যৌথ মঞ্চে ধরল চিড়, শরিকদের আক্রমণে অস্বস্তিতে গুরুঙ্গরা
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ের আটটি দল নিয়ে সবে শুক্রবার যৌথ মঞ্চ গড়েন বিমল গুরুঙ্গরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিড় ধরল সেই ঐক্যে। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ শনিবার জানিয়ে দিল, জিটিএ না ছাড়লে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পাশে নেই তারা। পাহাড়ের আর এক দল সিপিআরএম-এর প্রতিনিধিও জানান, অনির্দিষ্টকালের বন্ধে তাঁদের সমর্থন নেই। ফলে এ দিন শরিকদের চাপে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন মোর্চা নেতারা। এমনকী, আলোচনার রাস্তা খোলার ব্যাপারে যাঁদের উপরে তাঁরা ভরসা করছেন, সেই কেন্দ্র বা রাজ্যপাল, কোনও তরফেই এখনও আমন্ত্রণ মেলেনি। রাজ্যপাল জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কাউকে ডাকবেন না। কেউ নিজে থেকে এলে কথা বলবেন।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রতি নিজেদের ক্ষোভ বোঝাতে বিধানসভায় ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মোর্চা নেতৃত্ব। বিধানসভায় এত দিন সরকার পক্ষের সঙ্গেই বসতেন মোর্চার তিন বিধায়ক। এ দিন স্পিকারকে চিঠি দিয়ে মোর্চা জানিয়ে দেয়, এ বার থেকে বিরোধী বেঞ্চে বসবেন ওই তিন জন। সে কথা জানিয়েছেন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। মোর্চার কালিম্পঙের বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রীর অভিযোগ, “রাজ্য আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। পাহাড়ে রাজ্যের পুলিশ অত্যাচার চালাচ্ছে। তার প্রতিবাদেই বিরোধী আসনে বসব।” এর জবাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমাদের কাছে দল নয়, রাজ্যের স্বার্থই বড়। মোর্চা শুধুই দলীয় স্বার্থের কথা ভাবছে।”
রসদ সংগ্রহের ভিড়। দার্জিলিঙের চক বাজারে। ছবি: রেজা প্রধান
যৌথ মঞ্চ গঠনের এক দিনের মধ্যে তাতে চিড় ধরাটা যে তাঁদের অস্বস্তিতে ফেলেছে, তা স্বীকার করছেন মোর্চা নেতৃত্ব। গোর্খা লিগ অভিযোগ করেছে, জিটিএ না ছেড়েই গোর্খাল্যান্ড দাবি তুলে আসলে দু’মুখো নীতি নিচ্ছে মোর্চা। তাই যৌথ মঞ্চ থেকে আপাতত সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে তারা। লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি-র বক্তব্য, “রাজ্যের বিরোধিতা করেও গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) না-ছেড়ে মোর্চার অনেক সদস্যই সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন।”
মোর্চার অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে যৌথ মঞ্চের শরিক সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী এ দিন বলেছেন, “পাহাড়ের জনজীবন অচল করে আন্দোলনের চেয়ে অনশনের মতো কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবা দরকার।” বস্তুত, শুক্রবারই যৌথ মঞ্চ গঠনের পরে ‘ঘরে বসে থাকবে জনতা’ স্লোগান তুলে ১৯ থেকে ২৩ অগস্ট কার্যত বন্ধেরই ডাক দিয়েছে মোর্চা। এবং যে বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে গোর্খা লিগ, সিপিআরএমের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। রাতারাতি মত বদলে এখন গোর্খা লিগ এমন অভিযোগ তোলায় এবং সিপিআরএম পাহাড়ের জনজীবন স্বাভাবিক রেখে আন্দোলনের কথা বলায় কিছুটা বিব্রত মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজু প্রধান বলেন, “এ সব নিয়ে একক ভাবে কিছু বলা ঠিক নয়। যৌথ মঞ্চে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” আগামী ২৬ অগস্ট ফের যৌথ মঞ্চের বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে জরুরি ভিত্তিতে আজ, রবিবারও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এর মধ্যে পরিস্থিতির রাশ শক্ত হাতে ধরতে পুরনো মামলায় মোর্চা নেতাদের ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, ১ অগস্ট থেকে এ দিন পর্যন্ত ধৃত মোর্চা নেতা-কর্মীর সংখ্যা ৫৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। যাঁদের মধ্যে ৯ জন জিটিএ সদস্য। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রয়েছেন ১১ জন। ইতিমধ্যেই তিন কোম্পানি সিআরপি পাহাড়ে মোতায়েন রয়েছে। আরও ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন্দ্রের কাছে চেয়েছে রাজ্য।
পাহাড়ে তিন সপ্তাহ ধরে অচলাবস্থা চলছে। স্কুল-কলেজ, অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। উপার্জন বন্ধ থাকায় দিনমজুর, শ্রমিক পরিবার চরম দুর্দশায় পড়েছে। কয়েকশো স্কুলে পড়ুয়ারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে। সামনে পুজোর মরসুম। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাই চাপ বাড়াচ্ছে প্রশাসন। এর সঙ্গে এ দিন শরিকদের চাপও যোগ হওয়ায় এখন আলোচনার রাস্তা খুঁজছে মোর্চা। তাই রাজ্যপালের তরফে ডাক পেলে আলোচনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা ফের জানিয়েছেন মোর্চা নেতারা। শনিবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন অবশ্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমি কাউকে আলোচনার জন্য ডাকব না। তবে, যে কেউ ইচ্ছে করলে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।”
মোর্চার আর এক আশা কেন্দ্র। রোশন গিরি এ দিনও বলেন, “অতীতে পাহাড় সমস্যা মেটাতে কেন্দ্র উদ্যোগী হয়েছে। এ বারও তারা হস্তক্ষেপ করুক। আমরা আলোচনায় বসতে রাজি।”
কিন্তু রাজ্যকে এড়িয়ে কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ করবে না বলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সম্প্রতি চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে, আলোচনার রাস্তা কী ভাবে খোলে, সেটাই এখন পাহাড়ে কোটি টাকার প্রশ্ন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.