তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষ খুনে অভিযুক্তদের দ্রুত ধরতে এবং নিরাপত্তা চেয়ে বীরভূমের নতুন পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেন তাঁর পরিবার। সোমবার সিউড়িতে জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে কাকা দীপক ঘোষের জন্য নিরাপত্তারক্ষীর আবেদন করেন অশোকবাবুর ছেলে বিশ্বজিৎ ঘোষ। একই দিনে অশোকবাবুর দুই ছেলেমেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দিতে চান জানিয়ে দুবরাজপুর আদালতে আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী অফিসার। বীরভূমের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “অশোকবাবুর পরিবারের কয়েক জন এসেছিলেন। ওঁদের আবেদন পেয়েছি। সবদিক বিবেচনা করা হচ্ছে।”
এ দিকে সাত দিন কেটে গেলেও খয়রাশোলের ওই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূলেরই ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়কে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি বীরভূম পুলিশ। অভিযোগ, তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি খুনের ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হলেও কার্যত কোনও হেলদোলই দেখা যাচ্ছে না পুলিশের মধ্যে। নিহতের পরিবারের দায়ের করা এফআইআর-এ নাম থাকা ১২ জনের মধ্যে মাত্র চার জনকেই (নাম না থাকলেও পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্য এক জনকেও ধরেছে) গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। বিরোধীদের দাবি, রাজ্য নেতৃত্বের সুনজরে থাকা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হওয়ার কারণেই পুলিশ এখনও চুপ। সিপিএমের এক জেলা স্তরের নেতার মন্তব্য, “এই সরকারের আমলে রাজ্যে শাসক দলের কোনও নেতা খুন হয়েছেন, অথচ পুলিশ মূল অভিযুক্তকে সাত দিনেও গ্রেফতার করেনি। এমন ঘটনা তো খুব একটা ঘটতে দেখা যায়নি। আসলে অশোক মুখোপাধ্যায় অনুব্রতর প্রশ্রয়ে রয়েছেন বলেই পুলিশের হাত তার কাছে পৌঁছচ্ছে না!”
পুলিশ অভিযুক্তদের একটা বড় অংশকেই এখনও গ্রেফতার করতে না পারার বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন নিহতের পরিবারও। অপরাধীরা এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। ফলে দাদার (অশোক ঘোষ) মৃত্যুর পরে দলে তাঁর দায়িত্ব যিনি পালন করছেন, সেই দীপক ঘোষও (নিহতের ভাই) নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তাঁরা মনে করছেন, এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠার কারণেই তাঁর বিরোধীরা অশোকবাবুকে খুন করল। এরপরে তাঁর হয়ে যাঁরাই কাজ করা শুরু করবেন, তাঁরাও ওই সব অপরাধীদের ‘টার্গেট’ হয়ে পড়বেন বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। বিশ্বজিৎ বলেন, “পুলিশ এখনও অনেককেই ধরতে পারেনি। তাই এসপি-র সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। তারই সঙ্গে কাকুর জন্য নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে আবেদন করেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।” আবেদন করলেও সরকারি আইনজীবী মণিলাল দে জানিয়েছেন, গোপন জবানবন্দির তারিখ আদালত এখনও নির্দিষ্ট করেনি।
|