দিন কয়েক আগে একই রাতে জানলার শিক কেটে পরপর তিনটি আবাসনের তিনটি ফ্ল্যাটে চুরি হয়েছিল। এ বার ওই আবাসন তিনটির পাশেই আর একটি আবাসনের কেয়ারটেকারকে বেঁধে ডাকাতির ঘটনা ঘটলা। সোমবার ভোরে বাগুইআটির জরদাবাগান এলাকার বিদ্যাসাগর পল্লিতে পরপর চুরি-ডাকাতির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এলাকায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। শুধু ডাকাতিই নয় সোমবার ভোরে ওই আবাসনের পিছনে একটি কালীমন্দিরেও কয়েক ভরি গয়না ও ক্যাশবাক্সের টাকা চুরি হয়।
অভিযোগ, বাঙালি সাউ নামে ওই আবাসনের কেয়ারটেকারকে প্রথমে বন্দুক ও ভোজালি দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ডাকাতদল। তার পরে ওই কেয়ারটেকারকে নিবেদিতা দে নামে এক আবাসিকের ফ্ল্যাটে নিয়ে বেঁধে ডাকাতি করে। পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কয়েক ভরি সোনা, নগদ ২৫ হাজার টাকা, কম্পিউটারের মনিটর, ক্যামেরা ও দামি জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। |
লুঠপাটের পর।— নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারের ঘটনাটি ঘটে ভোর পাঁচটা নাগাদ। বাগুইআটির জরদাবাগানের বিদ্যাসাগর পল্লির ওই আবাসনে ফ্ল্যাট কিনে এসেছেন নিবেদিতা দে। তিনি অবশ্য ওই ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন না। থাকেন ওই আবসনের কাছেই অন্য একটি বাড়িতে। নিবেদিতাদেবীর ছেলে সৌমিত্র পড়াশোনার সূত্রে দিল্লিতে থাকে। এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ নিবেদিতাদেবীর পড়শিরা তাঁকে ফোন করে ডাকাতির খবর দেন। নিবেদিতাদেবী নিজের ফ্ল্যাটে এসে দেখেন ঘর লণ্ডভণ্ড। আলমারি ভাঙা। আলমারির ভিতর থেকে টাকা-পয়সা, সোনার গয়না উধাও। নিবেদিতাদেবী বলেন, “আমার স্বামীর শখ ছিল বহু পুরনো সব দুষ্প্রাপ্য মুদ্রা সংগ্রহ করা। ওই মুদ্রা ভর্তি বাক্সও নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।”
পুলিশ জানিয়েছে, ওই কেয়ারটেকার থাকেন আবাসনেরই পাঁচতলায়। এ দিন ভোরে বাঙালি পাঁচতলা থেকে একতলায় নেমে কোল্যাপসিব্ল গেট খুলতেই পাশ থেকে দু’জন দুষ্কৃতী তাকে চেপে ধরে। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাকে দোতলায় নিয়ে যায়। বাঙালি বলেন, “ওরা আমাকে ভোজালি আর বন্দুক দেখিয়ে দোতলায় নিয়ে গিয়ে নিবেদিতাদেবীর ঘরের কোল্যাপসিব্ল গেটের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে। আমাকেও ওরা ঘরে ঢুকিয়ে আমার হাত পা বেধে দেয়।”
ওই আবাসনেরই তিনতলার বাসিন্দা সোনালি ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলতে নেমে দেখেন ওই কেয়ারটেকারের স্ত্রী তাঁর স্বামীর খোঁজ করছেন। সোনালিদেবী বলেন, “দোতলায় উঠে দেখি, নিবেদিতাদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। ভিতরে গিয়ে দেখি ওঁদের ঘর লণ্ডভণ্ড। কেয়ারটেকারকে বেঁধে রাখা হয়েছে।” এ দিকে, দোতলা ও একতলার সব ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যায় দুষ্কৃতীরা।
পাশের আবাসনের এক বাসিন্দা শিবপদ চক্রবর্তী বলেন, “ফ্ল্যাট ফাঁকা থাকলেই চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। চলতি মাসের তিন তারিখ রাত তিনটে নাগাদ বাড়িতে চুরি হয়। কোনও কিনারা হয়নি। কী ভরসায় এলাকায় থাকব?” ঘটনাস্থলে এলাকার কাউন্সিলর বীরেন বিশ্বাস এলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েন। প্রশ্ন উঠেছে ভোরবেলা এই ঘটনা ঘটলেও আশপাশের আবাসিকেরা কেউ টের পেলেন না কেন? আবাসিকেরা জানিয়েছেন, নতুন ওই আবাসনে এখনও সব ফ্ল্যাটে লোক আসেননি। দোতলাতেই কয়েকটি ফ্ল্যাটে লোক নেই।
বাগুইআটি থানার পুলিশের অবশ্য দাবি, দিন কয়েক আগে এলাকায় যে তিনটি বাড়িতে চুরি হয়, তার কিনারা হয়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীরা ধরা পড়লেও টাকা-পয়সা বা গয়নাগাঁটি অবশ্য পাওয়া যায়নি। বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কয়েকটি সূত্র পাওয়া গিয়েছে। এলাকায় প্রতি রাতেই পুলিশের টহলদারি থাকে। এই টহলদারি আরও বাড়ানো হবে।” |