নানা রকম...
মোরগ নয়, পৌরুষের লড়াই
পৃথিবীর আদিমতম প্রিয় খেলা মোরগ লড়াই। জুয়ারও সূত্রপাত তাকে ঘিরেই। প্রাচীন এই ‘খেলা’কে কেন্দ্র করে নাট্যমন প্রযোজিত সাত্যকি হালদারের নাটক ‘খরিস’। নাটকের পটভূমি বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জেলার তিলাবনির মাঠ, যেখানে প্রতি শনিবার হয় মোরগের লড়াই। যদুনাথ মাহাতো সেখানকার অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিজেতা। মাঠে নামা সব মোরগই তার মোরগের গুপ্ত ছুরির আঘাতে ফালাফালা হয়ে যায়। মোরগের যত্নআত্তির বিষয়েও সে বেশ চোস্ত। যদুর এই প্রতিপত্তির কারণে গ্রাম-গ্রামান্তরে তার নামডাক। যার তার সঙ্গে আবার লড়েনও না যদুনাথ। আসলে ‘পৌরুষের রাজনীতি’তে বিশ্বাসী যদুনাথের কাছে পুরুষ শব্দের মানে অন্য। ‘চামচা’ গনুয়ার কাছে সে প্রত্যয়ী ঘোষণা করে, ‘চারদিকে শুনো পুরুষ পুরুষ। শালা উ-ইকটা কথা ধর্যা রাখছ্যা। বিছানার মধ্যা পুরুষ? আরে পুরুষ রাজা হইছ্যে যুদ্ধে!’ কিন্তু ‘যুদ্ধবাজ’ যদুর আড়ালে তার পৌরুষ নিয়েই নানা আলোচনা। দু’ দু’টি বিয়ে সত্ত্বেও তার ‘ছেলা-মেয়া বানাইবার খ্যামতা নাই, উঅ কামটা নাকি হবার লয়’ তার। আর সেই অক্ষমতা ঢাকতেই সে মোরগ-যুদ্ধে জয়ী হতে চায়। বার বার। সমাজকে দেখাতে চায় তার ‘পৌরুষ’।
বাঁকুড়ার কথ্যভাষায় বলা এ নাটকে দম আছে। নির্দেশনার কাজেও যথেষ্ট মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী। হাটের দৃশ্যের বুনোট তাক লাগিয়ে দেয় শহুরে দর্শকের মনে। যদুনাথের চরিত্রে সুব্রত দাসের অভিনয় ‘পৌরুষ’-এর অন্য মাত্রা এনে দেয়। তার সঙ্গে যোগ্য অভিনয়-সঙ্গত করেছেন গনুয়ার চরিত্রে সুপর্ণ চক্রবর্তী। ‘চাকু বান্ধার কাম করা’ মণিরামের ভূমিকায় গৌতম হালদার ও ছোটবৌয়ের ভূমিকায় পায়েল দত্ত অপূর্ব। তবে একটি মাত্র সংলাপ ‘কি গো খাবে না’ দিয়ে মহুয়া বিক্রেতা অজিত বসাক তাঁর জাত চিনিয়েছেন। এত মমতা ভরা উচ্চারণে কেউ ‘মদ’ খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে পারে!

পরিপূর্ণ হল গানের গল্প
‘চার অধ্যায়’ রবীন্দ্রনাথের না, ‘চার-অধ্যায়’ কাব্যগীতির চার মহীরুহ অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, হিমাংশু দত্ত ও দিলীপকুমার রায়ের গানকে ঘিরে। পরিবেশনা হল জ্ঞানমঞ্চে। শিল্পী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই ভাবনা, পরিকল্পনা আর রূপায়ণে অনুষ্ঠিত হল এই ‘চার অধ্যায়’। প্রযোজনাটিতে যথেষ্ট পরিশ্রমের ছাপ আছে। অনুষ্ঠান শুরু দ্বিজেন্দ্রলালের গান দিয়ে। যেহেতু ১৫০ বছর, তাই ঋদ্ধি শুরু করলেন ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে প্রকৃতি সতীরে সাজিয়ে দাও’ গান দিয়ে। একে একে এল ‘বধূ এমন বাদলে তুমি কোথা’, ‘বনের চামেলী ফিরে আয়’, ‘পূজা আমার সাঙ্গ হল’, ‘তোমার আঁধার নিশাই আঁধার পোহাবে’, ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ প্রভৃতি গান। ঋদ্ধির অনুষ্ঠানের অভিনবত্ব হল টুকরো কথার মালা আর গানের গল্প দিয়ে পুরো অনুষ্ঠান সাজানো। সঞ্চালনা করলেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে নতুন প্রজন্মের কিশোর-তরুণ-তরুণীরা একের পর এক এই সব গান গাইতে লাগলেন ঋদ্ধির সঙ্গে। সেটাই ছিল এই অনুষ্ঠানের সার্থকতা। সঙ্গীত আয়োজনে পুলক সরকার অনন্য। সৌম্যজ্যোতি ঘোষের বাঁশি শুনে মনে হয় এটাই ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’।

