হকচকিয়ে গেলেন জনা পনেরো পুলিশকর্মী।
তৃণমূলকর্মীকে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত কুলতলির কুন্দখালি-গোদাবরী পঞ্চায়েতের যে চার জয়ী সিপিএম প্রার্থীর খোঁজে বৃহস্পতিবার দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিশ, শনিবার দুপুরে তাঁরাই পুলিশের সামনে হাজির। পুলিশকর্মীদের কাউকে মালা পরিয়ে, কারও গায়ে ফুল ছিটিয়ে তাঁরা ঢুকে পড়লেন পঞ্চায়েত অফিসে। বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় সামিল হলেন। তার পরে পুলিশের সামনেই গাড়িতে উঠে ফিরে গেলেন।
কেন ধরা হল না অভিযুক্তদের? উত্তর মেলেনি কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের কাছ থেকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “তদন্ত চলছে। পদস্থ কর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। গ্রেফতারের বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না।” পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও। তিনি বলেন, “এ নিয়ে কিছু বলার নেই।”
কোন সাহসে অভিযুক্তেরাই বা পুলিশের সামনে চলে এলেন? |
অভিযুক্তদের মধ্যে মোমেন আলি লস্কর এবং আব্দুল রহমান ঢালি বলেন, “পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় আমাদের সামিল হতেই হত। তাই এসেছি। পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। ধরে নিয়েছিলাম এখানে গ্রেফতার করা হবে। কেন পুলিশ তা করল না বুঝলাম না।” তবে, পুলিশের সঙ্গে যে তাঁদের কোনও বিবাদ নেই, সেই কারণেই ফুল ছেটানো বা মালা পরিয়ে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মোমেন আলিরা।
বুধবার রাতে ওই পঞ্চায়েতের কোয়াবাটি গ্রামে গুলিতে জখম হন তৃণমূল কর্মী দিলীপ সর্দার। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মোমেন আলি লস্কর এবং আব্দুল রহমান ঢালি ছাড়াও হবিবুল্লা ঢালি এবং মনোরঞ্জন হালদার নামে ওই পঞ্চায়েতে জয়ী আরও দুই সিপিএম প্রার্থীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় থানায়। বৃহস্পতিবার আব্দুর রহমানের খোঁজে কীর্তনখোলা গ্রামে তল্লাশির সময়ে পুলিশ মহিলাদের নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, মহিলাদের মারে পাঁচ পুলিশকর্মীও জখম হন।
শনিবার পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নির্বিঘ্নেই মিটেছে। গোলমালের আশঙ্কায় আগের রাত থেকেই ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয় ওই পঞ্চায়েত এলাকায়। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। এ বার ওই পঞ্চায়েতে ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিপিএম। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগে দলের ওই চার জয়ী প্রার্থীকে গ্রেফতার করিয়ে শাসক দল তৃণমূল পঞ্চায়েত বোর্ডটি দখল করতে চাইছিল বলে অভিযোগ তোলে সিপিএম। তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও হয়।
এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ ওই চার জন-সহ দলের জয়ী ১০ প্রার্থীকে গাড়িতে করে নিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে হাজির হন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় এবং দলের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মিটে যায় গোটা প্রক্রিয়া। কোয়াবাটি গ্রামেরই বাসিন্দা, অভিযুক্ত হবিবুল্লা ঢালি বলেন, “দিলীপবাবুর সঙ্গে আমাদের কোনও বিবাদ নেই। আমারা কেন তাঁকে খুনের চেষ্টা করব? উনি আগে সিপিএম কর্মী ছিলেন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন।”
ফিরে যাওয়ার আগে সিপিএম প্রার্থীরা পুলিশের সঙ্গে ফের কুশল বিনিময় করেন। মাটিতে তখনও পড়ে রয়েছে গাঁদা, রজনীগন্ধার পাপড়ি।
|