রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দকে কথা দিয়েছিলেন, কাজের চাপ একটু হালকা হলেই বেলুড়ে আসবেন। প্রসাদ খাবেন, সন্ন্যাসীদের সঙ্গে সময় কাটাবেন।
সেই মতো শনিবার দুপুরে বেলুড় মঠে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা।
এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ বেলুড় মঠে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। মঠের মূল গেট পেরিয়ে তাঁর গাড়ি সোজা গিয়ে দাঁড়ায় বেলুড় মঠের বিদেশি অতিথিনিবাসের সামনে। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি সন্ন্যাসীদের উদ্দেশে বললেন, “মহারাজদের দুপুরে এসে বিরক্ত করলাম। তবে আজ কিন্তু একা আসিনি। আমার প্রশাসনের সংসারের অনেকে নিয়েই চলে এসেছি।” এ দিন মমতার সঙ্গে বেলুড় মঠে গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা পুলিশের কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।
মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে অতিথিনিবাসের সামনে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ, সহসম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ, স্বামী শুভকরানন্দ-সহ অন্যান্য প্রবীণ সন্ন্যাসী। ওই অতিথি নিবাসেই অতিথিদের সকলের দুপুরের খাবারের বন্দোবস্ত করেছিলেন মিশন কর্তৃপক্ষ। সবার সঙ্গে সেখানে বসেই প্রসাদ গ্রহণ করলেন মমতাও। |
পুষ্পাঞ্জলি
স্বামীজির বাগান থেকে ফুল নিয়ে চলেছেন তাঁর
ঘরে, শ্রদ্ধা জানাতে। শনিবার বেলুড় মঠে মুখ্যমন্ত্রী। |
প্রসাদের পর্ব মিটতেই মুখ্যমন্ত্রী চললেন মায়ের ঘাটের দিকে। যাওয়ার আগে অবশ্য অতিথি নিবাসের বাগান থেকে নিলেন ফুল। সারদাদেবীর মন্দিরের সামনে শান বাঁধানো ঘাটে কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে তার পরে ঢুকলেন মন্দিরে। সেখানে ফুল দিয়ে প্রণাম সেরে বেরনোর পরেই সন্ন্যাসীরা তাঁকে বললেন, “চলুন স্বামীজির ঘাটের দিকে যাই।” সন্ন্যাসীদের সঙ্গে মমতাও হেঁটে চললেন সে দিকেই।
বেলুড় মঠে এসে সময় কাটানোর ফাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর যে কিছু ক্ষণ গঙ্গার ঘাটে বসে থাকার বাসনা রয়েছে, সন্ন্যাসীরা জানতেন সে কথা। তাই স্বামীজির ঘাটের সামনে আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বসার জন্য সুবন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছিল। বিকেল চারটে থেকে প্রায় আধ ঘন্টা সেখানেই বসে থাকলেন মমতা। মাঝেমধ্যে চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে গেলেন গঙ্গার ঘাটের সিঁড়ির দিকেও।
আর এই আধ ঘন্টাতেই সন্ন্যাসীদের সঙ্গে রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কিত রাজ্য সরকারের কাজ ও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা সারলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফোনে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তাদের। আলোচনায় উঠে এল বাগবাজারে সারদাদেবীর বাড়ির সামনে থাকা বস্তিবাসীদের প্রসঙ্গ। ওখানে বসেই তাঁদের পুর্নবাসনে নিয়ে কলকাতা পুরসভাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার এ দিন তিনি বেলুড় মঠ থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত ভূতল পরিবহণ নিগমের যে বাস চলাচল করে তার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পরিবহণ দফতরের সঙ্গে মুখ্যসচিবকে কথা বলতেও বলেন। আলোচনার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জলপথে কলকাতা ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই মতো আয়োজনও হয় লঞ্চের।
তবে নিজেই শুধু এ দিন লঞ্চে ফেরেননি মুখ্যমন্ত্রী। আসার আগে স্বামীজির ঘাটে বসেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কী ভাবে জলপথে কলকাতার সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাকে এক সুতোয় বেঁধে দেওয়া যায়। ফেয়ারলি প্লেস, বাবুঘাট থেকে বাগবাজার, দক্ষিণেশ্বর হয়ে বেলুড় মঠ পর্যন্ত রোজ সারা দিন যাতে লঞ্চ চলাচল করে মুখ্যসচিব সঞ্জয়বাবুকে সে ব্যাপারে পরিবহণ সচিবের সঙ্গে কথা বলতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার প্রায় ৫০০ শয্যার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালটির পরিচালনভার বেলুড় মঠের হাতে তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা নিয়েও সন্ন্যাসীদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। |
প্রতি মাসে এক বার করে আসতে হবে।
মমতাকে বললেন স্বামী আত্মস্থানন্দ। শনিবার বেলুড় মঠে। |
আগামী বছর ১০ জুন রাজ্য সরকারের তরফে স্বামীজির সার্ধশতবর্ষ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি অনুষ্ঠান নিয়েও এ দিন মিশনের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার সে বছরই শিকাগোয় যে অনুষ্ঠান হবে, তাতেও তাঁদের যোগ দেওয়ার বিষয়টি এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে জানান সন্ন্যাসীরা। স্বামীজির ঘাটে এই আলাপচারিতার মাঝেই আসে চা। কিছু পরে স্বামীজির বাগান থেকে দু’টি ফুল নিয়ে মমতা যান স্বামী বিবেকানন্দের ঘরে। সেখানে গিয়ে তিনি স্বামীজির পাগড়ি, লাঠি, পাদুকা স্পর্শ করেন। স্বামীজির উদ্দেশে ফুল নিবেদন করে বেলুড় মঠের মূল মন্দিরে যান মুখ্যমন্ত্রী।
মূল মন্দিরে প্রণাম সেরে মমতা যান রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দের বাসগৃহে। যাওয়ার পথেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় প্রবীণ এক সন্ন্যাসীর। মমতাকে দেখে আনন্দে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন ওই সন্ন্যাসী। বলেন, “তোমায় এক বার দেখব বলে বসে আছি।” তাঁর পিঠে মমতার হাত বুলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনি ভাল থাকবেন।”
মিনিট পনেরোর সাক্ষাৎ স্বামী আত্মস্থানন্দের সঙ্গে। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে তাঁর হাতে মিষ্টি তুলে দিলেন মমতা। বললেন, “সেই জানুয়ারিতে এসেছিলাম। বলেছিলাম আবার আসবো। চলে এলাম।” আর্শীবাদী শাড়ি, প্রসাদী মিষ্টি, চকোলেট মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে প্রবীণ সন্ন্যাসী বলেন, “এত দেরি করে এলে চলবে? প্রতি মাসে এক বার করে আসতে হবে।” |