কোচবিহার ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের চাহিদার কথা মাথায় রেখে চালু হল নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়। পুন্ডিবাড়িতে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের একটি হলে ক্লাসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রী জানান, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরই কোচবিহারে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১২ সালে বিধানসভায় বিল আনা হয়। তিনি বলেন, “এক বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করাতে পারায় আমরা গর্বিত। সারা ভারতে এই বিশ্ববিদ্যালয় এক বেনজির কৃতিত্ব স্থাপন করবে বলে আমি আশা রাখি।” |
আপাতত ৮ টি বিষয় বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, হিন্দি, সংস্কৃত, প্রাণীবিদ্যা পড়ানো হচ্ছে।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “আমরা খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত কোচবিহারে মনীষি পঞ্চানন বর্মার নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পেরে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ভবনের কাজ শুরু করা হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো তৈরি করেছেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। তিনিও এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পুন্ডিবাড়িতে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল ভবনে অস্থায়ী ভাবে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, শীঘ্রই পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অঙ্ক, অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ে পড়ানো হবে। এ ছাড়া স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষার বিষয়ও চালু করা হবে। তিনি আরও জানান, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বেতন বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়কে ৫২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ কার হয়েছে। অন্যান্য খরচের জন্য অতিরিক্ত আরও ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আসবাব পত্র বই এর জন্য ১ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিবেকানন্দ স্ট্রিটে জেলা বীজ খামারের জমিতে স্থায়ী ভবনের জন্য ১৯ কোটি ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে সংস্কৃত ও প্রাণীবিদ্যা পড়ানো হবে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজে। হিন্দি, সংস্কৃত ও প্রাণীবিদ্যায় ২০ জন করে ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয়েছে। বাকি বিষয়গুলিকে ৪০ জন করে ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয়েছে।
কোচবিহার শহরের বাসিন্দা গবেষক নৃপেন পাল বলেন, “জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন খুবই খুশির খবর। আমরা সকলেই আনন্দিত। জেলা সহ আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রছাত্রীরা এবারে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন বলে আশা করছি।” পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন যাতে দ্রুত হয় সে ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি শিক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে আর্জি জানিয়েছেন ফালাকাটা কলেজের শিক্ষক রঞ্জন কর্মকার। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় মন খুব আনন্দিত। সমস্ত বিতর্ক উহ্য রেখে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি চাই। কারিগরি শিক্ষার বিষয়টি দেখা উচিত।” ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইন্দ্রজিৎ রায়, বিধায়ক ও পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বনমন্ত্রী হিতেন বমর্ন। উপাচার্য বলেন, “পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। সমস্ত কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে।” এ দিন ১০ জন ছাত্রছাত্রীর হাতে পরিচয় পত্র তুলে দেব শিক্ষামন্ত্রী ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। |