|
|
|
|
|
|
 |
বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস উপলক্ষে প্রদর্শনী |
উজ্জ্বল মুহূর্ত |
কোনও এক সভায় একটি বিশেষ মুহূর্তে উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেন। ‘বালিকা বধূ’র শ্যুটিংয়ে তরুণ তরুণ মজুমদার। নিজের বাড়িতে গৌতমের স্নেহশীল পিতার ভূমিকায় উত্তমকুমার, পাশে গৌরী দেবী। ক্যামেরায় লুকথ্রু করার আগে মজার এক মুহূর্তে হা হা করে হাসছেন সত্যজিৎ রায়! সিনেমা জগতের এমনই সব উজ্জ্বল মুহূর্ত সাদা-কালোয় ধরে রেখেছিলেন সুকুমার রায়। তেমন ‘সেলিব্রিটি’ আলোকচিত্রী নন, কিন্তু কাজের নিষ্ঠা আর ছবি তোলার দক্ষতার জন্য আজও তাঁকে মনে রেখেছেন অনেকেই। তপন সিংহের ‘সফেদ হাতি’ থেকে সবক’টি সিনেমার স্থিরচিত্রের কাজ করেছিলেন তিনি, সেই সূত্রে তপন সিংহের আলোকচিত্রী হিসেবেই অনেকে চেনেন তাঁকে। “আমি কিন্তু সফেদ হাতি-র আগেও তপনবাবুর সঙ্গে কাজ করেছি, ‘জতুগৃহ’ ছবিতে। কিন্তু তখন ছিল হাত-পাকানোর কাল,” বলছেন সুকুমার। কবে থেকে শুরু ক্যামেরায় সিনেমার ছবি তোলা? “১৯৬০-এ ফ্রিলান্স সাংবাদিকতা দিয়ে আমার ছবি তোলা শুরু। তখন অমৃত-র মতো সাহিত্য-পত্রিকার জন্য যেমন কাজ করতাম তেমনই জলসা, সিনেমা জগৎ-এর মতো সিনেমা-পত্রিকার জন্যও। কুমোরটুলি থেকে সিনেমার শুভ মহরৎ সব কিছুই তখন তুলতে হত। তার পরে ধীরে ধীরে সিনেমার জগতেই পুরোপুরি ঢুকে পড়ি।” আর সে ভাবেই সুকুমার রায়ের ক্যামেরায় ধরা পড়েছেন সত্যজিৎ রায়, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, অপর্ণা সেন, কিশোরকুমার, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, মাধবী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সে সব নিয়ে প্রদর্শনী বড় একটা হয়নি এ শহরে। |
 |
এ বার ১৯ অগস্ট বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস উপলক্ষে ২২ অগস্ট থেকে তিন দিন গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় দেখা যাবে তেমনই ১৫টি ছবি। প্রদর্শনীর মোট ৫০টি ছবির মধ্যে সুকুমারের সবক’টি ছবিই সিনেমা জগতের। এ ছাড়াও থাকছে অমল কুণ্ডু, স্বরূপ দত্ত প্রমুখের তোলা ছবি। ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে স্টিল ফোটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত প্রদর্শনীটির সূচনা করবেন তরুণ মজুমদার। থাকবেন গৌতম ঘোষ। সঙ্গের ছবিতে সুকুমারের ক্যামেরায় ‘সতী’ ছবির আউটডোরে জয়রামবাটির কাছে একটি গ্রামে অপর্ণা সেন ও ছোট্ট কঙ্কনা। উত্তমকুমারের ছবিটি সুন্দরবনে শক্তি সামন্তের ‘অমানুষ’-এর সময় তোলা।
