ঘুরপথে ফের ৫ দিন পাহাড় অচলের ডাক
বাহাত্তর ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাইকোর্ট জানিয়েছিল, বন্ধ বেআইনি। জনতা কার্ফুর জন্য তিরস্কারও করেছিল মোর্চা নেতৃত্বকে। তবু পাহাড় অচল করার রাস্তা থেকে আপাতত সরছেন না বিমল গুরুঙ্গ। শুক্রবার পাহাড়ের ৮টি দলকে নিয়ে যৌথ মঞ্চ গড়ে ফের টানা ৫ দিন সব কার্যত বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন তিনি। যাকে প্রকারান্তরে রাজ্য সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে প্রশাসনের এক অংশ। আর আদালতের কোপ থেকে বাঁচতে ‘জনতা কার্ফু’ শব্দবন্ধটি এড়িয়ে এই নতুন আন্দোলনের নাম দিলেন ‘ঘর ভিতরো মানসি’ (যে নেপালি শব্দবন্ধের বাংলা ‘ঘরে বসে থাকবে জনতা’)।
শুক্রবার সকাল থেকে দার্জিলিং জিমখানা ক্লাবে মোর্চা-সহ পাহাড়ের ৮টি দলের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়। কমিটির তরফে জানানো হয়, তেলঙ্গানা গঠনে যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নিয়েছে, তার প্রেক্ষাপটেই আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবগঠিত ‘গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। কমিটির চেয়ারম্যান আনোস দাস প্রধান বলেন, “আমরা কোনও ফতোয়া দিচ্ছি না। আগে দু’দিন জনতা-কার্ফু’তে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছেন। আমরা বুঝেছি, এটা পাহাড়ের মানুষের মনের কথা। তাই ৫ দিন ‘ঘরে বসে থাকবে জনতা’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হল।” এর পরেই আনোস তোলেন রাজ্যপালের প্রসঙ্গ। সম্প্রতি এম কে নারায়ণন পাহাড় সমস্যা নিয়ে কথা বলার আগ্রহ জানিয়েছিলেন। আনোসের বক্তব্য, “রাজ্যপাল যদি পাহাড়ে আসেন, তাঁকে স্বাগত জানাব। তিনি আমাদের ডাকলে নিশ্চয়ই যাব। আমরা আলোচ্য বিষয় ঠিক করে আলোচনা করব।”
১৮-২৩ অগস্ট পর্যন্ত পাহাড়ে ‘ঘরে বসে থাকবে জনতা’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এর পরে ২৪ এবং ২৫ অগস্ট, দু’দিন বিকেল ৫টায় পাহাড়ের সব জায়গায় মশাল মিছিল হবে। পর দিন ২৬ অগস্ট দিনের বেলায় ২ ঘণ্টার জন্য মানবশৃঙ্খল তৈরি করা হবে। তার পরে কী ধরনের আন্দোলন হবে, তা ১৮ অগস্ট কমিটির বৈঠকের পরে জানানো হবে।
প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রী সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পরেও গুরুঙ্গ ফের ৫ দিন পাহাড় অচলের ডাক দিলেন কেন?
আসলে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিকেই কাজে লাগানোর কৌশল নেন মোর্চা নেতৃত্ব। অন্তত মোর্চার প্রথম সারির নেতাদের অনেকে তা-ই বলছেন। সেই হুঁশিয়ারি সামনে রেখেই তিনি পাহাড়ের প্রতি বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলে বেশির ভাগ দলকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে পেরেছেন। এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিল দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস (পাহাড়), অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএম, বিজেপি (পাহাড়), গোর্খাল্যান্ড টাস্ক ফোর্স, গোর্খাল্যান্ড রাজ্য নির্মাণ মঞ্চ, ভারতীয় গোর্খা পরিসঙ্ঘ ও গোর্খা রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস অংশ নেয়। যায়নি শুধু তৃণমূল, সিপিএম এবং জিএনএলএফ। শেষোক্ত দলটি না-যাওয়ায় মোর্চার একটি অংশ উদ্বিগ্ন। তবে মোর্চার শীর্ষ নেতাদের বড় অংশ, যাঁরা একদা জিএনএলএফের প্রথম সারিতেই ছিলেন, তাঁরা মনে করেন, সুবাস ঘিসিঙের দলের বিশ্বাসযোগ্যতা নতুন করে হওয়া আর সম্ভব নয়।
মোর্চার অন্দরের খবর, এ দিনের বৈঠকে একযোগে অনেকগুলি লক্ষ্য পূরণের ছক কষেন মোর্চা নেতৃত্ব। প্রথমত, যে দলগুলি পাহাড়ে বড় মাপের আন্দোলন গড়ার পথে যেতে পারে, তাদের কাছে টেনে নেওয়ার উপরে জোর দিতে চেয়েছেন গুরুঙ্গরা। দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যেই পাহাড়ে ‘জনতা-কার্ফু’-র ডাক দেওয়ায় মোর্চার কাজকর্মের ব্যাপারে হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাই নতুন করে পাহাড় অচল করার ডাক দিলে সরাসরি মোর্চার উপরে হাইকোর্টের আঁচ পড়তে পারে এই আশঙ্কা এড়াতে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি গড়া হয়েছে। আপাতত তাকেই সামনে রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে মোর্চার একটি সূত্রের দাবি।
মোর্চা প্রকারান্তরে নিজেদের জেদ বজায় রাখতে মরিয়া হওয়ায় কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রাজ্য। কারণ, এর আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দু’দিন পাহাড় অচল থেকেছে। এখন আরও পাঁচ দিন অচল হওয়ার আশঙ্কা। পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী রাজনৈতিক দল জিএনএলএফ প্রকাশ্যে মুখ খুলছে না। কিন্তু তাঁদের নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, তড়িঘড়ি সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার ফলেই এখন অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য। দু’পক্ষের জেদাজেদির ফলে পাহাড়ের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার আশঙ্কা করছেন জিএনএলএফ-সহ নানা রাজনৈতিক দল।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতৃত্ব পাহাড়ের মানুষের উপরেই ভরসা রাখতে চেয়েছেন। মুকুল রায় বলেন, “জনজীবন বিপর্যস্ত হোক, পাহাড়ের মানুষ চান না। তাঁরা জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চান।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “শীঘ্রই পাহাড়ে যাব। শান্তি বজায় রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যা করার করছেন। আমরা জনজীবন বিপর্যস্ত করতে দেব না।”
পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্যকে ফের পাহাড়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “এখনও সময় আছে, রাজ্য সরকার আলোচনার ব্যাপারে উদ্যোগী হোক। না হলে ব্যাপারটা ক্রমশ জেদাজেদির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।”
বৈঠকে যে তাঁদের দলের নেতারা ছিলেন, সেই প্রসঙ্গে বিজেপি’র শিলিগুড়ির নেতারা জানান, যাঁরা যোগ দিয়েছেন, নিজেদের দায়িত্বেই গিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “দলীয় নির্দেশ অমান্য করে কেউ কিছু করে থাকলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানাচ্ছি।” গৌতমবাবু বলেন, “পাহাড়ের লোকসভা আসনের জন্য বাংলা ভাগের দাবিদারদের সঙ্গে কারা হাত মেলাল, ফের দেখলেন রাজ্যবাসী।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.