|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
সংগ্রামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন |
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘অনুশীলন সমিতি’-র ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯০২-’৪৭ অস্তিত্ব ছিল এই দলের। সূচনায় অরবিন্দ ঘোষের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দীর্ঘ যাত্রাপথের কোনও ধারাবাহিক ইতিহাস ছিল না, তাই ‘অনুশীলন সমিতি শতবর্ষ উদযাপন কমিটি’ সে কাজে ব্রতী হয়। তারই ফসল অনুশীলন সমিতির ইতিহাস (সম্পা: অমলেন্দু দে, পরি: দে’জ, ৪৫০.০০)। এই ইতিহাসের বিভিন্ন পর্ব আলোচনা করেছেন ঈশিতা চট্টোপাধ্যায়, গৌতম বসু, আনন্দ ভট্টাচার্য, পার্থশঙ্খ মজুমদার ও কেকা দত্ত রায়। রাসবিহারী ও সুভাষচন্দ্রের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন অমলেন্দু দে ও গিরিশচন্দ্র মাইতি, তা ছাড়াও দীর্ঘ সম্পাদকীয় নিবন্ধে রয়েছে সামগ্রিক প্রেক্ষিত। ছ’শোর বেশি পাতার এই বই শুধু একটি বিপ্লবী দলের কাহিনি নয়, ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে বহু নতুন তথ্যের সমন্বয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
১৯০৫-এর জানুয়ারি মাসে লন্ডনে প্রকাশিত হয় শ্যামজি কৃষ্ণবর্মা সম্পাদিত পত্রিকা ‘দি ইন্ডিয়ান সোশিয়োলজিস্ট’। বিদেশের মাটিতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ের সেটাই সূচনা। ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি, জাপান, চিন, ইন্দোনেশিয়া-সহ পূর্ব এশিয়ার নানা দেশ, পশ্চিম এশিয়ায় ইরান ও তুরস্কের ভারতীয়রা নানা ভাবে এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। অরুণকুমার বসু দেশবিদেশের নথিপত্র ঘেঁটে লেখেন ইন্ডিয়ান রেভলিউশনারিজ অ্যাব্রড ১৯০৫-১৯২২ (১৯৭১)। চার দশক পর প্রকাশিত হল মূল্যবান বইটির সংশোধিত দ্বিতীয় সংস্করণ (ভারতী ভবন, ৩৮০.০০)।
কানাইলাল দাসের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐতিহাসিক তেভাগা সংগ্রামে নন্দীগ্রাম- সুতাহাটা-মহিষাদল পুস্তিকাটির (১৯৯৬) সঙ্গে লেখকের গবেষণাপত্র নিয়ে বেরিয়েছে তেভাগা সংগ্রামে অখণ্ড মেদিনীপুর (দি সী বুক এজেন্সি, ৮০.০০)। এ-বইতে মেদিনীপুরে স্বাধীনতা-উত্তর কালে কমিউনিস্টদের ঐতিহাসিক ভূমিকার সঙ্গে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষিতকে মিলিয়ে পড়তে পারেন পাঠক।
সুতানুটি বইমেলা কমিটি আয়োজিত বিপ্লবী যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতায় অগ্নিযুগের সাহিত্য (৪০.০০) নিয়ে বলেছিলেন অনুরাধা রায়, কমিটি এ বার সেই বক্তৃতা-পুস্তিকাটি প্রকাশ করল। বিপ্লবীরা যে ধরনের সাহিত্য থেকে প্রাণিত হন, যে সাহিত্যকে প্রেরণা দেন, এবং নিজেরা যে সাহিত্য রচনা করেন এই তিনটি দিকই উঠে এসেছে আলোচনায়।
নির্মলকুমার বসুর গণতন্ত্রের সংকট-এর সাম্প্রতিক সংস্করণটি (সূত্রধর, ২০০.০০) সম্পাদনা করেছেন অভ্র ঘোষ। পূর্ব-সংস্করণের মূল রচনার সঙ্গে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক রচনা যোগ করা হয়েছে। মূলত স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের সংকট নিয়ে আলোচনা এ-বইতে। স্বাদু প্রাণবন্ত নির্মেদ গদ্য ও যুক্তিবাদী বিশ্লেষণী মন লেখকের। রাজনৈতিক বা সামাজিক সমস্যার বিশ্লেষণ নির্মলকুমার করেছেন গাঁধী-দর্শনের নিরিখেই, গাঁধী-প্রদর্শিত পথেই বাস্তব সংকট মোচনের রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে বলেই বিশ্বাস ছিল তাঁর। এই সূত্রে অভ্র ঘোষের মতটি প্রণিধানযোগ্য: “এ-যুগের মার্কসীয় তত্ত্বালোচনার প্রশস্ত ক্ষেত্রে নির্মলকুমারের চিন্তাভাবনাকে খানিকটা সীমিত বলেই মনে হতে পারে।... কিন্তু এও খেয়ালে রাখা দরকার, মার্কস-এঙ্গেলসের দর্শন ও তাত্ত্বিক পটভূমি যতই বিস্তৃত হোক না কেন, প্রায়োগিক ক্ষেত্রে দেশে দেশে আমরা যেসব বাস্তবিক মার্কসবাদী কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছি, তার প্রেক্ষিতে অধ্যাপক বসুর ১৯৪৯ সালের প্রতীতিকে এখনও একান্তই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।’’
বারীন্দ্রকুমার ঘোষের (১৮৮০-১৯৫৯) দ্বীপান্তরের কথা, উল্লাসকর দত্তের (১৮৮৫-১৯৬৫) কারা-জীবনী দুই স্বাধীনতা সংগ্রামীর বই দু’টি একত্রে পুনঃপ্রকাশ করল সাগ্নিক বুকস (২০০.০০)। সংকলক-সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য তাঁর নিবেদন-এ জানিয়েছেন: ‘শাসক-শাসিতের সম্পর্কের যে সমস্ত দিক আমাদের আজও ভাবায়, তারও কিছু সংকেত এই বই থেকে পাঠক পাবেন।’ বারীন্দ্র কবি, তাঁর বইতে যেমন রসবোধের পরিচয়, তেমনই তখনকার আন্দামানের চেহারা, ব্রিটিশদের মনোভাব, কয়েদিদের মনস্তত্ত্ব। আর উল্লাসকর তাঁর দার্শনিক মন নিয়ে নিজের কারাবাসের কাহিনি যে ভাবে শুনিয়েছেন তা পাঠককে নতুন ভাবে ভাবাবে। |
|
|
|
|
|