|
চার্নকের সঙ্গে চা |
 |
মহামান্য আদালতের নির্দেশে কলকাতার এখন আর কোনও জন্মদিন নেই, শহরের প্রতিষ্ঠাতার গৌরব থেকেও জোব চার্নক অপসৃত। তবু ২৪ অগস্ট সেন্ট জন্স চার্চের সমাধিতে শুয়ে হয়তো দীর্ঘশ্বাস ফেলেন চার্নক, অন্তত এই দিনটায় তিনি যে সুতানুটির ঘাটে নেমেছিলেন সে কথাও কি কলকাতা ভুলে যাবে? না, সবাই ভোলেনি। শনিবার ২৪ অগস্ট বিকেল চারটেয় সেন্ট জন্স চার্চেই অনুষ্ঠান ‘টি উইথ জোব চার্নক’। জন জোফানির আঁকা ‘লাস্ট সাপার’ ছবিটির পর এই চার্চের ষোলোটি চিত্র সংস্কারের কাজও শেষ (সঙ্গে তারই একটি), জানালেন এ কাজের ভারপ্রাপ্ত সংস্থা ইনটাকের তরফে জি এম কপূর। সে দিন চার্চের ভেস্ট্রি রুম-এ উন্মোচিত হবে ছবিগুলি। থাকবেন কলকাতার বিশপ রেভারেন্ড অশোক বিশ্বাস, চার্নকের কলকাতার বিবর্তন নিয়ে বলবেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। সেন্ট জনস চার্চের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ ইনটাক ও চৌরঙ্গি রোটারি ইন্টারন্যাশনালের।
|
আশ্চর্য ভ্রমণ |
সময় জিনিসটা আসলে কী? নাহ্, বিজ্ঞানীরা এখনও সঠিক উত্তর পাননি প্রশ্নটার। তাই খুঁজে চলেছেন ব্রহ্মাণ্ডে ‘টাইম’ নামক প্রহেলিকার সমাধান। সেই খোঁজ উপহার দিচ্ছে নতুন নতুন ধারণা। যার একটি হল, এই ব্রহ্মাণ্ড একমেবাদ্বিতীয়ম নয়, বার বার জন্মাচ্ছে একাধিক বিশ্ব। জন্মাচ্ছে ‘ব্ল্যাক হোল’ নামে মহাকাশের জঠর থেকে। প্রেসিডেন্সি-র বেকার হলে ১৪ অগস্ট এক বক্তৃতায় সময় ধাঁধা বিষয়ে এমন অনেক তথ্য পরিবেশন করলেন হোমি ভাবা অধ্যাপক বিকাশ সিংহ। বক্তৃতার শিরোনাম ‘টাইম, স্পেস অ্যান্ড সিংগুলার ইউনিভার্স’। আয়োজক প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সমিতি। ড. শিশির মজুমদার স্মারক বক্তৃতায় বিকাশ পেশ করলেন বিজ্ঞানের দীর্ঘ ইতিহাস। বিশ্ববিজ্ঞানের পাশাপাশি ভারতীয় গবেষকদের অবদানও। পরমাণু সম্পর্কে ভারতীয় চিন্তাবিদরা কী ভেবেছিলেন? জ্যোতির্বিজ্ঞানে একদা কতখানি এগিয়েছিলাম আমরা? জগদীশচন্দ্রের বেতার গবেষণা ছিল কেমন? নিজেদের নামাঙ্কিত কণা বা ফর্মুলায় কী ভাবে পৌঁছেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ কিংবা মেঘনাদ? সব ঠাঁই পেয়েছিল বিকাশের আলোচনায়। মনে হচ্ছিল যেন সময়-যানে চড়ে বিজ্ঞানের ভুবনে আশ্চর্য ভ্রমণ!
