এ বার থেকে নিজস্ব বাসস্থানে ছোটখাটো রদবদল করার জন্য পুরসভার অনুমতি প্রয়োজন হবে না। তবে সে বাড়ি নিয়ে আইনি কোনও জটিলতা থাকলে চলবে না। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুর-প্রশাসন ও পুলিশের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে শহরের অনেক বাসিন্দা উপকৃত হবেন বলে মনে করছে পুর-প্রশাসন।
বর্তমান পুর-আইন অনুযায়ী, কোনও বাড়িতে বাড়তি একটি বাথরুম বা রান্নাঘর করতে হলেও পুরসভার অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। ছাদে অ্যাসবেসটসের ছাউনি করতে হলেও ছুটতে হয় পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে। তার পরে অনুমতি দেওয়া নিয়ে চলে টালবাহানা। পুর-অন্দরমহলের খবর এবং সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা, সামান্য ওই কাঠামো বানানোর জন্যও কাউন্সিলর থেকে শুরু করে পুলিশ ও পুর-অফিসারদের ‘সন্তুষ্ট’ করতে হয়। কারণ, বর্তমান বিধিতে অনুমতি না নিয়ে ওই ধরনের নির্মাণ পুরোপুরি বেআইনি হিসেবে গণ্য হয়। এমনকী, সেই নির্মাণ ভেঙেও দিতে পারে পুরসভা। অর্থাৎ, এই আইনের জেরে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরবাসীকে।
মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটখাটো কাঠামো বদলে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ও দফতরে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে ওই সব অভিযোগপত্র মহাকরণ থেকে সরাসরি পাঠানো হয়েছে পুরসভায়। তাতেও এই সমস্যার তেমন কোনও সুরাহা হয়নি। এ নিয়ে পুর-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই ওই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তৎপর হন তিনি। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শহরবাসীকে অযথা হয়রানির হাত থেকে রেহাই দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যত দ্রুত সম্ভব তা কার্যকর করার জন্য পুর-প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে পুর-আইনের কিছু পরিবর্তন জরুরি বলে জানালেন বিল্ডিং দফতরের একাধিক অফিসার।
এ দিন মহাকরণে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ-সহ বিভাগীয় ডেপুটি কমিশনারদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা। মেয়র শোভনবাবু বলেন, “পরিবারের সদস্য-সংখ্যা বেড়ে গেলে অনেককেই নিজের বাড়িতে একটি ঘর বা একটি বাথরুম করার দরকার হয়ে পড়ে। কখনও অতিরিক্ত একটি জানলা বা দরজা বাড়াতে হয়। এ বার থেকে তার জন্য পুরসভার অনুমতি যাতে না নিতে হয়, সে কথা খেয়াল রেখে নতুন নীতি হচ্ছে। শীঘ্রই সেই মতো বিধি তৈরি হবে।”
পুরসভার এক অফিসার জানান, পুর-আইনের ৮২ ধারায় বলা হয়েছে ছোটখাটো কাঠামো বদলে পুর-প্রশাসনের অনুমতির দরকার। অনুমতি না নিয়ে নির্মাণকাজ করলে পুর-আইনের ৪০১ ধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কাজ বন্ধ করার নোটিস দেওয়া হয়। পরে ওই ব্যক্তিকে পুরসভায় শুনানির জন্য ডেকে পাঠানো হয়। শুনানিতেও কাজ না হলে পুর-আইনের ৪০০(১) ধারায় ওই নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। তখন পুরসভা পুলিশের সাহায্য দিয়ে সেটা ভেঙে দেয়। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর নেওয়া ওই সিদ্ধান্তের পরে অনেকটাই স্বস্তি মিলবে বলে আশা শহরবাসীর। |