সিনেমা সমালোচনা...
বাণিজ্য এক্সপ্রেস
দাদুর মিষ্টি তৈরির ব্যবসা। বিরাট বড়লোক। বয়স ৯৯ বছর। সচিন তাঁর প্রিয় ক্রিকেটার। ক্রিকেট ভক্ত দাদু চান তাঁর নাতি, পিতৃমাতৃহীন রাহুলও ক্রিকেট প্লেয়ার হোক। একদিন দাদু টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছেন। পাশে বসে রাহুল এবং দিদিমা। সচিন খেলছে। রান ৯৯। দাদুর টেনশন সচিন সেঞ্চুরি করবে তো! যাঃ! সচিন ৯৯-তে আউট। সেই আঘাতে দাদুর হার্টফেল। মারা গেলেন। রাহুল বলল ৯৯-তে দু’টো উইকেট পড়ল। দর্শকের হাততালি, হাসি। সেই শুরু।
দিদিমা জানাল, দাদুর ইচ্ছে ছিল তাঁর ‘অস্থি’ যেন রামেশ্বরমের সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এ দিকে রাহুল, মানে শাহরুখ খান, তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আগে থেকেই প্রোগ্রাম করে রেখেছেন গাড়ি নিয়ে গোয়া বেড়াতে যাবেন। অতএব?
বন্ধুরা বোঝাল গোয়ার সমুদ্র আর রামেশ্বরমের সমুদ্র এক। অতএব দাদুর ‘অস্থি’ গোয়ার সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলে সেটা ভাসতে ভাসতে রামেশ্বরমের সমুদ্রে পৌঁছে যাবে নিশ্চিত। কিন্তু দিদিমাকে দেখাতে হবে রাহুল দাদুর ‘অস্থি’ নিয়ে রামেশ্বরম যাচ্ছেন। তাই তিনি বন্ধুদের বোঝান তিনি মুম্বই থেকে চেন্নাই এক্সপ্রেসে চড়বেন। তার পর ট্রেন একটু এগোলে প্ল্যাটফর্মের শেষে ট্রেন থেকে নেমে বন্ধুদের সঙ্গে গাড়িতে গোয়া চলে যাবেন।
রাহুল দিদিমার সামনে ট্রেনে চাপল। ট্রেন ছাড়ল। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় ট্রেন ধরার জন্য একটি মেয়ে, দীপিকা পাড়ুকোন দৌড়চ্ছেন। রাহুল হাত বাড়িয়ে তাঁকে টেনে ট্রেনে তুললেন। তার পর দেখেন পরপর চার জন বিশাল দেহের ষণ্ডামার্কা গুন্ডাও দৌড়চ্ছে ট্রেন ধরার জন্য। রাহুল একে একে সবাইকে ট্রেনে তোলেন। এ বার রাহুল নামতে গিয়ে দেখে ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে। রাহুল আর নামতে পারে না। তামিল মেয়ে মীনা, মানে দীপিকা এবং ওই চার গুন্ডার সঙ্গে রাহুল চলল চেন্নাই এক্সপ্রেসে।
চেন্নাই এক্সপ্রেস
শাহরুখ, দীপিকা
মীনা ভাঙা ভাঙা হিন্দি জানে। কিন্তু ওই গুন্ডারা তামিল ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানে না। মীনা ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে, হিন্দি ছবির জনপ্রিয় গান গেয়ে রাহুলকে বোঝালেন তাঁর জীবনের দুরবস্থার কথা। তাঁর বাবা হল তামিলনাড়ুর এক গ্রামের বিরাট ক্ষমতাশালী ‘ডন’। দারুণ প্রতিপত্তি। তার কথায় গ্রামের লোক ওঠে-বসে। বাবা একজনের সঙ্গে মীনার বিয়ে ঠিক করেছে, কিন্তু মীনার তাকে পছন্দ নয়। তাই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়েছেন। ওই গুন্ডারা হল তাঁর বাবার চার ভাই। তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে।