|
সংস্কৃতিমনস্ক |
পুরনো পাবলিক লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ১৯৪৭-পূর্ব যাবতীয় পত্রপত্রিকা ও বই ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণের জন্য অনেক দিন ধরেই কাজ করছে রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশন। সঙ্গে থাকছে বিশ্বভারতী রবীন্দ্রভবনের মতো নানা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত নথিপত্রের ডিজিটাল কপিও। ডিজিটাইজ করার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে, আগামী দুই বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ লাইব্রেরিটি তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করলেন ফাউন্ডেশনের ডিজি কিশোরকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সবের জন্যই বিধাননগরে ফাউন্ডেশন ভবনের পাঁচ তলায় তৈরি হবে বিশেষ লাইব্রেরি। এটির নির্মাণে ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্যসভা সংসদ বরুণ মুখোপাধ্যায়ের সাংসদ তহবিল থেকে ১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই একই তহবিল থেকে গীতাঞ্জলি-র শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের ‘গীতাঞ্জলি সেন্টিনারি হল’ তৈরির জন্য ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অন্য দিকে বিধাননগরে নাট্য শোধ সংস্থান ভবনটির পাঁচতলা তৈরির জন্যও বরাদ্দ হয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা। সংস্কৃতিমনস্ক এই সাংসদের উদ্যোগে উপকৃত হল এ রাজ্যের বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠান।
|
ইলমাজ গুনে-র ছবি |
কমবয়সিদের কারাজীবন নিয়ে ‘ওয়াল’ তৈরির সময় প্রায় ফুরিয়ে আসছে গুনে’র আয়ু। ইতিমধ্যেই ’৮২তে ‘দ্য রোড’-এর জন্যে কান ফেস্টিভ্যালে সেরা-র সম্মান জুটেছে তাঁর, অথচ ’৮১ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজের দেশ তুরস্ক আর তার সামরিক শাসন থেকে, সেখানে ‘ওয়াল’ নিষিদ্ধ ছিল ১৭ বছর। ’৬১ থেকে গুনে-র জেলজীবনের শুরু, অভিযোগ তাঁর লেখালেখি নাকি সরকার-বিরোধী, অন্তর্ঘাতমূলক। ষাটের মাঝামাঝি বা সত্তর দশক থেকে তাঁর ছবি করা শুরু। ’৮৪তে প্যারিসে মারা যান ইলমাজ গুনে। গত শতকে এই অবিস্মরণীয় শিল্পীর রেট্রো হয়েছিল কলকাতায়, ’৮২-তে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রোৎসবে। তিরিশ বছর পর তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ছবিগুলি এক সঙ্গে দেখা যাবে নন্দন-এ। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর উদ্যোগে, সঙ্গে কলকাতার টার্কিশ কনসুলেট। আজ সন্ধে ৬টায় সূচনা, বলবেন অশোক বিশ্বনাথন। চলবে ২১ অবধি।
|
সাত নকলে |
কুপন, টোকেন বা ডিউ স্লিপ যে নামেই ডাকো, আসলে তা অর্থের রসিদ। খুচরো সমস্যার অজুহাতে যা মাস দুই চালু হয়েছে কলকাতার বাসে বাসে। একটি স্লিপ চলবে নির্দিষ্ট কয়েকটি রুটের বাসে। তা নিয়েই নিত্য বচসা কন্ডাক্টর বনাম যাত্রীর। অথচ ব্যাঙ্কের দাবি, প্রতি দিন প্রচুর খুচরো দেওয়া হচ্ছে। তা হলে সে সব যাচ্ছে কোথায়? এ দিকে নাকি পাতলা কাগজের ডিউ স্লিপও জাল হচ্ছে। সম্প্রতি এ জন্য একটি রুটের বাসে দেখা গেল হলোগ্রাফি স্টিকার লাগানো স্লিপ, যা নকল করা খরচসাপেক্ষ। সব দেখেশুনে এক বাসযাত্রীর মন্তব্য, ‘এ বার কুপনের বদলে মেট্রোর মতো টোকেন চালু করুন দাদা’, কন্ডাক্টর নিরুত্তর।
|
মেলবন্ধন |
