সতর্ক পুলিশও
বর্ষাকালে দাপট বাড়ছে তস্করের
চোরেদের শ্রাবণ মাস, গৃহস্থের সর্বনাশ।
তক্কে তক্কে থাকে তস্কররা। তাই তটস্থ গৃহস্থেরা। বর্ষাকালে একেই রাস্তাঘাটে লোকজন কম। বৃষ্টির শব্দে চাপা পড়ে যায় অন্য সব আওয়াজও। এর মধ্যেই চুপিসারে হাতের কাজ যে সেরে ফেলতে পারে না, সে আবার তস্কর কি!
নদিয়ার সীমান্তবর্তী তেহট্টের তস্কর শিরোমণি সিধু দাস (নাম পরিবর্তিত) বলে, “বর্ষাকালের জন্য অপেক্ষায় থাকি আমরা। এইসময় লোকে দরজা জানালা বন্ধ করে রাখে। কিন্তু অনেক সময় ভুল করে দাওয়ায় ফেলে রাখে জিনিসপত্র। সে সব সরিয়ে ফেলতে হয় চোখের নিমেষে।” সিধু বলে, “বৃষ্টি চোরেদের ঢেকে রাখে। আমাদের চলাফেরার আওয়াজ পর্যন্ত গৃহস্থ শুনতে পায় না। তাই এই সময়টাই চুরির মরসুম।” কিন্তু মুশকিল একটাই। শীতকালের মতো বর্ষাতেও গৃহস্থরা দরজা জানালা বন্ধ করে রাখে। কিন্তু পোড়খাওয়া আর এক তস্কর নিতাই সাধু ( নাম পরিবর্তিত) বলে, “তবুও শীতের থেকে বর্ষায় চুরি করার সুবিধা বেশি। লোকের উঠোন থেকে বালতি, কলসি, হাঁড়ি থেকে শুরু করে বাসনপত্র, ভিজে জামাকাপড় পর্যন্ত সবই সরিয়ে ফেলা যায়।”
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “বর্ষাকালে ছোটখাট চুরির ঘটনা কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। শীতেও চুরি হয়। সেই কারণে এইসময় পুলিশি টহলদারিও বাড়ানো হয়।” তা না হয় হল। কিন্তু মুশকিল হল, এতই ছোটখাট চুরি হয় যে, অনেক সময়ে গৃহস্থ আর সে কথা থানা পর্যন্ত গিয়ে বলে আসে না। অনেক চুরিই তাই পুলিশের খাতায় নথিভুক্ত হয় না। সেই রকমই গত একমাসে তেহট্ট মহকুমা জুড়ে প্রায় কুড়িটি ছোটখাট চুরি হয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এবং সব ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগও হয়নি। এক গৃহস্থের কথায়, “ক্ষতিটা ক্ষতিই। কিন্তু সামান্য দু’টি কাপড় বা কলসি চুরির কথা বলতে থানাপুলিশ করতে কেউ চান না।” নদিয়া পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “চোরেরাও সেই কথাটা জানে। মানুষের আরও সচেতন হওয়া উচিত।”
মানুষও সে কথা বোঝেন। কিন্তু পরিস্থিতি প্রতি বর্ষায় একই রকম থাকে। ঝমঝম করে বৃষ্টি নামতেই বাইরে সাইকেল দাঁড় করিয়ে রেখে চায়ের দোকানে ঢুকে পড়েছিলেন তেহট্টের শ্যামল মণ্ডল। বৃষ্টিটা ধরে আসতে বাইরে এসে দেখেন সাইকেল উধাও। শ্যামলবাবু বলেন, “সব মিলিয়ে মিনিট দশেক সাইকেলটা চোখের আড়াল হয়েছিল। আর বৃষ্টিটাও যেন দৃষ্টির আড়াল হয়ে দাঁড়াল। তার মধ্যেই চোরেরা তাদের কাজ করে ফেলেছে।”
দিন চারেক আগে রামনগরের জিতেন প্রামাণিকের বাড়িতে চুরি হয়েছে। সকালে উঠে তিনি দেখেন, বাড়ির পূর্বদিকের পাটকাঠির বেড়া ভাঙা বাড়ির দাওয়া থেকে উধাও এক বস্তা তিল, এমনকী দড়িতে মেলে রাখা ভিজে জামাকাপড়ও! জিতেনবাবু বলছেন, “চুরির বহরটা একবার দেখেছেন। গরুগুলো যেমন ছিল তেমনই থাকল। ওদের কিনা দরকার পড়ল তিল, জামাকাপড়।’’
দিনকয়েক আগে করিমপুরের এক চা বিক্রেতা সামান্য দূরে একটি দোকানে চা দিতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন চায়ের কেটলিটাই নেই। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন কেউ বোধহয় মজা করছে। পরে তিনি বুঝতে পারেন এটা কোনও তস্করেরই কাজ।
বছর কুড়ি আগে তস্করবৃত্তি থেকে ‘অবসর নিয়েছেন’ সীমান্তের দুই যুবক। এখন দু’জনেই প্রৌঢ়। একজন নিঃশব্দে সিঁধ কাটতে পারতেন। অন্যজন লিকলিকে শরীর নিয়ে অনায়াসে গলে যেতে পারতেন সেই গর্ত দিয়ে। সীমান্তের ওই দুই সিঁধেলের কথায়, “সিঁধ কেটে চুরি এখন তো আর নেই বললেই চলে। অথচ বছর কুড়ি বাইশ আগে পর্যন্ত গাঁ গঞ্জে চুরি মানেই ঘরের পিছনে সিঁধ কেটেই ঢুকতে হতো। তখন নিজের এলাকাতে তো বটেই, ডাক আসত বাইরে থেকে এমনকী বাংলাদেশ থেকেও। তখনও এদিকে তারকাঁটার বেড়া হয়নি। দাপটের সঙ্গে কাজ করতাম। এখন আর সেই দিন নেই।” নদিয়া জেলা পুলিশের ওই আধিকারিক যেমন বলছেন,‘‘ সিঁধ কেটে চুরি এখন আর হয় না। তাই বলে চুরি কিন্তু বন্ধ হয়নি। তার রকম বদলেছে। ইদানীং আমরা লক্ষ করছি, বেশিরভাগ ছিঁচকে চোর মানেই মাদকাসক্ত। মাদক কেনার টাকার জন্য সাইকেল, মোবাইল এমনকী বাড়ির ছাদে শুকোতে দেওয়া ভিজে শাড়ি পর্যন্ত চুরি করার নজিরও রয়েছে।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.