|
|
|
|
সাধু-সঙ্গ আর চান না বিহারের রাজনীতিকরা |
স্বপন সরকার • পটনা
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
সাধু হইতে সাবধান! বিহারের রাজনৈতিক দলগুলির অফিসে অফিসে এখন একটাই সতর্কবাণী।
সাধু অর্থাৎ সাধু যাদব, যাঁর ‘শুভ্নাম’ অনিরুদ্ধ। একদা ‘জিজাজি’ লালুপ্রসাদের জমানায় যাবতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসে তাঁর নাম। এরপর জিজাজির গলাধাক্কা। কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ভেসে ওঠার চেষ্টা করেন সাধু। কিন্তু সফল হননি। কংগ্রেসের খাতায় নাম থাকলেও নিজের রাজনৈতিক উচ্চাশায় পাড়ি দিয়েছিলেন গুজরাতে। বিতর্কে আবার আবর্তিত বিহার রাজনীতি। অস্বস্তিতে পড়ে থাকা কংগ্রেস ঝেড়ে ফেলতে চাইছে সাধু-সংস্রব। শাকিল আহমেদের মতো কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির নেতা-সদস্যরা বলছেন, “নরেন্দ্র মোদী এবং সাধু যাদব যদি জোট বেঁধে দেশের
|
সাধু যাদব |
কথা ভাবতে শুরু করেন, তাহলে এই দেশকে ভগবানই বাঁচাতে পারেন।”
কংগ্রেসের বিহার রাজ্য নেতৃত্ব স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন, সাধু যাদব তাঁদের কেউ নন। গোপালগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য হলেও ইঙ্গিত, বিতাড়িত হবেন সেখান থেকে। আর যে নরেন্দ্র ভাইয়ের প্রধানমন্ত্রিত্ব পদের দাবি নিয়ে গত কাল থেকে সাধু অনেক মাখো মাখো ‘কোট’ সাংবাদিকদের দিলেন, তাকে কণামাত্র গুরুত্ব দিতে রাজি হননি বিজেপি-র আর এক মোদী, বিহারের সুশীল মোদী। স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, বিহার বিজেপি-র দরজা সাধুর জন্য চিরকালের মতো বন্ধ। পুরনো দল, লালুপ্রসাদের আরজেডি দফতরে সাধুর চৌকাঠ পেরনোর উপরেই ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। রইল বাকি নীতীশ কুমারের জেডিইউ। কোনও দিন সাধুকে ঘেঁষতে দেননি নীতীশ। বহুবার চেষ্টা করেও নীতীশের কাছাকাছি যেতে পারেননি সাধু যাদব। অর্থাৎ সকলেই সাধু হইতে সাবধান হয়ে গিয়েছেন।
সাধু কেন ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের অছিলায় গাঁধীনগরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করলেন? রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, সাধু যাদব ভালই জানেন যে এখানকার বিজেপি নেতারা তাঁকে কোনও ভাবেই আশ্রয় দেবেন না। ফলে গুজরাতে গিয়ে তিনি হালে পানি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই নেতার মতে, বিহারের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ফলে শিষ্টাচার হিসেবে তিনি সাধু যাদবের সঙ্গে দেখা করেছেন। গুজরাতে গিয়ে মোদীকে ধরে কি সাধু এ বার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র ছাতার তলায় আসতে চাইছেন? রাজ্যের বিজেপি নেতা সুশীল মোদী বলেন, “তিনি কোথায় কী করছেন তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তবে এটা জেনে রাখা ভাল, সাধু যাদব যদি বিজেপিতে আসতে চায় বিহারে তার জন্য দরজা বন্ধ। কোনও মূল্যেই রাজ্য বিজেপিতে তার জায়গা নেই।” উল্লেখ্য, বিষয়টি নিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব দিল্লির নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। অনুরোধ করা হয়েছে, ভিন রাজ্যের, অন্য দলের কোনও নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের আগে বিজেপি নেতাদের উচিত সংশ্লিষ্ট রাজ্য নেতৃত্বের সম্মতি নেওয়া।
কংগ্রেসে আশ্রয় পেলেও দিল্লিতে কখনও সনিয়া গাঁধী বা রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি সাধু। কাল নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার পরে তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে দেশের প্রয়োজন আছে বলে সাংবাদিকদের বলেন। এমনকী রাহুল গাঁধীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর তুলনায় তিনি গুজরাতের সাংবাদিকদের বলেন, “তিন বছরেও রাহুলের সঙ্গে দেখা পাওয়া সম্ভব হয়নি। এমন ব্যক্তিকে দেশের নেতা বানিয়ে কী লাভ? নরেন্দ্র ভাই কিন্তু সকলের জন্য আছেন।” মনমোহনের থেকে নরেন্দ্র মোদীর নাম যে ঘরে ঘরে লোক জানেন এমন মন্তব্য করতেও তিনি ছাড়েননি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক চৌধুরি তাঁকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বলেছেন, “সাধু যাদব প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য নয়। সুতরাং তাঁর ব্যাপারে আমরা কোনও ব্যবস্থা নেব না। গোপালগঞ্জের জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে ওখানকার নেতৃত্ব তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।” তবে প্রশ্ন হল, অতীতে এই সাধুকে কেন তাঁদের দলে সামিল করেছিলেন কংগ্রেস নেতারা? শাকিল আহমেদ বলেন, “আমি এখনও জানি না সাধু যাদব কংগ্রেসে রয়েছেন কি না। কংগ্রেসের টিকিটে গত লোকসভা ভোট সাধু লড়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তার পর থেকে কংগ্রেসের কোনও সভা-সমাবেশ সাধুকে দেখা যায়নি। তাই তাঁকে কংগ্রেস নেতা বলা ভুল হবে। তাছাড়া সাধু যাদব প্রদেশ বা সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সদস্য হননি। তিনি দলের প্রাথমিক সদস্য হয়েছিলেন। জেলা কংগ্রেসই তাঁকে দল থেকে বের করে দিতে যথেষ্ট।” সব মিলিয়ে সাধু যাদবকে নিয়ে বিহার রাজনীতির পরিস্থিতি আজ এমনই, কার্যত কংগ্রেস-বিজেপি, সকলেই বলছেন, ‘ছেড়ে দে সাধু, কেঁদে বাঁচি’। |
|
|
|
|
|