সেই তো আমি চাই
সম্প্রতি রোটারি সদনে এক সান্ধ্য অনুষ্ঠানে কুড়িটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন মনীষা বসু। কুড়িটি গানের মধ্যে কিছু গান বহুশ্রুত এবং কিছু অল্পশ্রুত। উল্লেখযোগ্য নিবেদন ‘ওরে মাঝি’, ‘সেই তো আমি চাই’, ‘তুমি ডাক দিয়েছ’, ‘আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা’ ইত্যাদি। ওই দিন প্রকাশিত অ্যালবামটির অন্যতম আকর্ষণ সুচিত্রা মিত্রের আবৃত্তি এবং সুবীর মিত্রের পাঠ। প্রচ্ছদ পরিকল্পনা থেকে ভাষ্যরচনা, সঙ্গীত নির্বাচন সবই মনীষার ভাবনায় গড়া। সঙ্গীত আয়োজনে ছিলেন দিলীপ রায় এবং দুর্বাদল চট্টোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের গানের স্বরলিপি বজায় রেখেই অভিপ্রেত উচ্চারণে এবং বোধের মেলবন্ধনে তা যে কতটা মননশীল হয়ে উঠতে পারে, সে কথাটি উজ্জ্বল হয়ে উঠল মনীষার গানগুলিতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, মীনাক্ষী সিংহ, শাঁওলী মিত্র, দেবাশিস বসু।

ব্যতিক্রম মঞ্চসজ্জায়
সম্প্রতি বিধাননগরের রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে অনুষ্ঠিত হল ডালিয়া বসুসাহার একক আবৃত্তি ‘অরূপ তোমার বাণী’। শুরু করলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘নিজের কাছে স্বীকারোক্তি’ কবিতাটি দিয়ে। এর পরে একে একে ‘চিরদিনের দাগা’, ‘বিদ্রোহী’ প্রভৃতি এক গুচ্ছ কবিতা শোনালেন। ডালিয়ার কণ্ঠে কবিতাগুলি অন্য মাত্রা পায় তাঁর সাবলীল কণ্ঠ, উচ্চারণের শুদ্ধতার জন্য। উত্তীয় জানার আলো এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহ মনে রাখার মতো। তবে মঞ্চসজ্জায় পৃত্থীশ রাণার আরও যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল।

অনুশীলন প্রয়োজন
রবীন্দ্র সদনে সুরঙ্গমা কলা কেন্দ্র আয়োজন করেছিল আধুনিক ও রবীন্দ্রসঙ্গীত। শুরুতেই সুমিত্রা সেনকে সংবর্ধনা জানানো হয়। পরে সম্মেলক গান ‘ধ্বনিল আহ্বান’-এ অনুশীলনের ছাপ লক্ষ করা যায়। সুছন্দা ঘোষের নিবেদনে ছিল ‘এসো শ্যামল সুন্দর’। সুচিন সিংহ গাইলেন ‘আধেক ঘুমে নয়ন চুমে’। গৌতম বরণ অধিকারী ‘আমার মন যখন’ গানে শ্রোতাদের মন কেড়ে নেন। এ ছাড়াও গান শোনালেন মানসী ভট্টাচার্য, মালবিকা ভট্টাচার্য, মধুছন্দা ঘটক প্রমুখ। ভাল লাগে ঊষসী সেনগুপ্ত, মহুয়া দাস ও তাপস নাগের আবৃত্তি। তবে কারও কারও আরও অনুশীলনের প্রয়োজন।

সবাই মিলে
ঐন্দ্রিলা এ বার সতেরো বছরে পা রাখল। দু’ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হল পার্থ ঘোষ, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবং হৈমন্তী শুক্লকে। নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের গান ও পাঠের পাশাপাশি ছিল নৃত্যানুষ্ঠানও। অনুষ্ঠান শেষ হয় দেবাশিস কুমার বসুর ‘বৃদ্ধাশ্রম’ ও ‘ছুটি’ পাঠ দিয়ে। অনবদ্য পাঠের জন্য শ্রোতাদের প্রশংসা পেলেন শিল্পী।

গানে গানে
সম্প্রতি বিমান মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করলেন নবদিশারী কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। ছাত্রছাত্রীরা তাঁরই প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। এর পর নিতাই মুখোপাধ্যায় গানে এবং গল্পে মাতিয়ে দিলেন সবাইকে। সরোজ ঘোষও শোনালেন অনেক মূল্যবান তথ্য। এই অনুষ্ঠানে নবীন শিল্পীদের গাওয়া গানগুলি মন্দ নয়। অনুষ্ঠান শেষ হয় ইন্দ্রাণী সেনের গানে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.