|
|
|
|
আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর, তবু আতঙ্কে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
টাকার দামে রেকর্ড পতন এবং শেয়ার বাজারের বিপুল ধস নিয়ে সর্বস্তরের আতঙ্ক কাটাতে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ স্বয়ং। আশ্বাস দিলেন, অর্থনীতির ভিত এখন যথেষ্টই মজবুত। পরিস্থিতি মোটেই ১৯৯১ সালের আর্থিক সঙ্কটের সঙ্গে তুলনীয় নয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাসেও মোটেই ভরসা পাচ্ছে না তাঁর দল। বরং কয়েক মাস পরে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা এবং আগামী বছরে লোকসভা ভোটের মুখে আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় কংগ্রেস।
শনিবার সাত রেসকোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাসের চতুর্থ খণ্ডের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয়। সেই অনুষ্ঠানেই আর্থিক সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রসঙ্গত, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দু’দিন আগে একগুচ্ছ দাওয়াই ঘোষণা করেছিল সরকার। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই তখন মনে করেছিলেন, সরকার পুঁজির পায়ে বেড়ি পরাতে চেয়েছে। তার পরই গতকাল মুখ থুবড়ে পড়ে শেয়ার বাজার। রেকর্ড ধস নামে টাকার দামেও। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সর্বস্তরে। অনেকে আবার এমন আশঙ্কাও করছেন, সরকার নয়া উদার অর্থনীতির উল্টো পথে হাটতেও পারে। এ নিয়ে নানা মহলে দোলাচলের মাঝেই আজ ওই অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৯১ সালের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তখন বৈদেশিক মুদ্রার দর ছিল স্থির। এখন তা বাজারের ওপর নির্ভর করে। ফলে শুধু বাজারের অস্থিরতাকে ঠিক করলেই হবে।” |
|
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী,
নিজের বাসভবনে এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে। শনিবার। ছবি: পিটিআই |
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মতোই প্রধানমন্ত্রীও এ দিন চলতি খাতে বাণিজ্য ঘাটতির কারণ হিসেবে বিপুল হারে সোনা আমদানিকেই দায়ী করেছেন। তবে অর্থনীতি যে এখনও যথেষ্ট মজবুত, তা বোঝাতে মনমোহন বলেন, “নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় বিদেশি মুদ্রার যা সঞ্চয় ছিল, তা দিয়ে মাত্র ১৫ দিনের আমদানি খরচ মেটানো যেত। আর এখন যা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় রয়েছে, তা দিয়ে সাত মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব।”
প্রধানমন্ত্রীর এই বরাভয়ের পরে বাজার ফের ঘুরে দাঁড়াবে কিনা, তা সোমবার সকালেই বোঝা যাবে। কিন্তু মনমোহনের আশ্বাস যে তাঁর দলকেই বিশেষ সাহস দিতে পারছে না, তা ২৪ আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতরের পরিবেশ থেকেই স্পষ্ট। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। বাজারে ধস ও টাকার অবমূল্যায়নের পর যে ভাবে পেট্রোল, ডিজেল-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র আরও মহার্ঘ্য হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাতে ভোট মরশুমে বেজায় উদ্বেগে কংগ্রেস নেতৃত্ব। দু’মাস বাদেই দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগড়ে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বাজার এমনিতেই আগুন। পেঁয়াজ থেকে শুরু করে প্রায় সব রকম সবজির দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। তার ওপর পেট্রোল, ডিজেলের দাম আরও বাড়লে জিনিসের দাম আকাশ ছুঁতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে সব মহলেই। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক প্রবীণ সদস্যের কথায়, “সে রকম হলে ওই সব রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কোনও শক্তিই বাঁচাতে পারবে না কংগ্রেসকে।
প্রকাশ্যে অবশ্য দলের নেতারা সঙ্কট কাটার আশাই করছেন। কংগ্রেসের মুখপাত্র সন্দীপ দীক্ষিত আজ বলেন, “আর্থিক সঙ্কট কাটাতে সরকার চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। ফলে এখনই চিন্তার কারণ নেই।” কিন্তু কংগ্রেস সদর দফতরে বসে দলের একাধিক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে মনমোহনকে সামনে রেখে কংগ্রেস যে ফল করতে পেরেছিল, এ বার তার সম্ভাবনা তো নেই-ই, বরং উল্টো প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে! এক নেতার কথায়, “২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের সময়ও বিশ্বজোড়া মন্দার বাতাবরণ ছিল। কিন্তু মনমোহনের নেতৃত্বে একমাত্র ভারত সেই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার আলো দেখাতে পেরেছিল। এ বার আলো দূরস্থান, প্রতিদিনই একটু একটু করে খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি!” কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, আসন্ন সবক’টি নির্বাচনেই এই অবস্থার ফল ভুগতে হবে কংগ্রেসকে। এবং এর ধাক্কা সবচেয়ে বেশি পড়বে শহরাঞ্চলে।
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে দেশের অধিকাংশ মহানগরীতে কংগ্রেস বা তার জোট শরিকরা মোটের উপর ভাল ফলই করেছিল।
স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব। সরকার তথা কংগ্রেসের এমন সঙ্কট দেখে তারা যথেষ্ট উল্লসিতও। দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা যশবন্ত সিন্হা বলেন, “এমন বরাভয় প্রধানমন্ত্রী গত দু’বছর ধরেই দিচ্ছেন। ইউপিএ সরকারের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্যই সঙ্কট তীব্র হচ্ছে।” বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, সঙ্কটের এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে তুঙ্গে নিয়ে যেতে আরও সক্রিয় হয়ে ময়দানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। বর্তমান আর্থিক সঙ্কট নিয়ে আগামী সপ্তাহে সংসদে বিতর্কেরও দাবি জানাবে বিজেপি। |
|
|
|
|
|