রাতে তাকে সাপে দংশন করে। স্বামীকে বলেছিলেন হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু হাসপাতালের পরিবর্তে ওঝা, গুনিনের উপরেই ভরসা করেছিলেন স্বামী। কুসংস্কারের বশে স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন ওঝার কাছে ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও কিছুতেই লাভ না হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মারা যান বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদের রামেশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা কাকলি মণ্ডল (৩২)। বসিরহাট হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “সাপে দংশনের পর কুসংস্কারে বিশ্বাস করে ওঝা, গুনিনদের কাছে ঘুরে সময় নষ্ট না করে যদি ওঁরা প্রথমেই হাসপাতালে চলে আসতেন, তাহলে হয়তো মহিলাকে বাঁচানো যেত।” দেহটি ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ১৪ অগস্ট, বুধবার রাতে বারান্দায় মশারির ভিতরে শুয়েছিলেন কাকলিদেবী। মাঝরাতে কোমরে জ্বালা অনুভব করায় স্বামীকে ডাকেন। স্বামী আলো জ্বাললে দেখা যায় মশারির ভিতরে সাপ। সঙ্গে সঙ্গেই স্বামী পিয়ার সর্দার স্ত্রীকে নিমদাঁড়িয়া গ্রামে তাঁর বাপের বাড়ির কাছে এক ওঝার কাছে নিয়ে যান। সেখানে একপ্রস্থ ঝাঁড়ফুকের পর ফের কাকলিদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় শঙ্করপুর গ্রামে আর এক ওঝার কাছে। ইতিমধ্যে অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে কাকলিদেবীর। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বামীকে বলতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ স্ত্রীকে নিয়ে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ছোটেন পিয়ার সর্দার। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন কাকলিদেবীর অবস্থা খারাপ। তাঁর সারা শরীরে বিষ ছড়িয়ে গিয়েছে। তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। কলকাতায় আনার পথেই মারা যান কাকলিদেবী।
স্ত্রীর মৃত্যুতে নিজেকেই দোষারোপ করে পিয়ার সর্দারের আক্ষেপ “ওঝা, গুনিনের উপরে ভরসা না করে যদি প্রথমেই হাসপাতালে স্ত্রীকে আনতাম তা হলে হয়তো বাঁচানো যেত।” পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “আমার মতো এমন ভুল যেন আর কেউ না করেন।” |