গ্রামে ঢুকে পড়া চিতাবাঘকে বনকর্মীদের উপস্থিতিতেই পিটিয়ে মারল জনতা। পরে সেটির দেহ থেকে দাঁত ভেঙে, কান, লেজও কেটে নেওয়া হয়। শনিবার দুপুরে ফালাকাটার ধনিরামপুর এলাকার চ্যাংমারিটারি গ্রামের ঘটনা। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ওই ঘটনা ঘটলেও বনকর্মীরা কার্যত কোনও প্রতিরোধই করতে পারেননি।
ওই গ্রামটির পাশেই দলগাঁওয়ের জঙ্গল। গ্রামবাসীরা জানান, জঙ্গল লাগোয়া কলি নদী সাঁতরে এ দিন ভোরে চিতাবাঘটি গ্রামে ঢোকে।
নদীর পাড়ে আইনুল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে প্রথমে সেটি আক্রমণ করে। এর পরে একটি বাড়িতে ঢুকে এক কিশোর-সহ দু’জনকে জখম করে। ততক্ষণে গ্রামবাসীর হইচই শুরু করে দিয়েছেন। |
তখনও বেঁচে। চ্যাংমারিটারি গ্রামের একটা গাছের মগডালে। |
চিতাবাঘটি এর পর ধানখেতের ভিতরে লুকিয়ে পড়ে। সেখানে গ্রামবাসীর ছোড়া ঢিলে জখম হয়ে পাশের একটি গামার গাছের মগডালে চড়ে বসে সেটি। নীচে ভিড় করেন কয়েকশো বাসিন্দা। সকাল আটটা নাগাদ দলগাঁ, বিন্নাগুড়ি, বানারহাট থেকে ঘুমপাড়ানি গুলি এবং জাল নিয়ে গ্রামে পৌঁছন বনকর্মীরা। তবে গাছে বসা চিতাবাঘটিকে কী ভাবে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হবে তা ঠিক করতেই সময় চলে যায়। নীচে জড়ো হওয়া বাসিন্দাদের চেঁচামেচি এবং নীচ থেকে ক্রমাগত ঢিল আসতে থাকায় চিতাবাঘটি বেশ কয়েকবার হুঙ্কারও দেয়। এরপর বনকর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে গাছে বসে থাকার পরে একডাল থেকে অন্য ডালে লাফিয়ে যেতে গিয়ে, সকাল ১১টা নাগাদ ডাল ভেঙে চিতাবাঘটি পড়ে যায়।
গাছ থেকে পড়ে ধানখেত দিয়ে পালাতে গিয়ে চিতাবাঘটি এক যুবতী-সহ তিনজনকে থাবা বসায়। সে সময় একটি বাড়িতে ঢুকে পড়লে সেটিকে হাতের নাগালে পেলে এক বাসিন্দা কুড়ুলের কোপ দেন।
তাতে সেটি আহত হলে লাঠিপেটা শুরু হয়। এর পরে সেটিকে পিটিয়ে মারে জনতা।
গ্রামবাসীর দাবি, একের পর এক বাসিন্দাকে জখম করলেও বনকর্মীরা চিতাবাঘটিকে ধরতে পারেননি। ক্ষিপ্ত জনতার যুক্তি, বন দফতর ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে চিতাবাঘটিকে কাবু করলে এমন ঘটনা এড়ানো যেত। গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সামসুরুদ্দিন বলেন, “বনকর্মীরা কোনও কাজ না করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রথমেই গুলি করে ঘুম পাড়ালে পরে তিন জন জখম হতেন না। আত্মরক্ষা করতেই চিতাবাঘটি মেরে ফেলতে বাধ্য হন বাসিন্দারা।” |
পিটিয়ে মেরে ফেলার পরে চিতাবাঘটির দেহ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা। |
বিন্নাগুড়ি এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার দিলীপ চৌধুরী বলেন, “ঘুমপাড়ানি গুলি করার মত অবস্থান পাওয়া যাচ্ছিল না। গুলি না লাগলে গাছ থেকে নেমে চিতাবাঘটি হামলা করতে পারত।”
জলপাইগুড়ির ডিএফও বিদ্যুৎ সরকার বলেন, “মৃত পুরুষ চিতাবাঘটির আনুমানিক বয়স আট। সেটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ার মতো অবস্থানে পাওয়া যায়নি বলে জানতে পেরেছি। চিতাবাঘের আক্রমণে জখমদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। পুরো ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে আমরা অভিযোগ জানাব।”
এ দিন চিতাবাঘের লেজ, ও কান কাটার ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। বনকর্মীদেরও ধাক্কাধাক্কি করা হয়। পরে পুলিশ পৌঁছলে বাসিন্দাদের সরিয়ে চিতাবাঘটির দেহ উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। এ দিন বিকেলে দলগাঁও রেঞ্জ অফিস চত্বরে সেটির ময়নাতদন্ত করানো হয়। |