মীনার গানের জবাবে রাহুলও গান গেয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দেন। কিন্তু ওই চার গুন্ডার হাত থেকে মীনাকে রাহুল উদ্ধার করবেন কী করে? অতএব মীনার সঙ্গী হয়ে রাহুল পৌঁছলেন মীনার বাবার রাজত্বে।
এর পর দর্শক মেতে উঠল উল্লাস, উচ্ছ্বাস, হাততালি আর সিটি বাজানোয়। দর্শক উচ্ছ্বসিত শাহরুখের অভিনয়ে। সারা ছবিতে শাহরুখ যে কমেডি করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অসাধারণ টাইমিং, সংলাপের সঙ্গে মুখের অভিব্যক্তি, বিশেষ করে তামিল ভাষা না বুঝতে পেরে দীপিকার বাবার কথায় অহেতুক হাসা, মাথা নাড়া, বোকার মতো তাকানো, অপূর্ব। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যথেষ্ট ভাল অভিনয় করেছেন দীপিকাও।
ছবির টেকনিক্যাল কাজ মুগ্ধ করেছে। ফটোগ্রাফি, ফ্রেমিং, গ্রাফিক্সের কাজের তুলনা হয় না। এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যে যাওয়ার ট্রানজিশন মনে দাগ কাটে। একটা শটের কথা বলি, চলন্ত ট্রেনের জানলায় শাহরুখ-দীপিকার ক্লোজ শট থেকে ক্যামেরা চলে যায় অনেক দূরে, অনেক ওপরে, এবং সেখান থেকে দেখা যায় ট্রেনটা হু হু করে ছুটে চলেছে এক কথায় অপূর্ব। বিশাল-শেখর ছবির মুডের সঙ্গে খাপ খাইয়ে তৈরি করেছেন ছবির গানগুলি। যার ফলে কয়েকটা গান বেশ হিটও করেছে। ‘কাশ্মীর তু ম্যায় কন্যাকুমারী’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর’, এবং ‘লুঙ্গি ডান্স’।
একটা জিনিস বুঝলাম না। তামিলনাড়ুর গ্রাম থেকে পালিয়ে দীপিকা মুম্বই থেকে চেন্নাই এক্সপ্রেসে উঠলেন কেন? ওই ট্রেন তো সেই একই জায়গায় পৌঁছবে, যেখান থেকে তিনি পালিয়েছেন।
ছবিতে তামিল সংলাপ একটু বেশি আছে। যার জন্য দীপিকাকে বারবার সেগুলো হিন্দিতে অনুবাদ করে শাহরুখকে বোঝাতে হচ্ছিল। তাই শাহরুখও দীপিকাকে ‘সাব-টাইটেল’ নামে ডাকছিলেন।
রোহিত শেঠি জানেন ব্যবসায়িক সাফল্যের ককটেল কী ভাবে বানাতে হয়। আগেই তিনি তা প্রমাণ করেছেন ‘গোলমাল’, ‘সিংঘম’ আর ‘বোল বচ্চন’-য়ে।
কিন্তু এত রকম ইতিবাচক দিক থাকা সত্বেও মন কি ভরল?
আসলে তাৎক্ষণিক আনন্দ দিলেও অনেক দিন মনে রাখার মতো ছবিই নয় ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’। ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’ কিংবা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ যে ভাবে আমাদের মনে পড়ে যায়, সে ভাবে স্মৃতিতে ধরা থাকবে না এই ছবি। হল থেকে বেরিয়ে কোনও রেশ থাকে না। শাহরুখের ক্রেজের দাপটেই দর্শকের এত উল্লাস। বাদবাকি পুরোটাই ক্ষণিকের বিনোদন।
সব শেষে আমার অভিজ্ঞতায় একটা কথা বলতে পারি, সাধারণত রহস্য গল্প বা কমেডি ছবি দু’বার দেখতে ইচ্ছে করে না। কারণ রহস্য গল্পে কে খুনি জানার পর দেখার আর ইচ্ছে থাকে না। বা একটা কোনও জোক দ্বিতীয়বার শুনে আর হাসি পায় না। এই কমেডি ছবিও সেই রকম। দর্শক দু’বার দেখবে কি না সন্দেহ থেকে যায়।
এবং দর্শক দু’বার দেখতে না গেলে ছবিটা উঁচুদরের কি না তা প্রমাণ হয় না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.