পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা জায়গায়। বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস বা সিপিএম জোট করে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। আহত এক মহিলা-সহ দু’জনকে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “সন্দেশখালি ১ ব্লকের বয়ারমারি গ্রামে প্রধান গঠনকে কেন্দ্র করে কিছু সমস্যার জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বসিরহাটের ১০টি ব্লকের ৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকটিতে বোর্ডগঠন ছিল। বয়রামারি ১ পঞ্চায়েতে ১১টি আসনই দখল করেছেন তৃণমূল। এ দিন তৃণমূল নেতা মিজানুর রহমানের পক্ষে ৮ জন ও ও আবদুল ওয়াহিদ মোল্লার পক্ষে ৩ জন আলাদা আলাদা ভাবে দু’জনকে প্রধান পদে প্রার্থী করায় গোলমালের সূত্রপাত। মিজানুরবাবুর দাবি, যেহেতু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই তাদের ঠিক করা সালেমা বিবিকেই প্রধান করতে হবে। একই দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রধান পদের দাবিদার নিয়ে হুমকি ও পাল্টা হুমকি শুরু হয়। ফাঁকা গুলি ও বোমা ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। বিডিও ঘটনাস্থলে গেলে তার গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখানো হয়। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে এ দিন প্রধান নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়।
বাদুড়িয়াতেও গন্ধর্বপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে টস করে জেতে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। তা নিয়ে ওই গ্রামে মারামারির ঘটনা ঘটে। তৃণমূলের দাবি, তাদের পাঁচ সমর্থক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতে ভোটে তৃণমূল ও সিপিএম সমান আসন জিতেছিল। এ দিন লটারি হয়। তৃণমূল জেতে। দেগঙ্গার চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম, কংগ্রেস ও নির্দল মিলে বোর্ড গঠন করেছে।
অন্য দিকে, তাঁর ভাইকে পঞ্চায়েত প্রধান করার দাবিতে শুক্রবার বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন কয়েকশো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। গোপালনগর ১ পঞ্চায়েতটি এ বার প্রথম তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। সিপিএমের এলাকা হিসেবে পরিচিত গোপালনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে এ বার প্রথম তৃণমূল পেল ১৬টি আসন। শুক্রবার পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হয়। প্রধান হয়েছেন স্মরজিৎ বৈদ্য, উপপ্রধান হয়েছেন ইলা বিশ্বাস।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে ভরতগড় পঞ্চায়েতে ২১টি আসনের মধ্যে ১৪টি পেয়েছিল তৃণমূল। শুক্রবার প্রধান হিসেবে পুতুল মণ্ডলের নাম ঘোষণা করা হলে তৃণমূলের একাংশ বিরোধিতা করে। মমতাময়ী মণ্ডল নামে আর এক জনকে প্রধান করার দাবি জানান তাঁরা। তৃণমূলের পার্টি অফিসেও কর্মীদের একাংশ হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বাসন্তীর ব্লক সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুতুল মণ্ডলকেই প্রধান করা হয়েছে।”
ভাঙড়ের চন্দনেশ্বর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪টি আসনের মধ্যে ১২টিই পেয়েছে তৃণমূল। শুক্রবার তৃণমূলের ভাঙড় ১ ব্লক সভাপতি জাহাঙ্গির খান চৌধুরী ও যুব তৃণমূল সহ-সভাপতি কাইজার আহমেদ গোষ্ঠীর মধ্যে ভোটাভুটি হয়। তৃণমূলের ৭ জন জাহাঙ্গির গোষ্ঠীর এলাহি খান চৌধুরীকে ভোট দেন। এর পরেই দুই গোষ্ঠীর লোক জন সামনা সামনি গেলে পুলিশকে ধাক্কা মারলে পুলিশ লাঠি চার্জ করে দু’পক্ষকে হঠিয়ে দেয়।
ক্যানিংয়ের তালদি গ্রাম পঞ্চায়েতেও তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে সাত জন জখম হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ভাঙড় ২ ব্লকের গোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতে প্রধান হয়েছেন আরাবুল মণ্ডলের ছেলে হাকিমূল ইসলাম। ভাঙড় ১ ব্লকের সব ক’টিতেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। অধিকাংশ পঞ্চায়েতেই কাইজার গোষ্ঠী জিতেছে। |