ইডেনকে একাধিক বার যিনি চন্দ্রালোকে উদ্ভাসিত করেছেন, বক্তা সেই ভগবত চন্দ্রশেখর।
আর পাঁচ জন প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতো চন্দ্র পাবলিক লাইফে থাকেন না। ইন্টারভিউ দেন না।
অর্ধেক সময়
আমেরিকাতেই কাটে তাঁর। আনন্দবাজারকে শনিবার দুপুরে জয়নগরে বসে দেওয়া
ইন্টারভিউটাও
বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে। তাঁর প্রাক্তন অধিনায়ক অজিত ওয়াড়েকরের মাধ্যমে
অনুরোধ না এলে হয়তো নীচের কথাবার্তা অধরাই থাকত... |
প্রশ্ন: আপনার ক্যাপ্টেন মোবাইলে নাম সেভ করেছেন চন্দ্রশেখর-ইংল্যান্ড বলে। বেদী-প্রসন্নর এতে প্রবল আপত্তি। ওঁদের মনে হচ্ছে চন্দ্র-ওভাল নয় কেন?
চন্দ্রশেখর: হাঃ হাঃ হাঃ। ওভালের চেয়ে ভাল বোলিং আমি অনেক জায়গায় করেছি। কিন্তু ওই যে ইংল্যান্ডে প্রথম টেস্ট আর সিরিজ জেতা। তার জন্যই ৩৮ রানে ছয় উইকেটটা অন্য মাত্রা পেয়ে গেল। আজও লোকে ওটার কথাই প্রথম বলে।
প্র: ইউ টিউবে আপনার স্পেলটা রয়েছে। দেখেন কখনও?
চন্দ্রশেখর: জানি আছে। কিন্তু দেখা হয় না। আমি ইউ টিউবে যাই। বা নেট ঘাঁটি অন্য কারণে।
প্র: সেটা কী?
চন্দ্রশেখর: মুকেশের গান শুনতে। উফ কী গলা। আজও গোল্ডেন ওল্ডিজের গানগুলোই ফিরে ফিরে শুনি।
প্র: মুকেশের পরে আর কাউকে ভাল লাগেনি?
চন্দ্রশেখর: না। আর গায়ক হয়নি তার পর।
প্র: মুকেশকে মিট করেছিলেন কখনও?
চন্দ্রশেখর: হ্যাঁ। তবে উনি অত ক্রিকেট ফ্যান ছিলেন না।
প্র: একটা কথা বলুন। ওয়াড়েকর-পটৌডি দু’জনকেই টেস্ট জিতিয়েছেন। কার আন্ডারে খেলে বেশি মজা পেতেন?
চন্দ্রশেখর: দু’জনে দু’রকম। টাইগার বেশি ঝুঁকি নিত। জেতা ছাড়া কিছু বুঝত না। হারলেও ওর আপত্তি ছিল না। ড্র নিয়ে কখনও ভাবেনি। ইডেনে শেষ দিন যখন প্রথম দু’টো ওভার আমি মার খেয়ে গেলাম নিজেই জানতাম আর ক্যাপ্টেন বোলিং করাবে না। তো আমি থার্ড ম্যানের দিকে হাঁটছি। হঠাৎ টাইগার ডাকল। বলল, আর একটা ওভার করে যাও। টাইগার জানত, হাতে এত কম রান যে অ্যাটাক ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। আর উইকেট নিতে গেলে আমাকে দিয়েই ঝুঁকি নিতে হবে। সেই ওভারটাতেই লয়েড গেল। তার পর কালীচরণ। শেষ দিকে জুলিয়েন। টেস্ট জিতে গেলাম।
প্র: ওয়াড়েকর?
চন্দ্রশেখর: অজিত ভাল। কিন্তু টাইগারের মতো অ্যাটাকিং ছিল না। হারতে চাইত না।
প্র: কিন্তু অনেকে যে বলে, পটৌডি বোলারকে ফিল্ড সাজাতে দিতেন না। বলতেন, বোলিংটা তোমার। ফিল্ড প্লেসিংটা আমার। সত্যি?
চন্দ্রশেখর: (কিছুটা ভেবে) তাতে আমার কী! আমার তো চাহিদা ছিল লেগ স্লিপ, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ আর স্লিপস। এই তিনটে জায়গায় লোক দিয়ে দেওয়ার পর বাকি মাঠ নিয়ে কী করা হল আমার কোনও মাথাব্যথা ছিল না।
|
সৌরভের হাত থেকে নিচ্ছেন পুরস্কার। ছবি: উৎপল সরকার |
প্র: চন্দ্রশেখর আইপিএলে রঙিন জার্সি পরে সাদা বল হাতে। দৃশ্যটা দারুণ হত না?
চন্দ্রশেখর: আমি যে সময়ে যে ভাবে খেলেছি তাতেই খুশি। মনে হয় না, টি টোয়েন্টি আমাকে এতটুকু আকর্ষণ করত বলে।
প্র: কেন?
চন্দ্রশেখর: বললাম তো আমার চাই স্লিপ, লেগ স্লিপ আর ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ। টি টোয়েন্টিতে কে দিত আমায়! আরও একটা জিনিস আমার ভীষণ ভালবাসার ছিল। সেটাও তো পেতাম না।
প্র: কী সেটা?
চন্দ্রশেখর: ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে সোলকার। একনাথ একটা অন্য জিনিস ছিল। খুব মিস করি ওকে।
প্র: ইডেন দর্শককে মনে পড়ে?
চন্দ্রশেখর: কী বলছেন! ব্যক্তিগত ভাবে আমার ব্রেবোর্নের উইকেট বেশি পছন্দ ছিল। বাউন্স পেতাম। চকিত টার্ন পেতাম। কিন্তু ক্রাউড বলতে কলকাতা! এত ইমোশনাল আর যে ভাবে উৎসাহ দিত, ভাবা যায় না। আমি খুব প্রিয় ছিলাম ইডেনের। অনেক বছর যাইনি কলকাতা। এখন শুনি ইডেন ভিভিএস লক্ষ্মণের। কেউ বলে আজহার। আমি বলি অধম চন্দ্র-র জন্যও তারই মধ্যে একটা ছোট জায়গা থাকুক।
প্র: অনেকে বলে চন্দ্র সব সময় নিজেও জানত না, ওর কোন বলটা কী করবে!
চন্দ্রশেখর: আমিও শুনেছি। বোগাস। আমি খুব ভাল জানতাম কোন বলটা কী করতে যাচ্ছে।
প্র: একটা সাফ জবাব দিন। ভারতীয় ক্রিকেট তার সবচেয়ে বোলিং ম্যাচউইনার হিসেবে পেয়েছে তিন জনকে। আপনি নিজে, কপিল আর কুম্বলে। মনে করা যাক আপনার জীবনের জন্য ম্যাচ জেতাতে হবে। কাকে বাছবেন?
চন্দ্রশেখর: চোখ বুজে অনিল কুম্বলে! |