পঞ্চায়েতে উপপ্রধান ঠিক করা নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে বালুরঘাট শহর লাগোয়া চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। দু’পক্ষের মারপিটে ৪ জন আহত হন। একজনকে রাতে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার সকালে অবশ্য তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব খাঁ এবং সমবায় মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর আপ্ত সহায়ক দেবপ্রিয় সমাজদার গোষ্ঠীর অনুগতদের মধ্যে গন্ডগোল হয় বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনায় ৩ জনকে ধরা হয়েছে। দু’পক্ষের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
দলীয় সূত্রের খবর, ঘটনাচক্রে ধৃত ৩ জন বিপ্লব খাঁ গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। চকভৃগু এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি বিপ্লববাবু বলেন, “প্রধান ও উপপ্রধান মনোনয়ন নিয়ে দলে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বামফ্রন্ট থেকে আসা কিছু তৃণমূল সমর্থক বিষয়টি নিয়ে গন্ডগোল করছেন। এতে দেবপ্রিয়বাবুর ভুমিকা থাকতে পারে। জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রকে তা জানানো হয়েছে।”
মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক দেবপ্রিয়বাবু গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি কাজেই ব্যস্ত ছিলাম। মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলাম। শুনেছি চকভৃগুতে নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। আমি দলের কোনও পদে নেই। জেলা নেতৃত্ব ভাল বলতে পারবেন।” তৃণমূলের জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায় বলেন, “নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে ঘটনাটি ঘটে। জেলা সভাপতির নেতৃত্বে দু’পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যা মেটানো হবে।” আর দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র শুধু বলেন, “বিষয়টি বালুরঘাটের নেতৃত্বকে দেখতে বলা হয়েছে।”
টানা ১৫ বছর ধরে চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা থেকে আরএসপিকে সরিয়ে এবারে বোর্ড দখল করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের মধ্যে ১১টি দখল করেছে তৃণমূল। ১টি করে আসন পেয়েছে আরএসপি এবং সিপিএম। নির্দল পেয়েছে ১টি আসন। আগামী ১৮ অগস্ট বালুরঘাটে গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর আগে চকভৃগুতে ওই গোষ্ঠী কোন্দল শুরু হয়। দলের অন্দরের খবর, প্রধান পদে বিপ্লব খাঁ গোষ্ঠীর প্রার্থী সন্ধ্যা হালদার এবং উপপ্রধান রঞ্জিত সরকারকে মনোনীত করা হয়। দেবপ্রিয় সমাজদার গোষ্ঠীর অনুগামীরা উপপ্রধান পদে রঞ্জিতবাবুর বদলে চন্দন দাসের নাম প্রস্তাব করেন বলে অভিযোগ।
এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েকদিন ধরে কাজিয়া শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকালে চকভৃগুর কালীবাড়ি মোড়ে আক্রান্ত হন বিপ্লব খাঁ গোষ্ঠীর অবিনাশ সাহা। পাল্টা হামলায় সন্ধ্যায় আক্রান্ত হন দেবপ্রিয়-অনুগামী সঞ্জীব ওরফে তোতন সরকার-সহ তিনজন। রাতে তোতনবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তোতনবাবুর পক্ষে চন্দন দাস থানায় অবিনাশবাবু-সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অবিনাশবাবুর উপর হামলায় তোতনবাবু-সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী মায়া সাহা। |