে দেওয়াল ভিজে থাকায় সেটিও তড়িদায়িত হয়ে ছিল। অমিতের পড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনে কারখানা লাগোয়া ঘর থেকে ছুটে আসেন শীলা রায় নামে এক প্রতিবেশী। তিনি বলেন, “অমিতের গায়েই হাত দিতেই হাতে একটা ঝটকা লাগে। বুঝতে পারি ও বিদুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। ভয় পেয়ে আমি চেঁচাতে শুরু করি।”
তিনি জানান, খবর পেয়ে জন্মেজয় কারখানায় এসে একটি মেন সুইচ বন্ধ করে দেন। কিন্তু তার পরেই অমিতকে ধরতে গেলে মুহূর্তের মধ্যে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
অন্য একটি চিপস্ কারখানার শ্রমিক শেখ আলম বলেন, “আসলে একই জায়গায় অনেকগুলি মেন সুইচ রয়েছে। কিন্তু কোনটি কোন ঘরের সঙ্গে যুক্ত, তা কেউ জানে না। জন্মেজয় ভুল সুইচ বন্ধ করায় ভেজা দেওয়াল তড়িদায়িত অবস্থাতেই ছিল।” জন্মেজয়েরও একই অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকেরা সমস্ত মেন সুইচ বন্ধ করে দেন। পরে দুই ভাইকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ঘুপচি ঘরের মধ্যেই রয়েছে একাধিক চিপ্স ও চানাচুর তৈরির কারখানা। ঘটনার পরে কারখানাগুলির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন উমাদাস লেনে অমিতের বাড়িতে গেলে তাঁর দাদা আশিস রাউত বলেন, “পড়াশোনার পাশাপাশি ভাই কারখানাতেও কাজে সাহায্য করত। কয়েক বছর আগে জন্মেজয় কটক থেকে এসে আমাদের সঙ্গে থাকত এবং কারখানায় কাজও করত।” |