নতুন প্রজন্মের কাছে ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সেনসোরিয়াম-এর জন্ম ২০০৮-এ। চিত্রকলা-ভাস্কর্য’র পাশাপাশি এদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে বাংলা সিনেমার ঐতিহ্য নিয়েও কাজ। ইচ্ছে আছে, পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভ করার বলছিলেন কর্ণধার শৌনক চক্রবর্তী। উইভার্স স্টুডিয়োর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ১৬ অগস্ট থেকে শুরু হয়েছে চিত্র-ভাস্কর্য প্রদর্শনী, বালিগঞ্জের গ্যালারিতে। পুরনোদের সঙ্গে নতুনের মেলবন্ধন এবং প্রবাসী শিল্পীদের কাজের সঙ্গে এখানকার শিল্পীদের পরিচয় ঘটাতেই এর আয়োজন। ৩৫ জন শিল্পীর কাজ প্রদর্শিত হয়েছে এতে। চলবে ২১ অগস্ট (১১-৭টা) পর্যন্ত।
|
মহাজাতি সদন ৭৫ |
 |
তিরিশের দশকের শেষ দিকে ভবানীপুরে সুভাষচন্দ্র বসুর বাড়িতে একটি সভায় স্থির হয়, কলকাতায় তৈরি হবে বড় একটি সম্মেলন-গৃহ। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে কলকাতা পুরসভার ৩৮ কাঠা জমিতে গড়ে উঠল মহাজাতি সদন। শিল্পী সুরেন্দ্রনাথ কর এর নকশা করেন। ১৯৩৯-এর ১৯ অগস্ট সুভাষচন্দ্র বসুকে পাশে বসিয়ে এর শিলান্যাস করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৫৮-র ১৯ অগস্ট বিধানচন্দ্র রায় এটি উদ্বোধন করেন (সঙ্গে সে দিনের ছবি)। জাতীয় নেতাদের তৈলচিত্রের গ্যালারি, নানা স্থায়ী প্রদর্শনী ও মূল্যবান গ্রন্থাগার এটির সম্পদ। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই ঐতিহাসিক ভবনের সংস্কার ও আধুনিকীকরণে উদ্যোগী হয়েছেন। নতুন সংস্করণ হচ্ছে মৃত্যুঞ্জয়ী বইটির, জানালেন অছিপরিষদের সচিব নুরুল হুদা। এ বছর ৭৫-এ পা দিল মহাজাতি সদন। আজ বিকেল চারটেয় সদন মঞ্চে প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে পাঁচ জন প্রবীণ বিপ্লবী সংবর্ধিত হবেন। স্মারক বক্তৃতা দেবেন অধ্যাপক সুগত বসু। মঞ্চস্থ হবে শেখর সমাদ্দার পরিচালিত ‘গোরা’। সভাপতি ব্রাত্য বসু।
|
দেবব্রত-স্মরণ |
পেশায় ভূতাত্ত্বিক, কর্মজীবনে সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত চষে বেড়িয়েছেন ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তবে তাঁর আকৈশোর অন্তরের সঙ্গী দেবব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত। সংগ্রহ করেছেন তাঁর অজস্র লং প্লেয়িং রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডি। কিন্তু বিপণনের স্বার্থে ছড়ানো-ছিটনোই সে সব গান, এ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে অপরিসীম নিষ্ঠায় দেবব্রতর গাওয়া সমস্ত গান এক আধারে, এক আকর ডিস্ক-এ গুছিয়ে তুলেছেন সিদ্ধার্থ। রবীন্দ্রসঙ্গীতের এই অভিনব সম্ভার কোনও বাণিজ্যিকরণের অভিপ্রায়ে নয়, সম্পূর্ণতই দেবব্রত-প্রেমী গানপাগল মানুষের জন্যে। এমন এক প্রয়াসে দেবব্রতর ১০৩তম জন্মদিনে অভিনন্দনই প্রাপ্য সিদ্ধার্থর। অন্য দিকে প্রতি বছরের মতো এ বারেও ২৩ অগস্ট রবীন্দ্রসদনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দেবব্রতর জন্মদিন পালন করতে চলেছে দেবব্রত বিশ্বাস একাডেমি। কথায় ও গানে থাকবেন শ্রীকান্ত আচার্য, রাজেশ্বর ভট্টাচার্য, বিভা সেনগুপ্ত, স্বপন গুপ্ত, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রাবণী সেন, লাবণী লাহিড়ী, ব্রততী-সুতপা-রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, আরও অনেকে। প্রকাশ পাবে একটি সিডি, ‘অজানা দেবব্রত’কে নিয়ে।
|
আনন্দে |
