পঞ্চায়েত ভোটের ফলে তাঁরা টক্কর দিয়েছিলেন প্রায় সমানে সমানে। কিন্তু বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-গোষ্ঠীর হাত থেকে কসবা পঞ্চায়েত বোর্ডটি ছিনিয়ে নিলেন নির্দল হিসেবে জেতা বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থীরা।
এই কসবা পঞ্চায়েতেই ভোটের আগে উস্কানিমূলক মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন অনুব্রত। অনুব্রতর সেই মন্তব্যের পরে একাধিক নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে হামলা হয়, ভোটের আগের দিন খুন হন এক নির্দল প্রার্থীর বাবা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েতের বোর্ড গড়ার ‘মযার্দার লড়াই’য়ে উত্তীর্ণ হতে পারল না অনুব্রত গোষ্ঠী।
মোট ১২টি আসনের মধ্যে ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূল সাতটি এবং নির্দল পাঁচটি আসন পেয়েছে। কিন্তু সাত তৃণমূল প্রার্থীর মধ্যে পার্বতী বাগদি অনুব্রত-বিরোধী গোষ্ঠীর লোক হিসেবেই পরিচিত। শনিবার ওই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হয়। ভোটাভুটিতে বোর্ডটি ‘টাই’ হয়ে যায়। লটারিতে প্রধান হন নির্দল প্রার্থী শঙ্করী দাস। উপপ্রধান হন পার্বতীদেবী।
এ দিন বহু চেষ্টার পরেও অনুব্রত ফোন ধরেননি। তবে, বোর্ড দখলে নিতে না পারার জন্য অনুব্রত অনুগামী হিসেবে পরিচিত দলের স্থানীয় অঞ্চল সম্পাদক শেখ মোস্তফা পার্বতীদেবীকেই দুষেছেন। মোস্তাফা বলেন, “দলীয় প্রতীকে জিতেও পার্বতীদেবী নির্দলদের সমর্থন করায় আমরা কসবায় বোর্ড গড়তে পারিনি। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে দলত্যাগ বিরোধী আইনে লিখিত অভিযোগ করব।” অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ, দলের জেলা সহ-সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরীও ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
অনুব্রত মণ্ডল |
পার্বতীদেবীর অবশ্য দাবি, “ওই পঞ্চায়েতে আমরা ১২ জনই দলীয় প্রতীকের জন্য আবেদন করেছিলাম। শুধু আমি পাই। তা বলে বোর্ড গঠনে আমি জেলা সভাপতির অনুগামীদের সমর্থন করতে পারব না। আমি প্রথম থেকেই নির্দলদের সঙ্গে আছি।” তিনি দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতায় পড়বেন কি না, তা নিয়ে বোলপুরের বিডিও শেখর সাঁই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটেছে কি না, আমি বলতে পারব না। এটা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিজস্ব বিষয়। অভিযোগ পেলে ওই আইনের ২১৩(এ) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”
অনুব্রত অনুগামী তৃণমূল প্রার্থীরা বোর্ড গঠনের সুযোগ না পাওয়ায় খুশি ওই পঞ্চায়েতের পরাজিত নির্দল প্রার্থী, তথা ভোটের আগের দিন খুন হওয়া সাগরচন্দ্র ঘোষের ছেলে হৃদয় ঘোষ। তিনি বলেন, “এই জয় প্রমাণ করল, মানুষ পুরনো তৃণমূলকর্মীদেরই পাশে আছেন।” কসবার নতুন প্রধান শঙ্করীদেবী বলেন, “এই জয় আমরা নিহত সাগরবাবুকে উৎসর্গ করছি। অনুব্রত-গোষ্ঠীর সব রকমের বাধার পরেও আমরা জিতেছি। এ বার এলাকার উন্নয়নে ব্রতী হব।”
অবশ্য শুধু কসবা নয়, অনুব্রত যে ব্লকের বাসিন্দা সেই বোলপুর-শ্রীনিকেতনের মোট ন’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দু’টিতে আগেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন নির্দলেরা (সকলেই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল)। শুক্রবার সেই সিঙ্গি ও সিয়ান-মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েত দু’টির বোর্ডও নির্দলেরাই গঠন করেছেন। অন্য দিকে, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সামসাবাদ পঞ্চায়েতেও শেষ পর্যন্ত তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে প্রধান হলেন নির্দল সদস্য অতনু জানা। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পদটি সংরক্ষিত হওয়ায় তৃণমূলের সবিতা মণ্ডল সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হন।
|