অভিযুক্তের খোঁজে চলছিল তল্লাশি। তারই ফাঁকে পুলিশ মহিলাদের মারধর, শ্লীলতাহানি, শাসানি, ঘর তছনছও চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। আর এই অভিযোগ ঘিরেই বৃহস্পতিবার রাতে তেতে ওঠে কুলতলির কুন্দখালি-গোদাবরী পঞ্চায়েত এলাকার কীর্তনখোলা গ্রাম। পুলিশের দাবি, মহিলাদের মারে পাঁচ পুলিশকর্মী আহত হন। এক পুলিশকর্মীর সার্ভিস রিভলভার কেড়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য রিভলভারটি পুলিশ ফেরত পেয়েছে।
আজ, শনিবার ওই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। এ বারেও পঞ্চায়েতের ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিপিএম। তাদের দাবি, দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে পুলিশের মদত নিয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েতটি দখল করার পরিকল্পনা করেছে। তার জেরেই ওই গোলমাল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য কুলতলির ঘটনায় সিপিএমকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “সিপিএম আমাদের কর্মীকে গুলি করেছে। তারা এলাকা দখলের চেষ্টা করছে।” তল্লাশির সময়ে নারী-নিগ্রহের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “পুলিশকে মারধরের অভিযোগে আমরা কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। তাদের খোঁজ চলছে। মহিলাদের উপরে কোনও অত্যাচার চালানো হয়নি।” |
বুধবার রাতে ওই পঞ্চায়েতের কোয়াবাটি গ্রামে গুলিতে জখম হন তৃণমূল কর্মী দিলীপ সর্দার। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ওই পঞ্চায়েতে জয়ী চার সিপিএম প্রার্থীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় থানায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অভিযুক্তদের খোঁজে দফায় দফায় বিভিন্ন গ্রামে শুরু হয় পুলিশি তল্লাশি। দিলীপবাবুর উপরে হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আব্দুল রহমান ঢালির বাড়ি কীর্তনখোলা গ্রামে। পুলিশ তাঁর নাগাল পায়নি। গ্রামের বহু পুরুষ পালিয়ে যান। সেই সুযোগেই পুলিশ বাড়ি-বাড়ি ঢুকে মহিলাদের নিগ্রহ করে, তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। রুনা বিবি নামে গর্ভবতী এক মহিলাকে পুলিশ ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। তাঁকে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়।
পাঁচ পুলিশকর্মী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের গ্রামে গিয়ে তল্লাশি শুরু করলে মহিলারা প্রতিরোধে নামেন। কয়েকশো মহিলা লাঠি, ঝাঁটা, বঁটি নিয়ে বেরিয়ে আসেন। রাস্তায় পাঁচ পুলিশকর্মীকে ঘিরে ধরে শুরু হয় মার। সাব-ইনস্পেক্টর প্রসূন রায়কে গুরুতর জখম অবস্থায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর সার্ভিস রিভলভারটিই মহিলারা কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশের এক কর্তা দাবি করেছেন, “সন্ধ্যায় ওই গ্রামে বধূ নির্যাতনে অভিযুক্ত এক জনের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল। তখনই মহিলারা চড়াও হন।”
শুক্রবার গ্রামের অধিকাংশ বাড়িই ছিল পুরুষশূন্য। মহিলাদের অনেকে ঘরের তছনছ অবস্থা দেখান। একাধিক মহিলা বলেন, “পুলিশের অত্যাচার সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছিল বলেই প্রতিবাদ জানাই। পুলিশের রিভলভারও আমরা কাড়িনি। ওরাই ফেলে
চলে গিয়েছিল।”
এ দিন গ্রামে যান সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীরা। ১৭ আসনের ওই পঞ্চায়েতে এ বার সিপিএম ন’টি, তৃণমূল সাতটি এবং বাম সমর্থিত নির্দল একটি আসন পেয়েছে। কান্তিবাবুর অভিযোগ, “পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে তৃণমূল এই পঞ্চায়েত দখলের চেষ্টা করছে। মিথ্যা অভিযোগে আমাদের চার প্রার্থীকে গ্রেফতার করানোর চেষ্টা করছে। যাতে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় তাঁরা সামিল হতে না পারেন।” পুলিশের ‘অত্যাচারের’ কথা মহিলা কমিশন এবং মানবাধিকার কমিশনকে জানানো হবে জানিয়ে সুজনবাবু বলেন, “আমাদের অভিযুক্ত চার প্রার্থীকে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় সামিল করানোর চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিলে নেবে।”
পক্ষান্তরে মুকুলবাবুর মন্তব্য, “তৃণমূল জয়নগর-কুলতলিতে পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করায় সুজনবাবু, কান্তিবাবুরা গোলমাল করছেন। নিজেদের অস্তিত্ব রাখতে সিপিএম এলাকায় সন্ত্রাস করছে।” |