পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়া নিয়ে সংঘর্ষ জেলায়-জেলায়
ঞ্চায়েতের বোর্ড গড়া শুরু হতেই জেলায় জেলায় বাধল গোলমাল। এক বিডিও-কে মারধরের অভিযোগ উঠল, ‘নিগৃহীত’ হলেন আর এক জন। পূর্ব মেদিনীপুরের ওই দু’টি ঘটনাতেই অভিযুক্ত সিপিএম। তবে রাজ্যের অন্যত্র গণ্ডগোলে নাম জড়িয়েছে শাসক দলেরও। সংঘর্ষে জখমও হয়েছেন অনেকে।
সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। পটাশপুর ২ ব্লকের খাড় পঞায়েতে ১৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল আটটি, বামফ্রন্ট সাতটি ও নির্দল একটিতে জেতে। নির্দল সদস্যকে নিয়ে তৃণমূল-সিপিএমের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। শনিবার সকালে তৃণমূল ওই নির্দল সদস্যকে অপহরণ এবং তাদের কিছু কর্মীকে মারধর করেছে অভিযোগে স্থানীয় রাস্তায় অবরোধ করে সিপিএম। সেখানে সার্কেল ইন্সপেক্টর (এগরা) অপূর্ব নাগের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। সেই সময় ঘটনাস্থলে যান বিডিও ত্রিদিব সর। ত্রিদিববাবুর অভিযোগ, “সিপিএম সমর্থকরা আমার বুকে, পেটে কিল-লাথি মারে। অকথ্য গালিগালাজ করে।”
অভিযোগ মানতে চাননি সিপিএমের প্রতাপদিঘি জোনাল কমিটির সম্পাদক কালীপদ দাসমহাপাত্র। তাঁর দাবি, “দলীয় সমর্থকেরা বিডিও-কে ঘিরে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। বিডিও শাসক দলের পক্ষে। তাই তিনি নাটক করছেন।” নির্দল প্রার্থীকে অপহরণ বা সিপিএমের লোকেদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। মহকুমাশাসক (এগরা) অসীমকুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন ওই পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়েছে। অন্য দিকে, ভগবানপুর ১-এর বিডিও উমাশঙ্কর দাসের অভিযোগ, বোর্ড গঠনের জন্য তিনি যখন গুড়গ্রাম পঞ্চায়েতের দিকে যাচ্ছিলেন, সে সময় সিপিএম সমর্থকরা তাঁকে হেনস্থা করেন। অভিযোগ মানেনি সিপিএম।
তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের শান্তিপুর ১ পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচন চলাকালীন পঞ্চায়েতের বাইরে জড়ো হওয়া সিপিএম সমর্থকদের লাঠি, রড দিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে থাকা বৈদ্যুতিন মাধ্যমের দুই চিত্রসাংবাদিক ও একটি কাগজের সাংবাদিককেও মারধর করার অভিযোগ ওঠে। গুরুতর আহত এক চিত্র সাংবাদিককে মেচেদার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সিপিএমের অভিযোগ হামলায় তাদের দশ জন আহত হন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধান পদে জয়ী হয়েছেন বামফ্রন্টের সদস্যরাই।
ওই একই ব্লকের ধলহরা পঞ্চায়েতেও প্রধান নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। ত্রিশঙ্কু ওই পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচনে যোগ দিতে যাওয়া বামফ্রন্ট সদস্যদের পঞ্চায়েতে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে বামফ্রন্ট সমর্থকেরা ডিমারিবাজারে হলদিয়া-মেচেদা সড়ক অবরোধ করেন। ময়নার গোকুলনগরে পঞ্চায়েত অফিসের পথে সিপিএমের দুই জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই পঞ্চায়েতে বামফ্রন্ট ও তৃণমূলদু’পক্ষেরই ন’জন করে সদস্য থাকায় প্রধান নির্বাচন ঘিরে এ দিন উত্তেজনা তৈরি হয়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল কোনও অভিযোগই মানেনি। নন্দীগ্রাম ২-এর খোদামবাড়ি ১ পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও নির্দলদের সংঘর্ষে পাঁচ নির্দল আহত হন।

এগরা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পটাশপুর-২ ব্লকের বিডিও। ছবি: কৌশিক মিশ্র।
অন্য দিকে, ঘাটাল ব্লকের বীরসিংহ পঞ্চায়েতে উপ-প্রধান নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। ওই ঘটনায় তৃণমূলের উভয় গোষ্ঠীরই চার জন আহত হয়েছেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘাটালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া দলের একটি গোষ্ঠীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে তৃণমূল ব্লক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ মাঝিকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। দিলীপবাবুকে গুরুতর আহত অবস্থায় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়।
সুতাহাটা ব্লকের হোড়খালি পঞ্চায়েতে আবার প্রধান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিপিএমের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। যদিও সিপিএমের জোনাল সম্পাদক সুদর্শন মান্না বলেন, “কে প্রধান হবে আগে থেকে জানতে না পারায় কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। তাই সামান্য বচসা হয়েছিল।
পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়া নিয়ে এ দিন সংঘর্ষ হয় উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের পশ্চিম মামুদপুর গ্রামে ও দেগঙ্গার চাঁপাতলা গ্রামে। আহত অবস্থায় ন’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত দুই ঘটনায় ছ’জনকে ধরেছে পুলিশ।
শুক্রবার দেগঙ্গার চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেস ও নির্দলের সমর্থন নিয়ে শুক্রবার বামেরা বোর্ড গঠন করে বিজয় মিছিল করেন। ওই সময়ে বাড়ি ফিরছিলেন তৃণমূলের প্রধান পদের প্রার্থী মঞ্জু কাহার। তৃণমূলের দাবি, মিছিলের লোকজন তাঁর উপরে হামলা করে। মঞ্জুদেবী দেগঙ্গা থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, তলোয়ার দিয়ে তাদের দলের দুই সদস্যের হাত, পা ও পেটে আঘাত করা হয়। সিপিএম অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হিঙ্গলগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতে শুক্রবার টসে জিতে বিজয়মিছিল বের করে তৃণমূল। সেই সময়ে মিছিল থেকে কয়েক জন সিপিএম সমর্থকের উদ্দেশে কটূক্তি করা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে চার জন আহত হন।
আমডাঙাতেও বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ করেছে।
বর্ধমানের মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করার পরে তৃণমূল কমজদের উপরে হামলা এবং একটি কার্যালয় ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। সিপিএম অভিযোগ মানেনি।
পঞ্চায়েতের বোর্ড গড়া নিয়ে ঝামেলায় তেতে ওঠে উত্তর দিনাজপুরও। এ দিন সকালে ইসলামপুরের পণ্ডিতপোতা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস ঢোকার মুখে পুলিশের সামনেই কংগ্রেস এবং সিপিএমের চার বিজয়ী সদস্যকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। রাত পর্যন্ত চার জনের খোঁজ মেলেনি।
ঘটনার পরেই, এলাকার কংগ্রেস এবং সিপিএম সমর্থকেরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়। দিনভর একের পর এক ঘটনার জেরে গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, “এলাকাতে পুলিশি টহল চলছে। নিখোঁজ প্রার্থীদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।”
সূজালিতে মিছিল করে বোর্ড গঠন করতে যাওয়ার সময় সিপিএমের মিছিলে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জখম ১৬ জন সিপিএম সমর্থককে ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই ব্লকের মাটিকুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম একক ভাবে বোর্ড গঠনের পরে, এ দিন সন্ধ্যায় সিপিএমের পার্টি অফিসে কংগ্রেস এবং তৃণমূল আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কংগ্রেস এবং তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.