আর পাঁচজনের মতই সকাল থেকে শুরু হয় ওঁদের জীবনযাত্রা। তারপর যেন সব আলাদা! কেউ ঘরের দাওয়ায় বসে, কেউ উঠোনের এককোণে বসে করে চলেছেন কাজ। পাটি বুননের এই কাজে কে নেই! দশ বছরের বালক থেকে সত্তুর বছরের বৃদ্ধা বাড়ির প্রত্যেকেই কাজ করছেন। পাটি বুনেই রীতিমত স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে কোচবিহারের পানিশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধলুয়াবাড়ি গ্রাম। এলাকায় ঢুকলেই গর্বের সঙ্গে অনেককে বলতে শোনা যায়, এই গ্রামে ভিখিরি নেই, চোর-ডাকাত নেই। শুধু তাই নয়, পাটি বুনেই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছে গ্রাম।
এলাকার বাসিন্দা তথা কোচবিহার জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত সদস্য সুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, ‘গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পাটি শিল্পী সম্প্রদায়ের। পাটি দিয়ে নানা ধরণের জিনিস তাঁরা তৈরি করেন। এই শিল্প যাতে আরও জনপ্রিয় হয় সে চেষ্টা করছি।” কোচবিহার-১ নম্বর ব্লক পাটি শিল্পী সমবায় সমিতি প্রাইভেট লিমিটেডের সম্পাদক গোবিন্দ সরকার বলেন, “আরও সরকারি সুযোগ সুবিধা মিললে এলাকায় পাটি শিল্প আরও জনপ্রিয় হবে।” |
শীতলপাটি বোনার কাজ করছেন বাসিন্দারা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব। |
প্রশাসন সূত্রের খবর, চার দশকের বেশি সময় ধরে ওই গ্রামে পাটি গাছের চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫০ একর জমিতে পাটি গাছের চাষ হয়। এক বিঘা জমিতে ৪০০-৫০০টি পাটি চাষ তৈরির কাঁচামাল পাওয়া যায়। পাটি কয়েক ধরণের হয়। এর মধ্যে শীতল পাটি যেমন রয়েছে, সেই রকমই মোটা, বুকা পাটি রয়েছে। একটি পাটির দর ১৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। গোটা জেলায় ১৩০ একর জমিতে পাটি গাছের চাষ হয়। পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও পাটির বাজার রয়েছে। পাটি দিয়ে জুতো, টুপি, ব্যাগ, চেয়ার, ফুলদানি, বিভিন্ন কভার তৈরি হয়।
ধলুয়াবাড়ির বাসিন্দা মুকুল চন্দ্র দে’র পরিবার পুরোপুরি পাটির উপর নির্ভরশীল স্ত্রী। ছেলেমেয়ে সকলকে নিয়ে তিনি পাটির কাজ করেন। হরিমহন দে তাঁর ছেলে পুত্রবধূ নিয়ে পাটির কাজ করছিলেন। পাটির কাজ করে তাঁরা পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন। গ্রামের বৃদ্ধা ছায়া চৌধুরী, বৃদ্ধ হরি চন্দ বলেন, “বয়স হয়েছে। এখন সেরকম কাজ করতে পারি না। তবুও দিনে কিছু আয় করি।” বিকেলে বাড়িতে পাটির কাজ করছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শঙ্কর দে বলে, “বাড়ির লোকদের সাহায্য করার জন্য কাজ করছি।”
পাটি শিল্পী হিসেবে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন ধলুয়াবাড়ি লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা নারায়ণ চন্দ্র দে। তিনি মারা গিয়েছেন। তাঁর ছাত্রী টগররানি দে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি বলেন, “এই শিল্প গ্রামকে সুন্দর, সমৃদ্ধ করেছে।” |