এক বছর হল সরকারি অফিস থেকে অবসর নিয়েছেন। এখনও বিভিন্ন নাটক ও আবৃত্তির অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যায়। স্বশিক্ষিত এই মানুষটি কখনও কোথাও প্রথাগত প্রশিক্ষণ নেননি। নিজের আবৃত্তি শিক্ষার স্কুল নিয়েই এখন অবসরযাপন। ছোটবেলায় বাবাকে হারান, তাঁর কোলে বসেই প্রথম কবিতা বলতে শেখা। মায়ের অফুরন্ত উৎসাহ ও পরে শ্বশুরমশাইয়ের উৎসাহে, স্বামীর সাহচর্যে বিজয়লক্ষ্মী বর্মন এখন এই জায়গায়। এখনও পরিশ্রম করতে পিছপা হন না। এত দিনেও কোনও আবৃত্তির সংকলন ছিল না বলে একটা দুঃখ ছিল। সেই দুঃখও সম্প্রতি কাটানো গেল ‘ভাবনা রেকর্ডস অ্যান্ড ক্যাসেটস’-এর উদ্যোগে, এই বাইশে শ্রাবণ বিজয়লক্ষ্মী আমাদের উপহার দিলেন রবীন্দ্রনাথের অনেকগুলি কবিতার কোলাজ: ‘আনন্দে’। ‘‘আনন্দ-ই তো রবীন্দ্রনাথের কাব্যভাবনার অন্যতম উৎস ও সংস্থাপক, সারা জীবন ধরে তাঁর দীর্ঘ কাব্যজীবনের ভিতর বদলে-বদলে গিয়েছে তাঁর এই আনন্দ-এর ধারণা। তাই ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ থেকে শুরু করে মৃত্যুর কিছু আগে ‘প্রথম দিনের সূর্য’-এ শেষ করেছি আমার পরিক্রমা।’’ বিজয়লক্ষ্মী বর্মনের কণ্ঠে উল্লেখিত কবিতা দু’টি-সহ ‘বসন্ত আওল রে’, ‘ঝুলন’, ‘শঙ্খ’, ‘পথের বাঁধন’ বা এ রকম আরও নানা রবীন্দ্রকবিতা শোনার এ এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা, বহু দিন পর।
|
|
|
|
|
বিপ্লবী |
চট্টগ্রামের নানা প্রান্তে তখন মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চলছে সশস্ত্র আন্দোলন। ১৯৩১-এর সেপ্টেম্বরে মাস্টারদা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্তকে ‘চট্টগ্রাম ইয়োরোপিয়ান ক্লাব’ উড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁর আগেই ধরা পড়ে গেলেন কল্পনা।
চট্টগ্রামের শ্রীপুর গ্রামে ১৯১৩-এর ২৭ জুলাই কল্পনা দত্তের জন্ম। বাবা বিনোদবিহারী ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরে, পিতামহ রায়বাহাদুর দুর্গাদাস। মেধাবী কল্পনা অঙ্ক ও সংস্কৃতে লেটার সহ ম্যাট্রিকে চতুর্থ স্থান পেয়ে কলকাতার বেথুন কলেজে আই এসসি-তে ভর্তি হন। ছুটিতে বাড়িতে ফিরে বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ড শুনে জড়িয়ে পড়লেন দেশকে স্বাধীন করার ব্রতে। মাস্টারদা তাঁকে বন্দি বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব দিলেন। কল্পনা ছদ্মবেশে এ কাজ করতেন। ১৯৩৩-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে এক সংঘর্ষে মাস্টারদার সঙ্গী ছিলেন তিনি। পরে ধরা পড়েন, দ্বীপান্তরের আদেশ হয়। শেষে সাজা কমে হয় কারাবাস। গাঁধীজির মধ্যস্থতায় ১৯৩৮-এ মুক্তি পান। যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে এবং বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক হন। কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক পি সি জোশিকে বিয়ে করেন। নারী আন্দোলনে কল্পনার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়ার মৈত্রী সংগঠনে তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব রাশিয়ান ল্যাঙ্গোয়েজের সম্পাদক। চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান তাঁর স্মরণীয় বই। ১৯৯৫-এ কলকাতায় ৮২ বছরে প্রয়াত হন। ২০১০-এ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন নিয়ে নির্মিত হিন্দি ছবিতে তাঁর ভূমিকায় অভিনয় করেন দীপিকা পাড়ুকোন। সম্প্রতি রাসবিহারীর ‘অ্যানন ক্লাব’-এ উদ্যাপিত হল কল্পনা দত্তের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান। |
|
|
|
 |
|
|